|

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায়: প্রাক-প্রকৃতি ধ্বংস করে যে উন্নয়ন হয় তা টেকসই হয় না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা ভয়ানক পরিস্থিতি নিয়ে আসে। এজন্য বর্তমানে জাতিসংঘসহ বৈশ্বিক সংখ্যাগুলো প্রকৃতিকে নষ্ট না করে উন্নয়ন করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।


টেকসই উন্নয়ন

উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি না বাঁধার কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রেখে পরিকল্পিত উন্নয়নই হলো টেকসই উন্নয়ন বা Sustainable Development, জাতিসংঘ কর্তৃক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যগুলো বিশ্বব্যাপী টেকসই অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিকাশের দিকে কাজ করার চেষ্টা করে।

টেকসই উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য

Sustainable Development বা টেকসই উন্নয়নের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এগুলো হলো:
১. পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করা।
২. প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশের গুণগত মান বজায় রেখে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চেষ্টা করা।
৩. প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্য

Sustainable Development বা টেকসই উন্নয়ন বেশ কিছু উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে চলে। এসব উদ্দেশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা
২. জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা
৩. সম্পদের পুনঃব্যবহার করা
৪. মানুষকে বিশ্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বোঝানো
৫. মানুষের গুণগত মানের বিকাশ করা ৬. স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যক করা।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. টেকসই উন্নয়ন কী?
উত্তর: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি বা বাঁধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায় এমন ধরনের পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।

প্রশ্ন-২. টেকসই ব্যবস্থাপনা কী?
উত্তর: যে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পদসমূহ সুষ্ঠু ও পরিমিতভাবে ব্যবহার করে তা টিকিয়ে রাখা যায়।

প্রশ্ন-৩. টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য কী?
উত্তর: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একইমানের জীবন নিশ্চিত করা এবং জীবন ও জীবিকা বিপন্ন না করে পরিবেশ ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।


প্রাকৃতিক সম্পদ ও এসব সম্পদের উপর সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব

প্রাকৃতিক সম্পদ

প্রাকৃতিক সম্পদ হলো এমন সম্পদ যা সরাসরি প্রকৃতি থেকে আহরণ করা হয় এবং সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে মানব ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। প্রাকৃতিক সম্পদগুলো আমাদের প্রকৃতিতে থাকতে পারে আবার অভয়ারণ্যে সুরক্ষিতও থাকতে পারে। যেমন— মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, প্রাণিকূল ইত্যাদি। প্রাকৃতিক সম্পদ আছে বলেই প্রকৃতিতে জীবের বিকাশ এখনো সচল রয়েছে।

আমাদের জীবনে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার

সরাসরি প্রকৃতি থেকে আহরিত কিংবা সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী যে সম্পদগুলো রয়েছে তাই হলো প্রাকৃতিক সম্পদ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আমাদের আহার থেকে শুরু করে বাসস্থানসহ সকল জায়গায় প্রাকৃতিক সম্পদের উপস্থিতি বিদ্যমান। যেমন- মাটি, বায়ু, গ্যাস, কয়লা এগুলো প্রাকৃতিক সম্পদ যা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয়। তাছাড়া আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য উপাদান পানিও একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য পূর্বশর্ত হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে পরিবর্তন ও এর প্রভাব

মানবসভ্যতা শুরুর আদিলগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের চাহিদা বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সভ্যতার শুরুতে জনসংখ্যা কম থাকায় পানি, গ্যাস কিংবা কয়লার ব্যবহার ছিল সীমিত। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক পরিবর্তন এবং কলকারখানা, যানবাহন, দালানকোঠা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গ্যান, কয়লা ইত্যাদি জ্বালানি সম্পদের ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ এটি এমন এক সম্পদ যা একবার ব্যবহার করলে তা পূরণ হতে কয়েক মিলিয়ন বছর লেগে যায়। তাই প্রাকৃতিক সম্পদের লাগামহীন ব্যবহারের ফলে এই সম্পদ যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি মানবসভ্যতাও হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে আরব, বাংলাদেশ ও চীন অন্যতম। প্রাকৃতিক সম্পদের অধিক ও অপরিমিত ব্যবহার এসব সম্পদকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. প্রাকৃতিক সম্পদ কী?
উত্তর: মানুষ তার ব্যবহার উপযোগী যে সম্পদ বিনামূল্যে প্রকৃতি থেকে পায়।

