|

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় – সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় (সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা): শেখ হাসিনা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। বিশ্বশান্তির অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করতে তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। ২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি তিনি চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘বিপন্ন গণতন্ত্র, লাঞ্ছিত মানবতা’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘সাদা কালো’ ইত্যাদি। এই শিখন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকার উপর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের প্রভাব, অতীত ও বর্তমানে নারীর অবস্থান ও ভূমিকা, প্রাচীন মিশরীয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের অবস্থান ও ভূমিকা এবং ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমলে বাংলার রাজনৈতিক পালাবদল সম্পর্কে জানতে পারব।


সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা

অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকার ধারণা: প্রত্যেক ব্যক্তির অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা পালনের কিছু সামাজিক রীতি-নীতি আছে, আছে দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন— বাবা-মায়ের ভূমিকা হলো সন্তানদের স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করা, লেখাপড়া শেখানো এবং সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

আবার সন্তানদের ভূমিকা হলো বাবা-মাকে সম্মান করা, নিয়মিতভাবে পড়ালেখা করা, ছোট ভাই-বোনদের প্রতি খেয়াল রাখা ইত্যাদি। মা-বাবার পক্ষে যেমন সন্তানের ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়, তেমনি সন্তানদের পক্ষেও বাবা-মায়ের ভূমিকা পালন করা অসম্ভব। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা পালন করতে হয়, যা সুশৃঙ্খল সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক।

ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক অবস্থান ও ভূমিকা: মানুষের সঙ্গে মানুষের কথাবার্তা, কাজ, ডাবের বিনিময় ইত্যাদি যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়ার ফলে প্রতিষ্ঠান (পরিবার, বিদ্যালয়, আমলাতন্ত্র, ধর্ম, রাজনৈতিক দল) এবং গোষ্ঠী (খেলার সাথি, ফুটবল টিম, প্রতিবেশী) তৈরি হয়। এই প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীতে ব্যক্তি অবস্থান করে ও ভূমিকা পালন করে। অবস্থান অনুযায়ী ব্যক্তির যে অধিকার ও দায়িত্ব থাকে তাকে ভূমিকা বলে।

অর্থাৎ একজন মানুষের অবস্থান অনুযায়ী সমাজ তার কাছে যে আচরণ প্রত্যাশা করে সেটিই তার ভূমিকা। তবে একই সমাজের সকল মানুষের অবস্থান ও ভূমিকা এক নয়। যেমন- মা যেটা করেন সেটা বাবা করেন না। একজন জনপ্রতিনিধি যা করেন, দোকানদার তা করেন না। একজন অভিনেতা যা করতে পারেন, মসজিদের ইমাম সাহেব তা করতে পারেন না। সমাজের মানুষও সেটা মেনে নেবে না। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক অবস্থার কারণে ব্যক্তির ভূমিকাও ভিন্ন ভিন্ন হয়।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. সামাজিক প্রেক্ষাপট কাকে বলে?
উত্তর: যে পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বা যোগাযোগ করি, তাকে সামাজিক প্রেক্ষাপট বলে।

প্রশ্ন-২. ব্যক্তির অবস্থান কত প্রকার?
উত্তর: দুই প্রকার।

প্রশ্ন-৩. অর্জিত অবস্থান কাকে বলে?
উত্তর: ব্যক্তি যা সক্ষমতা ও চেষ্টা দ্বারা আয়ত্ত করে।

প্রশ্ন-৪. অর্পিত অবস্থান কাকে বলে?
উত্তর: যা ব্যক্তি জন্মসূত্রে বা প্রাকৃতিকভাবে লাভ করে।

প্রশ্ন-৫. ভূমিকা কী?
উত্তর: একজন মানুষের অবস্থান অনুযায়ী সমাজ তার কাছে যে আচরণ প্রত্যাশা করে সেটিই তার ভূমিকা।


