|

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায়: মা-বাবা, ডাই-বোন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, সহপাঠীসহ আরও অনেককে নিয়ে আমাদের সমাজ গঠিত হয়। সমাজে বসবাসকারী সকল সদস্যের প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অন্যের সাথে ভালো আচরণ করা এবং সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা হলো নৈতিক গুণ। আর এ নৈতিক গুণাবলিই আমাদের দৈনন্দিন আচরণকে পরিচালিত করে। সর্বোপরি নৈতিক গুণাবলি বা মূল্যবোধ আমাদের ভালো ও মন্দের পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করে। এই শিখন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সামাজিক রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন, রাষ্ট্র, সরকার ও আইন সম্পর্কে জানতে পারবো।


সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি-নীতি

সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি-নীতির ধারণা: সমাজস্বীকৃত যেসব নীতিমালা সাধারণভাবে সমাজের মানুষকে কোন কাজ সঠিক আর কোন কাজ ভুল, সে সম্পর্কে ধারণা দেয় তাকে মূল্যবোধ বলে। মূল্যবোধ মানুষকে সমাজ জীবনে কোন বিষয়গুলো মূল্যবান বা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে শেখায়। যেমন— সততা, আতিথেয়তা, পরোপকার ইত্যাদি। অন্যদিকে, সমাজের অলিখিত নিয়ম-কানুনগুলোকে সামাজিক রীতি-নীতি বা সংস্কার বলে।

সামাজিক রীতি-নীতি আমাদের বলে দেয় একজন মানুষকে কোন পরিস্থিতিতে কোন পরিবেশে, কার সাথে কী ধরনের আচরণ করতে হবে। এগুলো মেনে চলার কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু না মানলে সমাজের মানুষ তাকে অপছন্দ করতে পারে। যেমন— হাঁচি-কাশির সময় মুখে রুমাল অথবা টিস্যু দেওয়া কিংবা কনুই চেপে ধরা, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা ইত্যাদি।

সামাজিক রীতি-নীতির বৈশিষ্ট্য: সামাজিক রীতি-নীতির কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন— ১. সামাজিক রীতি-নীতি সামাজিকভাবেই তৈরি হয়, ২. সামাজিক রীতি-নীতি সমাজের একটি অপরিহার্য অংশ। ৩. সামাজিক রীতি-নীতি ভালোও হতে পারে, আবার মন্দও হতে পারে। ৪. এলাকা বা দেশ ভেদে সামাজিক রীতি-নীতি ভিন্ন হতে পারে। ৫. সমাজের অধিকাংশ মানুষ সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলতে চেষ্টা করে। ৬. সামাজিক রীতি নীতি নির্দেশমূলক ও নিষেধমূলক এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ৭. রীতি-নীতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু অলিখিত নিয়ম-কানুন।

সমাজে সামাজিক রীতি-নীতির ভূমিকা: সমাজকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে সামাজিক রীতি-নীতি নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন— ১. সমাজে মানুষের আচার-ব্যবহার কেমন হবে তা সামাজিক রীতি-নীতিই ঠিক করে দেয়। ২. সমাজে যাতে সবকিছু ঠিকমতো কাজ করে তা নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে। ৩. মানুষের সমাজ গড়ে তোলার যে মূল উদ্দেশ্য সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা, তা অর্জনে ভূমিকা রাখে।

৪. সামাজিক মূল্যবোধ চর্চার সুযোগ তৈরি করে। ৫. সমাজের মানুষের প্রতিদিনের কাজকর্ম যাতে কমবেশি একই রকম রুটিন অনুযায়ী চলে সেজন্য একটি সাধারণ মান ঠিক করে দেয়। ৬. সামাজিক বিচারে সফলতার মানদণ্ড তৈরি করে মানুষের মাঝে সফলতার অনুভূতি তৈরিতে সহায়তা করে। এভাবে সামাজিক রীতি-নীতি সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

মূল্যবোধ: মূল্যবোধ হলো কতগুলো নীতি যার মাধ্যমে মানুষের কাজের ভালো-মন্দ নির্ণয় করা হয়। মূল্যবোধ সাধারণভাবে কোন কাজ বা আচরণ ভালো আর কোনটা খারাপ সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। মূল্যবোধগুলোর মাধ্যমে সমাজ কী গ্রহণ করবে ও করবে না সে সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। মূল্যবোধগুলো সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখে। সততা, পরোপকার, দানশীলতা, আতিথেয়তা, সহনশীলতা ইত্যাদি মূল্যবোধের উদাহরণ। ব্যক্তিদের রীতি-নীতি দ্বারা তরুণ সমাজ প্রভাবিত হয়। এছাড়া সমাজ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের ওপর রীতি-নীতি মেনে চলার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. সামাজিক রীতি-নীতি বা সংস্কার কাকে বলে?
উত্তর: সমাজের অলিখিত নিয়ম-কানুনগুলোকে।