প্রশ্ন-২. দুটি প্রাকৃতিক সম্পদের নাম লেখো।
উত্তর: মাটি ও পানি।

প্রশ্ন-৩. কোনো প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়িত্ব বাড়ে কীভাবে?
উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে।

প্রশ্ন-৪. সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য পূর্বশর্ত কী?
উত্তর: প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।

প্রশ্ন-৫. সামাজিক পরিবর্তন কী?
উত্তর: সমাজের সার্বিক ব্যবস্থার পরিবর্তন।

প্রশ্ন-৬. বিশ্বের কোন দেশে পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে?
উত্তর: সৌদি আরবে।


ব-দ্বীপ

ব-দ্বীপ একটি প্রাকৃতিক ভূমি যা নদী মোহনায় দীর্ঘদিনের জমাট পলি অথবা নদীবাহিত মাটির সৃষ্ট দ্বীপ। একটি নদী বয়ে গিয়ে যখন কোনো জলাধার, হ্রদ, সাগর কিংবা মহাসাগরে পড়ে তখন নদীমুখে ব-দ্বীপ তৈরি হয়। ব-দ্বীপের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে— স্রোত-নিয়ন্ত্রিত ব-দ্বীপ, জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রিত ব-দ্বীপ, গিলার্ট ব-দ্বীপ, ভূমধ্য ব-দ্বীপ ইত্যাদি। ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গা নদীর ব-দ্বীপ হলো সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ।

ব্লু-ইকোনমি

Blue economy বা সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। এটি অর্থনীতির এমন একটি বিষয় যেখানে একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হ্য। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি ব্লু-ইকোনমির অন্তর্গত। সুনীল অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজির সৃষ্টি করা এবং সর্বোপরি পরিবেশের সায়-বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশের সমুদ্রজয়

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে একটি আইন প্রণয়ন করেন যা ‘The Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974’ নামে পরিচিত। এ আইনে বাংলাদেশের উপকূলের নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত টেরিটোরিয়াল ওয়াটার ও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাবি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের এ দাবির বিরুদ্ধে ভারত ও মায়ানমার আপত্তি জানায়।

ফলে দীর্ঘদিন দুই দেশের সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে এ বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ফলে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ International Tribunal for the Law of the Sea (ITLOS)-এর রায়ে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সমুদ্র সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এরপর ২০১৪ সালের ৭ জুলাই Arbitral Tribunal এর রায়ে ভারতের সাথেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা হয়।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. ভূগর্ভস্থ পানি কী?
উত্তর: ভূতুকের নিচের মুক্তিকারস্ত্রে এবং শিল্পান্তরের ফাটলে অবস্থিত পানি।

প্রশ্ন-২. প্রাকৃতিক গ্যাস কী ধরনের সম্পদ?
উত্তর: অনবায়নযোগ্য।

প্রশ্ন-৩. কয়েকটি গনিজ সম্পদের নাম লেখো।
উত্তর: সোনা, রূপা, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি।

প্রশ্ন-৪, কয়েকটি জীবাশ্ম জ্বালানির নাম লেখো।
উত্তর: কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, খনিজ তেল ইত্যাদি।

প্রশ্ন-৫. ক্যালা কী ধরনের সম্পদ?
উত্তর: খনিজ সম্পদ।

প্রশ্ন-৬. সোনা-রূপা কী ধরনের সম্পদ?
উত্তর: খনিজ সম্পদ।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। শিখন অভিজ্ঞতার আলোকে এটি বাস্তবায়নে আমাদের করণীয় বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: সম্পদের সুষ্ঠু ও পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কেননা পরিমিত ব্যবহার সম্পদের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে বিভিন্ন অনবায়নযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন: প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল, ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানি ব্যবহারে অত্যধিক সচেতন হতে হবে।

অনবায়নযাগ্য সম্পদের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য সম্পদ, যেমন: সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বৃষ্টির পানি প্রভৃতির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। এতে করে খনিজ সম্পদগুলোর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করতে পারবে। এভাবে সমাজের যেকোনো ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মিটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে পারলে টেকসই উন্নয়ন সফল হবে।

প্রশ্ন-২. বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এক অপার সম্ভাবনার উৎস। পাঠ্যবইয়ের শিখন অভিজ্ঞতার আলোকে এ সমুদ্রজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির দিগন্ত উন্মোচনের ঘটনাপ্রবাহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরের অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে স্বাধীনতার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে “Temtorial Waters And Maritime Zones Act-১৯৭৪” প্রণয়ন করেন।