বিভিন্ন সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা

বিভিন্ন সমাজে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকার ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- প্রাচীন মিশরের সমাজে কাজ অনুযায়ী মানুষে মানুষে শ্রেণিবিভাগ ছিল। সে সমাজে ক্রীতদাস ও গৃহকর্মীর অবস্থান ছিল সবচেয়ে নিচে। সম্মান আর সম্পদও ছিল সবচেয়ে কম। তাদের ভূমিকা ছিল সেবকের অর্থাৎ অন্যের সেবা করাই ছিল তাদের কাজ। আর প্রাচীন মিশরীয় সমাজে সবার উপরে অবস্থান ও সম্মান ছিল রাজার। তার সম্পদও ছিল সবচেয়ে বেশি। তার ভূমিকা ছিল শাসকের। আমাদের সমাজেও বর্তমানে নানা রকম মানুষ আছে। যেমন- গৃহকর্মী, রিকশাওয়ালা, ইমাম, ডাক্তার, সাহিত্যিক, জনপ্রতিনিধি, খেলোয়াড় ইত্যাদি। তবে এ দুটি সমাজ ব্যবস্থায় বিদ্যমান ব্যক্তিদের অবস্থান ও ভূমিকা এক নয়।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. প্রাচীন মিশরে কীসের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে শ্রেণিবিভাগ ছিল?
উত্তর: কাজের ভিত্তিতে।

প্রশ্ন-২. প্রাচীন মিশরীয় সমাজে কাদের অবস্থান সবচেয়ে নিচে ছিল?
উত্তর: ক্রীতদাস ও গৃহকর্মীর।

প্রশ্ন-৩. প্রাচীন মিশরীয় সমাজে কাদের সম্মান ও সম্পদ সবচেয়ে কম ছিল?
উত্তর: ক্রীতদাস ও গৃহকর্মীর।

প্রশ্ন-৪. প্রাচীন মিশরীয় সমাজে কারা সেবকের ভূমিকা পালন করতো?
উত্তর: ক্রীতদাস ও গৃহকর্মীরা।

প্রশ্ন-৫. প্রাচীন মিশরীয় সমাজে কার অবস্থান ও সম্মান সবচেয়ে উপরে ছিল?
উত্তর: রাজার অবস্থান ও সম্মান সবচেয়ে উপরে ছিল।

প্রশ্ন-৬. প্রাচীন মিশরীয় সমাজে কে শাসকের ভূমিকা পালন করতেন?
উত্তর: রাজা।


সামাজিক প্রেক্ষাপটের বদল হলে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকা বদলায়

সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকায়ও পরিবর্তন আসে। প্রাচীনকালের সামাজিক প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট এক রকম নয়। বর্তমানে মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। ফলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলাসহ সকল ক্ষেত্রে নারীরাও অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকাও আগের তুলনায় অনেক বদলে গেছে।

সরকার পরিচালনায় নারী: বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নারীরা যোগ্যতার সাথে ভূমিকা রাখছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন মহীয়সী নারী। তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের করে এনে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি। বাংলাদেশের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও একজন নারী। এছাড়াও বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক ও আইনজীবী।

সমাজের বিভিন্ন পরিসরে নারীর অগ্রযাত্রা: সমাজের বিভিন্ন পরিসরে নারীরা এগিয়ে চলেছে। ২০১২ সালের ১৯ শে মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন নিশাত মজুমদার। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নারী ট্রেনচালক্ হিসেবেও কাজ করছেন। নারীরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের চালিকাশক্তি হয়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই আগের তুলনায় অনেক অগ্রসর হয়েছেন।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?
উত্তর: শেখ হাসিনা।

প্রশ্ন-২. কার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের হয়ে এসে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে?
উত্তর: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

প্রশ্ন-৩. বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পিকার কে?
উত্তর: ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রশ্ন-৪. বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কে?
উত্তর: ডা. দীপু মনি।

প্রশ্ন-৫. বাংলাদেশী নারী হিসেবে কে প্রথম এডারেস্ট জয় করেন?
উত্তর: নিশাত মজুমদার।