প্রশ্ন-২. কোনটি মেনে চলার কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই?
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি।

প্রশ্ন-৩. কোনটি না মানলে সমাজের মানুষ তাকে অপছন্দ করতে পারে?
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি না মানলে।

প্রশ্ন-৪. কোনটি সামাজিকভাবে তৈরি হয়?
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি।

প্রশ্ন-৫. কোনটি ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে?
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে।

প্রশ্ন-৬. কোনটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু অলিখিত নিয়ম-কানুন?
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি।


নির্বাচন

নির্বাচন সম্পর্কিত ধারণা: নির্বাচন হচ্ছে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের পদ্ধতি। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রাপ্ত সকল নাগরিক ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বাছাই করে। প্রতিনিধি বাছাইয়ের এ প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে। নির্বাচনের মাধ্যমে ভোটাররা একাধিক প্রতিনিধির মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। যে দল বেশি ভোট পায়, তারা সরকার গঠন করে। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

কয়েকজন সদস্য নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করে এবং ভোটার তালিকা তৈরি করে। এছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নিয়ম-কানুনও তৈরি করে, যাকে নির্বাচনি আচরণবিধি বলা হয়। নির্বাচনের প্রার্থীরা নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালায় এবং নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারের বিভাগসমূহ: সরকার তিনটি বিভাগের মাধ্যমে কাজ করে। সরকারের এ তিনটি বিভাগ হলো— আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইন বিভাগ আইন তৈরি ও সংশোধন করে। এছাড়া আইন বিভাগ সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে বাজেট তৈরি করে। আর শাসন বিভাগ রাষ্ট্রের মধ্যে আইন প্রয়োগ করে। রাষ্ট্রের স্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ করে। আর কেউ আইন ভঙ্গ করলে বিচার বিভাগ তার বিচার করে। এভাবে সরকারের তিনটি বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্র সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।

রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য: রাষ্ট্র হলো এমন এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। রাষ্ট্রের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন—

১. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, জনগণ, সরকার ও সার্বভৌমত্ব (বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা)-এ চারটি উপাদান নিয়ে সরকার গঠিত হয়।
২. সাধারণভাবে রাষ্ট্রকে কোথাও দেখা যায় না। তবে কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে যখন কোনো রাষ্ট্র বা শক্তি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জনগণের ওপর আইন প্রয়োগ করে বা জনগণের কল্যাণ করার জন্য বিভিন্ন কাজ করে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বোঝা যায়।
৩. রাষ্ট্র একটি ভূখণ্ডের জনগণের সবার ইচ্ছায় গড়ে তোলা একটি সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
৪. রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণ।
৫. রাষ্ট্র তার সব ইচ্ছা, বা কাজ সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশকে কতটি আসনে ভাগ করা হয়?
উত্তর: ৩০০টি আসনে।

প্রশ্ন-২. জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা কত?
উত্তর: ৫০টি।

প্রশ্ন-৩. সরকার কয়টি বিভাগের মাধ্যমে কাজ করে?
উত্তর: তিনটি বিভাগের।

প্রশ্ন-৪. কোন বিভাগ আইন তৈরি ও সংশোধন করে?
উত্তর: আইন বিভাগ।

প্রশ্ন-৫. কোন বিভাগ দেশের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে বাজেট তৈরি করে?
উত্তর: আইন বিভাগ।

প্রশ্ন-৬. কোন বিভাগ রাষ্ট্রের মধ্যে আইন প্রয়োগ করে?
উত্তর: শাসন বিভাগ।


প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধ

মানুষের আচরণ পরিচালনকারী নীতি ও মানদণ্ডকে মূল্যবোধ বলে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সকল প্রতিষ্ঠানেই মূল্যবোধের চর্চা অত্যন্ত প্রয়োজন।`কেননা মূল্যবোধের চর্চা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে। তাই প্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধ চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।

সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রীতি-নীতি, মূল্যবোধ: সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। আবার কিছু কিছু রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ দীর্ঘমেয়াদী হয়। এক সময় ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজে একটি অত্যন্ত অমানবিক কুপ্রথা ছিল সতীদাহ বা সহমরণ। এ ব্যবস্থায় স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকেও তার চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো। রাজা রামমোহন রায় এ প্রথাটি বন্ধে উদ্যোগী হন। তখন বাংলায় ইংরেজ শাসন চলছিল। তারা প্রথাটির বিরুদ্ধে থাকলেও এদেশীয় একটি প্রচলিত ব্যবস্থা বদলানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করছিলেন।

কিন্তু রাজা রামামোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধে ইংরেজ শাসকের সহযোগিতা কামনা করেন। সতীদাহ প্রথা বন্ধের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে তখন হিন্দু সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। অনেক রাজা-মহারাজা এর বিরুদ্ধে থাকলেও কোনো কোনো শাস্ত্রজ্ঞানী পণ্ডিত তাঁর পক্ষে ছিলেন। ফলে রক্ষণশীল সমাজের ব্যাপক প্রচারণার মধ্যেও রামমোহনের জয় হয়। ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়। এ আইন বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়ত আরও কয়েক বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ রকম একটি অমানবিক কুপ্রথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছিল।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. কোথায় আইন তৈরি হয়?
উত্তর: আইনসভায়।

প্রশ্ন-২. কাদের মতামতের ভিত্তিতে আইন তৈরি হয়?
উত্তর: আইনসভার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে।

প্রশ্ন-৩. রাজা রামমোহন রায় কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: ১৭৭২ সালে।

প্রশ্ন-৪. রাজা রামমোহন রায় কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: হুগলি জেলায়।

প্রশ্ন-৫. কাকে প্রথম আধুনিক বাঙালি বলা হয়?
উত্তর: রাজা রামমোহন রায়কে।

প্রশ্ন-৬. কত সালে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়?
উত্তর: ১৮২৯ সালে।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন-১. আধুনিক বাঙালি সমাজ গঠনের লক্ষ্যে একজন ব্যক্তি সতীদাহ প্রথা নির্মূল করতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এখানে কার কথা বলা হয়েছে? সমাজ সংস্কারক হিসেবে তার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: এখানে রামমোহন রায়ের কথা বলা হয়েছে। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন একজন বাঙালি সমাজ সংস্কারক। তিনি তৎকালীন সমাজের কুপ্রথা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং শক্তহাতে তা দমন করেছিলেন। তিনি ১৭৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশশাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক শিক্ষা প্রচলনের পক্ষে তিনি কাজ করেছেন। তিনি সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথার মত বর্বর প্রথাকে সমূলে নির্মূল করতে সক্ষম হন।

এজন্য তৎকালীন হিন্দু সমাজ তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু তিনি সব কিছু উপেক্ষা করে তার লক্ষ্যে এগিয়ে যান। দার্শনিক ও ভাবুক প্রকৃতির হলেও রামমোহন রায় ছিলেন একজন বাস্তবতাবোধসম্পন্ন কর্মী মানুষ। তিনি শাস্ত্রের যুক্তি দেখিয়ে রচনা করেন, “সহমরণ বিষয়ক প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ।” তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক রামমোহন রায়কে পছন্দ করতেন এবং তার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়। ভারতীয় সমাজ থেকে উৎপাটিত হয় একটি বর্ব কুপ্রথা। প্রকৃতপক্ষে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন একজন সত্যিকারের শিক্ষিত, নির্ভীক এবং দৃঢ়চেতা সমাজ সংস্কারক।

প্রশ্ন-২. প্রত্যেক সমাজে প্রচলিত কিছু নিয়ম কানুন আছে এবং এসব নিয়ম কানুনকে ভিত্তি করেই সমাজ পরিচালিত হয়। এই নিয়ম কানুনকে কী বলে? এগুলো একটি সমাজে কেন প্রয়োজন?
উত্তর: মানুষ সমাজে বসবাস করে। একত্রে বসবাস করার ক্ষেত্রে মানুষ বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলে এবং অন্যকেও মেনে চলার নির্দেশ দেয়। এই অলিখিত নিয়ম-কানুনগুলোই সামাজিক রীতি-নীতি। যেমন: বড়দের সালাম করা, ডান হাতে দেওয়া- নেওয়া করা ইত্যাদি। আবার মানুষ বিচার বিবেচনা করে বুঝতে পারে কোন আচরণ করা উচিৎ এবং শোভনীয় আর কোন ধরনের আচরণ নিন্দনীয় এবং বর্জনীয়। এই আচার-আচরণের সাধারণ নীতিমালাই হলো মূল্যবোধ। যেমন: সততা, পরোপকার, পরমতসহিঞ্চুতা ইত্যাদি।

সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। রীতি- নীতি নানাভাবে সমাজের মানুষের উপকার করে। মূল্যবোধ মানুষকে সমাজ জীবনে কোন বিষয়গুলো মূল্যবান বা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে শেখায়। সামাজিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধ সমাজে একজন মানুষের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করে। সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির প্রতি অন্যের ধারণাকে স্পষ্ট করে। যে মানুষ মূল্যবোধ মেনে চলে তাকে সকলে পছন্দ করে ও ভালবাসে।

প্রশ্ন-৩. চারটি অপরিহার্য উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে আমরা সবাই এমন একটি সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রাষ্ট্র হলো এমন একটি সংগঠন, যার নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, জনসমষ্টি, সরকার ও সার্বভৌমত্ব আছে। প্রত্যেক মানুষই কোনো না কোনো রাষ্ট্রে বাস করে। হঠাৎ করে এর উৎপত্তি হয়নি। আদিম মানুষ প্রথমে গোত্রভিত্তিক সমাজে বসবাস করত। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ একসময় নিজেদের প্রয়োজনে রাষ্ট্র গড়ে তোলে। নিতান্ত ভৌগোলিক এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের ওপর রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো-

  • রাষ্ট্র হতে হলে সরকারের সঙ্গে নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ড, জনগণ আর সার্বভৌমত্ব (বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ ছাড়া কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা) থাকা প্রয়োজন ।
  • রাষ্ট্র তার সব ইচ্ছা বা কাজ সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে।
  • সাধারণভাবে রাষ্ট্রকে কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে, যখন অন্য যে কোনো রাষ্ট্র বা শক্তি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জনগণের ওপর আইন প্রয়োগ করে বা জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন কাজ করে তখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়
  • রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের জনগণের সবার ইচ্ছায় গড়ে তোলা একটি সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
  • রাষ্ট্রের প্রকৃত মালি জনগণ।

প্রশ্ন-৪. নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির গঠন ও দায়িত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে সাংবিধানিক সংস্যা রয়েছে তার নাম নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও তত্ত্বাবধান করে।

সংস্থাটি জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের নির্বাচন পরিচালনা করে। নির্বাচনের আগে সংস্থাটি নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে। এছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য রিটার্নিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ এবং মনোনয়নপত্র বাছাই করার দায়িত্ব পালন করে।

প্রশ্ন-৫. সরকার তিনটি বিভাগের মাধ্যমে তার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই বিভাগগুলোর কাজ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আইন বিভাগ: সরকারের যে বিভাগ দেশের শাসনকাল পরিচালনা ও বিচারকাজ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন এবং পরিবর্ধন করে তাকে আইন বিভাগ বলে। আইন বিভাগের একটি অংশ হলো আইনসভা বা পার্লামেন্ট। বাংলাদেশের আইনসভার নাম ‘জাতীয় সংসদ’। এটি একক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা।

শাসন বিভাগ: যে বিভাগ রাষ্ট্রের শাসনকাজ পরিচালনা করে তাকে শাসন বিভাগ বলে। একে নির্বাহী বিভাগও বলা হয়। আইন বিভাগ প্রণীত আইন বাস্তবে প্রয়োগ করাই শাসন বিভাগের প্রধান কাজ। সাধারণত শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদকে বোঝায়। ব্যাপক অর্থে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত সাধারণ কর্মচারি পর্যন্ত সবাই শাসন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।

বিচার বিভাগ: সরকারের যে বিভাগ আইন অনুসারে বিচার কাজ পরিচালনা করে তাকে বিচার বিভাগ বলে। আইন কারকে শান্তি প্রদান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং নাগরিকের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষা বহুলাংশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল।