সে আইনে কিন্তু বাংলাদেশের এ দাবির বিরুদ্ধে ভারত ও মিয়ানমার আপত্তি জানায়। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশসমূহের মধ্যকার সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ফলে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ International Tribunal for the Law of the Sea’-এর রায়ে মিয়ানমারের সাথে এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই Arbitral Tribunal এর রায়ে ভারতের সাথেও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা হয়। এ বিশাল সমুদ্র জয়ের ফলে বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

প্রশ্ন-৩. ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে চাই। এ লক্ষ্যে টেকসই শহর ও সমাজ নির্মাণের বিকল্প নেই। শিখন অভিজ্ঞতার আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: যে শহর ও সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে তাকে টেকসই শহর ও সমাজ বলে।

টেকসই শত্রু ও সমাজ ব্যবস্থায় একদিকে যেমন বড় বড় দালান কোঠা, প্রয়োজনীয় শিল্পকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান আছে, অন্যদিকে সুপরিকল্পিত বনভূমি, সুপেয় পানি, পরিশুদ্ধ জলাশয়, উন্মুক্ত খেলার মাঠ, পার্ক, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও থাকে। মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি যাতে প্রকৃতির ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ রেখেই টেকসই শহর ও সমাজ গড়ে ওঠে।

প্রশ্ন-৪. বর্তমান সময়ে সমুদ্র অপার সম্ভাবনার উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই উৎসকে ঘিরে অর্থনীতির কোন শাখা গড়ে উঠেছে? বর্ণনা করো।
উত্তর: সমুদ্রের অপার সম্ভাবনার উৎসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে Blue বা সুনীল অর্থনীতি। সাধারণভাবে এটি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। এটি অর্থনীতির এমন একটি বিষয় যেখানে একটি দেশের সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি ব্লু-ইকোনমির অন্তর্গত। সুনীল অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা, দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা, সামাজিক পুঁজির সৃষ্টি করা এবং সর্বোপরি পরিবেশের সঞ্জয়- বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করা।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-৫. সিফাত একটি বই পড়ে জানতে পারে, মিয়ানমার এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। কবে হয়েছে? কোন আদালতের মাধ্যমে এসব মীমাংসা সম্পন্ন হয়? বিরোধসমূহ নিষ্পত্তির ফলাফল দুটি বাক্যে লেখো।
উত্তর: ২০১২ সালের ১৪ মার্চ মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ভারতের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসিত হয়। রায়সমূহের ফলে ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ সামুদ্রিক মৎস আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার, বাণিজ্য ও জ্বালানি প্রাপ্তির সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রশ্ন-৬. খুশি আপা ক্লাসে বললেন, জীবাশ্ম জ্বালানির সুষ্ঠু ও পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। বিষয়টির ধারণা দাও। তিনটি জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ দাও। টেকসই উন্নয়ন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: মাটির নিচে উচ্চ চাপ ও তাপে হাজার হাজার বছর ধরে বায়ুর অনুপস্থিতিতে পচন প্রক্রিয়ায় মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে যে জ্বালানি উৎপন্ন হয় তাকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে। তিনটি জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ হলো– কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি বা বাঁধার কারণ না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর জন্য পরিকল্পিত উন্নয়নই হলো টেকসই উন্নয়ন।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

প্রশ্ন-৭. পৃথিবীজুড়ে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের পানির উদ্বৃত্ত আছে এরকম পাঁচটি দেশের নাম লেখো।
উত্তর: উদ্বৃত্ত সুপেয় পানি আছে এরকম পাঁচটি দেশ হলো: অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, নরওয়ে, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড।

প্রশ্ন-৮. বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। কীভাবে এ ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়?
উত্তর: নদী প্রবাহ সাগরে পতিত হওয়ার সময় নদী মোহনায় পানি স্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন পদার্থ, যেমন— বালি, পলিমাটি, কদম ইত্যাদি জমে ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন-৯. আমিনাদের বাড়ির কাছের নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: বাঁধ বলতে এমন একটি প্রতিবন্ধক দেওয়ালকে বোঝায় যেটি কোনো স্থানে কৃত্রিম উপায়ে পানি ধরে রাখতে বা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন-১০. রিয়া চাকমা পাহাড়ি এলাকায় বাস করে। এ এলাকায় বৃষ্টি কম হলে বা শুষ্ক মৌসুমে পানির কষ্ট হয় কেন?
উত্তর: বাংলাদেশের পাাহাড়ি এলাকায় পানির স্তর মাটির অনেক নিচে থাকে। যার কারণে বৃষ্টি কম হলে বা শুষ্ক মৌসুমে ওখানে পানির অনেক কষ্ট হয়।