প্রশ্ন-৬. নিশাত মজুমদার কত সালে এভারেস্ট জয় করেন?
উত্তর: ২০১২ সালের ১৯ শে মে।


রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকার ওপর প্রভাব ফেলে

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষের শাসক হয়ে ওঠে। কিন্তু এই কোম্পানি ছিল কেবল একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। শাসন কাজের অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। তাই তারা দ্বৈত শাসনের মাধ্যমে দেশ চালাতে থাকে। দ্বৈত শাসনের ফলে এদেশের জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যশস্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এদেশে ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ (বাংলা ১১৭৬ সালে) নামে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে দ্বৈত শাসনের অবসান হলেও ১৭৯৩ সালে শুরু হয় ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ নামে জমিদার শ্রেণির শোষণ। ১৭৯৯ সালে জমিদারদের সন্তুষ্ট করার জন্য ব্রিটিশ ইন্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর আদায়ের জন্য প্রজাদের ওপর জমিদারদের অত্যাচারের সীমাহীন স্বাধীনতা প্রদান করে। এর ফলে জমিদাররা ইচ্ছামতো প্রজাদের ওপর কর আরোপ, বিচারের নামে নির্যাতন, সম্পদ-গবাদি পশু বাজেয়াপ্ত করা, এমনকি কোনো কৃষক কর না দিয়ে পালিয়ে গেলে তার গ্রামের সবাইকে জরিমানা করার মতো অন্যায়-অত্যাচার শুরু হয়। চরমভাবে শোষিত প্রজারা জমিদারদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিদ্রোহ করে যা ‘কৃষক বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

পরবর্তীতে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ কোম্পানির দেশ শাসনের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতা সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের হাতে চলে যায়। ১৮৮৫ সালে আসে ‘বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন’। এই আইনে একদিকে জমিদারদের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা ছাঁটাই হয়। অন্যদিকে, প্রজাদের দাবি-দাওয়া অনেকাংশে মেনে নিয়ে প্রজা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিকার ও দায়িত্বের কথা স্পষ্ট করে বলা হয়। এরপর এ আইনের আরও সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অবসান ঘটে। প্রজারা এবার জমির মালিক হিসেবে অভিহিত হয় এবং তারা সরাসরি সরকারকে খাজনা দিতে শুরু করে।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. কত সালে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
উত্তর: ১৭৫৭ সালে।

প্রশ্ন-২. পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে কোন কোম্পানি বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে?
উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।

প্রশ্ন-৩, কত সালে, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয়?
উত্তর: বাংলা ১১৭৬ সালে (ইংরেজি ১৭৭০ সাল)।

প্রশ্ন-৪. কত সালে ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ চালু হয়?
উত্তর: ১৭৯৩ সালে।

প্রশ্ন-৫. সিপাহি বিদ্রোহ কত সালে সংঘটিত হয়?
উত্তর: ১৮৫৭ সালে।

প্রশ্ন-৬. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অবসান ঘটে কত সালে?
উত্তর: ১৯৫০ সালে।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বর্তমানে এ দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তাঁর সম্পর্কে তুমি কী জানো? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৯ সালের ৭ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি একজন মহীয়সী নারী। তিনি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবেও বিবেচিত। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের করে এনে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি জনকল্যাণমূলক ও মানবতাবাদী কাজের জন্য বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

প্রশ্ন-২. ১৩০ বছর আগেও আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীর অবস্থান ছিল শুধু অন্তঃপুরে, সেখানে আজ বাংলাদেশের সরকার পরিচালনাতেও নারীরা যোগ্যতার সাথে ভূমিকা রাখছে। সমাজের বিভিন্ন পরিসরে তাদের এ অগ্রযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: সমাজের বিভিন্ন পরিসরে নারীরা এগিয়ে আছে। তাদের ভূমিকা যেমন দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে, তেমনি দেশের অগ্রগতিকেও ত্বরান্বিত করেছে। এমনই একজন নারী হলেন নিশাত মজুমদার। ২০১২ সালের ১৯ শে মে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে তিনি এভারেস্ট জয় করেন।