প্রশ্ন-৬. সরকারের সমালোচনা করে এক ধরনের গোষ্ঠী রয়েছে। এ ধরনের গোষ্ঠীকে কী বলে?
উত্তর: এ ধরনের গোষ্ঠীকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলে। এটি হচ্ছে এমন একটি গোষ্ঠী যারা সরকারের সমালোচনা করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে স্বৈরাচারী হতে বাধা দেয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের স্বার্থকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করা। এই গোষ্ঠী সরকারি কাঠামোর বাইরে থেকে সিন্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে বা করতে চায়। এদের সুনির্দিষ্ট আদর্শ থাকেনা এবং সময় ও অবস্থার প্রেক্ষাপটে আদর্শ পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন-৭. সময়ের সাথে সাথে সামাজিক রীতি-নীতির পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তন কীভাবে হয় ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সামাজিক রীতি-নীতি একটি পরিবর্তনশীল বিষয়। তাই কোনো এলাকা বা দেশের সামাজিক রীতি-নীতি কোনো অনড় বিষয় নয়। সময় ও অবস্থাভেদে এর পরিবর্তন ঘটে। প্রাকৃতিক পরিবেশ, যান্ত্রিক উৎকর্ষ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও স্থানান্তর, রাজনৈতিক বিপ্লব ও আন্দোলন ইত্যাদি বিষয়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক রীতি-নীতিরও পরিবর্তন ঘটে।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-৯. নৈতিক গুণগুলোর মধ্যে কোনটির মাধ্যমে তুমি সুপরিচিত হতে চাও? চারটি বাক্যে লেখো।
উত্তর: নৈতিক গুণগুলোর মধ্যে আমি সততার দ্বারা সুপরিচিত হতে চাই। কখনও মিথ্যা কথা না বলা, সব কাজ সময়মতো ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে করাকে সততা বলে। সৎ ব্যক্তিকে সমাজে সবাই শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করে। তার সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখে। এজন্যই আমি সততা দ্বারা সমাজে সুপরিচিত হতে চাই।


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন-১০. সোমা সবসময় সত্য কথা বলে। এই ধরনের গুণকে কী বলে?
উত্তর: সমাজস্বীকৃত যেসব নীতিমালা সাধারণভাবে সমাজের মানুষকে কোন কাজ সঠিক আর কোন কাজ ভুল, সে সম্পর্কে ধারণা দেয় তাকে মূল্যবোধ বলে। যেমন- সত্য কথা বলা, সৎ পথে চলা।

প্রশ্ন-১১. আমাদের সমাজের এমন কিছু রীতি-নীতি রয়েছে যা আমাদেরকে সঠিক আচরণ করতে শেখায়। এর মধ্য থেকে দুটি উল্লেখ করো।
উত্তর: আমাদের সমাজে সঠিক আচরণ করতে শেখায় এমন দুটি রীতি-নীতি হলো— টয়লেট ব্যবহারের পর ভালভাবে পরিস্কার করে বের হওয়া ও সবার সামনে বায়ু ত্যাগ না করা।

প্রশ্ন-১২. সমাজে কিছু প্রচলিত রীতি-নীতি আছে। এগুলো আমাদের কী শেখায়?
উত্তর: প্রচলিত সামাজিক রীতি-নীতি আমাদেরকে ভালো-খারাপ আচরণ সম্পর্কে ধারণা দেয়, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে শেখায়, সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে ইত্যাদি।

প্রশ্ন-১৩. রফিকদের ক্লাসে সকলের মতের ভিত্তিতে একজনকে ক্যাপ্টেন বানানো হলো। এই প্রক্রিয়াকে কী বলে?
উত্তর: এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচন বলে। নির্বাচন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট লোকদের মধ্য থেকে গোপনে ব্যালটের মাধ্যমে একজনকে বেছে নেওয়া হয়।

প্রশ্ন-১৪. নির্বাচনকালীন বেশকিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম কানুনকে কী বলে?
উত্তর: এসব নিয়ম কানুনকে নির্বাচনি আচরণবিধি বলে। নির্বাচন আচরণবিধি হলো সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভোটারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট লোকদের জন্য আইনি নির্দেশনা।

প্রশ্ন-১৫. সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো আইন বিভাগ। তোমার দেশের এ বিভাগটি কী করে?
উত্তর: আমার দেশের আইন বিভাগ তথা সংসদ আইন প্রণয়ন ও সংশোধন করে এবং সরকারের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব করে বাজেট তৈরি করে।

প্রশ্ন-১৬. সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো শাসন বিভাগ। এ বিভাগ কী কাজ করে?
উত্তর: আমার দেশের শাসন বিভাগ আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন প্রয়োগ ও যাবতীয় প্রশাসনিক কার্য পরিচালনা করে।

প্রশ্ন-১৭. বিচার বিভাগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বিভাগটি কী কাজ করে?
উত্তর: যারা প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে, আমার দেশের বিচার বিভাগ তাদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করে।


আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় এ সামাজিক মূল্যবোধ ও রীতি-নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৫ম অধ্যায় এর সকল প্রশ্নোত্তর শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।