প্রশ্ন-১১. সুজিত সাতক্ষীরার বাসিন্দা। তার অঞ্চলে নলকূপ দিয়ে লবণাক্ত পানি আসে কেন?
উত্তর: সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাটির নিচের পানির সাথে কাছাকাছি সমুদ্রের পানি মেশার কারণে নলকূপের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন-১২. আমাদের দেশে নানা ধরনের খনিজ সম্পদ আছে। সম্পদটি সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: এক বা একাধিক উপাদান গঠিত হয়ে বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে যেসব রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাত উপকরণ শিলাস্তরে সঞ্চিত থাকে তাকেই খনিজ সম্পদ বলে।

প্রশ্ন-১৩. কয়লা বহুল পরিচিত একটি জীবাশ্ম জ্বালানি। এই জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে এক প্রকার জ্বালানিকে বোঝায় যা মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী মাটির নিচে উচ্চ তাপ ও চাপে হাজার বছর ধরে বায়ুর অনুপস্থিতিতে পচন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়।

প্রশ্ন-১৪. ‘জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর – তুমি কি এ উক্তির সাথে একমত? যুক্তিসহ বর্ণনা করো।
উত্তর: হ্যাঁ, আমি মনে করি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কয়লা, গ্যাস, খনিজ তেল প্রভৃতি হলো জীবাশ্ম জ্বালানি। বিভিন্ন শিল্পখাতের জ্বালানি হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা হয়। জীবাশ্মজাত জ্বালানির ব্যবহার পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কারণ এগুলো পোড়ালে অতিমাত্রায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এ গ্যাস নির্গমনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে। সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

প্রশ্ন-১৫. বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে নানা রকমের খনিজ সম্পদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এ সম্পর্কে একটি অনুচ্ছেদ লেখো।
উত্তর: বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি জেলাসমূহের মাটির নিচে গ্যাস, কয়লা, তেল, চুনাপাথরসহ নানা ধরনের মূল্যবান খনিজ পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ আহরণ করে দেশের বিভিন্ন চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের তলদেশেও গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে।

সেখানে আরও অনেক ধরনের প্রাণিজ এবং খনিজ পদার্থ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদসমূহের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, ক্যালা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, কাঁচবালি, চীনামাটি, প্রভৃতি অন্যতম। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের প্রায় সবগুলোই কোনো না কোনো শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। এ খনিজ সম্পদগুলো যত ভালোভাবে আহরণ এবং ব্যবহার করা যাবে ততো বেশি শিল্পায়ন হবে। আর শিল্পায়ন বেশি হওয়া মানেই অনেক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হওয়া। এজন্য বলা হয়, খনিজ সম্পদের সাথে মানুষের জীবিকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রয়োগমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১৬. করিম মিয়া একজন কৃষক। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তিনি তার জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেন। বর্তমানে সরকার ভর্তুর্কিসহ কৃষকদের ঔষধ সরবরাহ করায় করিম মিয়াদের মতো কৃষকদের কাছে তা আরও সহজলভ্য হয়েছে। ফলে একদিকে ফসলের উৎপাদন বাড়লেও অন্যদিকে এর বিপরীত ক্রিয়া আমাদের পরিবেশকে বিপর্যস্ত করছে। তুমি কি মনে কর করিম মিয়ার কর্মকাণ্ড পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকে বর্ণিত করিম মিয়ার কর্মকাণ্ড পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। মানুষের বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিভিন্নভাবে পরিবেশ বিপর্যন্ত হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত জনসংখ্যা। বিশাল জনসংখ্যার খাদ্যের যোগান দিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতেই মানুষ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে। আর এগুলো মাটি, বায়ু ও পানি দূষিত করে পরিবেশকে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। উদ্দীপকের করিমের কর্মকাণ্ড অনুরূপ প্রভাব ফেলে।

উদ্দীপকের করিম মিয়া ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে তার জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। এর ফলে পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও মাটি, বায়ু ও পানিকে নানাভাবে দূষিত করে। দীর্ঘদিন এসব দূষণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সারা পৃথিবীর সচেতন মানুষকে শঙ্কিত করে। কেননা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানুষ, সমাজ, কৃষি উৎপাদন স্থলগ ও জলজ প্রাণীকুলকে ক্রমাগত মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলে দিবে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের করিম মিয়ার কর্মকাণ্ড পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।


আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


আশাকরি “৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৭ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।