নিশাত মজুমদারের মতো অনেক নারীই সমাজের বিভিন্ন পরিসরে ভূমিকা রাখছে। যেমন – প্রথম নারী ট্রেনচালক হিসেবে সালমা খাতুন ২০০৪ সালে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নারীই ট্রেনচালক হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি নারীরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের চালিকাশক্তি হয়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছেন। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ এই খাত থেকে আসে। এভাবে নারীরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে দেশের সমৃদ্ধি বয়ে আনছে।

প্রশ্ন-৩. সামাজিক পরিবর্তনে নারীর অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। এ সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধরে একটি অনুচ্ছেদ লেখো।
উত্তর: সামাজিক পরিবর্তনের ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপিত হচ্ছে। শিল্পের প্রসার আজ নারীকে গৃহের সীমিত পরিবেশ থেকে বাইরের কর্মমুখর জগতে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও নারীরা অনেক অগ্রসর হয়েছে। নারীরা এখন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।

গ্রামীণ সমাজেও এখন ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের পড়াশোনাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষিত নারীরা নানা পেশা যেমন- চিকিৎসা, আইন, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। ফলে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকারও পরিবর্তন ঘটছে।

প্রশ্ন-৪. তুমি পাঠ্যবই থেকে দ্বৈত শাসন’ সম্পর্কে জেনেছ। তুমি কী জেনেছ? এ ব্যবস্থার ফলাফল কী হয়েছিল? কত সালে এ শাসন ব্যবস্থার অবসান হয়?
উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশ শাসনের সুবিধার জন্য একজন নওয়াব নিযুক্ত করে। তিনি দেশের আইন-কানুন, রীতি- নীতির মাধ্যমে দেশ শাসন করবেন। আর একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নওয়াবের কাছ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করবে। এই ব্যবস্থাই দ্বৈত শাসন’।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রবর্তিত দ্বৈত শাসন ছিল বাংলার সাধারণ মানুষদের জন্য চরম অভিশাপম্বরূপ। দ্বৈত শাসনের ফলে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেয়ে ইংরেজ শাসকরা প্রজাদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করার পাশাপাশি তা আদায়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। এ ব্যবস্থায় কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা, আর নওয়াব পরিণত হন ক্ষমতাহীন শাসকে। কোম্পানির লুটপাট-অত্যাচার এবং একই সময়ে দেশে পরপর তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে ১৭৭০ (বাংলা ১১৭৬) সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান হয়।

প্রশ্ন-৫. বর্তমানে সবকিছুতেই প্রযুক্তির ভূমিকা রয়েছে। তুমি কি মনে কর সামাজিক পরিবর্তনেও তা কার্যকর ভূমিকা রাখে? বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: হ্যাঁ, আমি মনে করি সামাজিক পরিবর্তনে প্রযুক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখে। আধুনিক শিল্পায়িত সমাজের প্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক সূত্রাদির আবিষ্কার, অতীত ও বর্তমান শিল্পোৎপাদন পদ্ধতি, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ইত্যাদির সমন্বিত জ্ঞানকে প্রযুক্তি বলা হয়।

প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়নের ফলে এটি সামাজিক পরিবর্তনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণে উন্নত জাতের বীজ, সেচ, সার প্রয়োগের ফলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে গেছে। এছাড়া শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিশেষ করে বিদ্যালয়ে পাঠদান পদ্ধতি আরও সহজ ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য জানতে পারছে।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-৬. একই সমাজে সব মানুষের অবস্থান ও ভূমিকা এক নয়। এতে ব্যক্তির অবস্থান বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: একজন ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, পারিবারিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচিতি, সুনাম, পদ, ক্ষমতা ইত্যাদির ভিত্তিতে সমাজে তার স্থিতিই হল সমাজে ব্যক্তির অবস্থান।

প্রশ্ন-৭. সমাজে আমরা সবাই কোনো না কোনো ভূমিকা পালন করি। এখানে ব্যক্তির ভূমিকা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: একজন মানুষের অবস্থান অনুযায়ী সমাজ তার কাছ থেকে যে আচরণ প্রত্যাশা করে সেটিই হলো সমাজে তার ভূমিকা।

প্রশ্ন-৮. সমাজে একজন মানুষের অবস্থান নির্ধারণকারী বেশকিছু বিষয় রয়েছে। সেগুলো কী?
উত্তর: সমাজে একজন মানুষের অবস্থান নির্ধারণকারী বিষয়গুলো হলো— তার পরিচিতি, সুনাম, পদ, ক্ষমতা, অর্থনৈতিক অবস্থা, পারিবারিক মর্যাদা, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি।

প্রশ্ন-৯. তোমার মতে, লোকজন সুবলচন্দ্র ও সুশীলচন্দ্রের ওপর বিরক্ত হয়েছিল কেন?
উত্তর: যখন সুবলচন্দ্র ও সুশীলচন্দ্র বাবা ও ছেলে অবস্থান অনুযায়ী ভূমিকা পালন করছিল না, তখন সমাজের লোকজন বিরক্ত হয়েছিল, তাদেরকে মারতে তেড়ে এসেছিল।

প্রশ্ন-১০. তোমাদের অনেক অনুসন্ধানী কাজ করতে হবে। এ কাজের তথ্য সংগ্রহের জন্য তোমাদের কেমন ধরনের মানুষের সাথে কথা বলা দরকার বলে তুমি মনে কর?
উত্তর: তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের পেশা, বয়স, লিঙ্গ, অর্থনৈতিক অবস্থা, পদ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য যতটা সম্ভব বৈচিত্র্যময় অবস্থানের মানুষদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

প্রশ্ন-১১. সমাজে ব্যক্তির অবস্থান দুই রকমের হতে পারে। ব্যক্তির ‘অর্জিত অবস্থান’ এবং ‘অর্পিত অবস্থান’। এগুলোর সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: ব্যক্তি সমাজে যে অবস্থান তার সক্ষমতা ও চেষ্টা দ্বারা আয়ত্ত করে তাকে ব্যক্তির অর্জিত অবস্থান বলে। যেমন— জাতীয় সংসদের স্পিকারের পদ। ব্যক্তি সমাজে যে অবস্থান জন্মসূত্রে বা প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত হয় তাকে ব্যক্তির অর্পিত অবস্থান বলে। যেমন: মুসলমান ও খ্রিস্টান।

প্রশ্ন-১২. একটি সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। এই ক্ষমতায়ন বলতে কী বোঝ?
উত্তর: নারীর ক্ষমতায়ন হলো মূলত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক অবকাঠামোতে নারীর অংশগ্রহণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি উপায়।

প্রশ্ন-১৩. ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়েছিল বাংলা ১১৭৬ সালে। সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোন উপন্যাসে বাংলার এ বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়?
উত্তর: সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “আনন্দমঠ” উপন্যাসে বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বর্ণনা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন-১৪. ১৮৮৫ সালে পাশ হয় ‘বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন’। এ আইনটি সম্পর্কে কী জানো?
উত্তর: ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারদের ক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা ছাঁটাই এবং প্রজাদের দাবি-দাওয়া অনেকাংশে মেনে নিয়ে ১৮৮৫ সালে যে আইন বলবৎ হয় তাই ‘বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন’ বলে পরিচিত।

প্রশ্ন-১৫. ছেলে হিসেবে সুবলচন্দ্রের কী বদল হয়েছিল? শিখন অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সুবলচন্দ্র ছেলে হিসেবে দেখে, তার টাক মাথায় চুল গজিয়েছে, পড়ে যাওয়া দাঁতগুলো গজিয়েছে, মুখে একটাও দাড়ি নেই; সে একদম তার ছেলে সুশীলচন্দ্রের মত ছোট হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন-১৬. সুবলচন্দ্র বাবা থেকে ছেলে হতে চেয়েছে। কেন? শিখন অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ছেলেবেলায় সারাদিন লেখাপড়া, খেলাধূলা ও বন্ধুদের সাথে মজা করে আড্ডা দেওয়ার কথা মনে করে সুবলচন্দ্র বাবা থেকে ছেলে হতে চেয়েছে।


আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


আশাকরি “৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৬ষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।