৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায়: ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী (১৯১৭-১৯৮৪) ভারতের এলাহাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬, ১৯৭০ এবং ১৯৮০ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করেন। এই শিখন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয়, আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক বৈশ্বিক স্তরে বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবো। এছাড়াও ইতিহাসের কোনো ঘটনার সরল ব্যাখ্যার পাশাপাশি বহুপাক্ষিক জটিল বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবো।
মুক্তিযুদ্ধের দেশি ও বিদেশি বন্ধুরা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এই মুক্তিযুদ্ধে দেশি ও বিদেশি অনেক ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের অবদান তুলে ধরা হলো:
সাইমন ড্রিং: সাইমন ড্রিং ১৯৭১ সালে ছিলেন ২৬ বছর বয়সের একজন তরতাজা তরুণ সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানির সব বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন ঢাকায় বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, যা সরকার বিদেশিদের কাছে গোপন করতে চায়। তখনই তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ৩২ ঘণ্টার বেশি সময় হোটেলে লুকিয়ে ছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের হিংসাত্মক ঘটনার খবর তিনি বিশ্ববাসীকে জানাবেন। ২৭ ঘন্টা পর যখন কারফিউ বা সান্ধ্য আইন তুলে নেওয়া হয় তখন তিনি রাস্তায় টহলরত মিলিটারির চোখ এড়িয়ে পথে নামলেন।
তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স এবং পুরোনো ঢাকার কিছু জায়গা থেকে তিনি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি তুললেন, খবর সংগ্রহ করলেন। বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য নানা কৌশলে, এমনকি তথ্য টুকে রাখা কাগজ, ছবির নেগেটিভ মোজার মধ্যে লুকিয়ে রেখে কোনোমতে বিমানে উঠে অবরুদ্ধ দেশ ছেড়ে সাইমন ব্যাংকক পৌছান।
সাইমন ড্রিং ব্যাংকক থেকেই তার বিখ্যাত প্রতিবেদন ‘পাকিস্তানে ট্যাংকের নিচে বিদ্রোহ দমন’ শিরোনামে পাঠিয়ে দেন তাঁর পত্রিকা লন্ডনের ‘দ্য ভেইলি টেলিগ্রাফ’ এ যা, ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ প্রকাশিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সাইমন ড্রিং বাংলার মানুষদের ওপর পাকিস্তানিদের চালানো বর্বরতা বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. লাইমন ড্রিংকে কী বলা হয়?
উত্তর: বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু।
প্রশ্ন-২. কত ঘণ্টা পর ঢাকার কারফিউ বা সান্ত্ত আইন তুলে নেওয়া হয়?
উত্তর: ২৭ ঘণ্টা পর।
প্রশ্ন-৩. সাইমন ড্রিং-এর পত্রিকার নাম কী?
উত্তর: ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ (লন্ডন)।
প্রশ্ন-৪. সাইমন ড্রিং-এর বিখ্যাত প্রতিবেদনের নাম কী?
উত্তর: ‘পাকিস্তানে ট্যাংকের নিচে বিদ্রোহ দমন’।
প্রশ্ন-৫. সাইমন ড্রিং-এর পেশা কী ছিল?
উত্তর: সাংবাদিকতা।
মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ও বিরোধিতা
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মানবিক সাহায্য: ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে এদেশে যে নির্বিচার গণহত্যা শুরু করেছিল তা থেকে প্রাণ বাঁচাতে প্রথমে হাজার হাজার ও পরে লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করে। বিদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী এই মানুষকে বলা হয় শরণার্থী। তারা মূলত আমাদের সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। তবে পূর্ব দিকের ত্রিপুরা রাজ্যও হয়ে উঠেছিল একটি বড় আশ্রয় কেন্দ্র। উত্তর-পূর্বে মেঘালয় রাজ্যেও অল্প সংখ্যক লোক আশ্রয় নিয়েছিল।
মুক্তি সংগ্রামের সময় ভারতের রাজধানী দিল্লি রাজনৈতিক কারণে, কলকাতা বাংলাদেশ সরকারের সকল কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র হিসেবে এবং আগরতলা শরণার্থীদের বড় অংশের ট্রানজিট ও যুদ্ধের প্রস্তুতি কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তখন বাস্তবতাই প্রতিবেশী ভারতকে বাংলাদেশের সংগ্রামে যুক্ত করে নিয়েছিল। এই যোগ ছিল বহুমাত্রিক। যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়েই ভারতের দিকে শরণার্থীর ঢল বহমান ছিল। ভারত সেদিন শরণার্থীদের জন্যে সীমান্তের সব পথ খুলে দিয়েছিল, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল, তাদের খাবার ও ঔষুধপত্রের ব্যবস্থা করেছিল। নয় মাসে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক কোটি। আর এভাবেই ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
ভারতের সামরিক সহযোগিতা: মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য শরণার্থী শিবির খোলার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিল। ভারতের সামরিক বাহিনীও বাংলাদেশের সংগ্রামে যুক্ত হয়ে যায়। তারা গেরিলা যোদ্ধা, নিয়মিত বাহিনীর নতুন সদস্য, নৌ কমান্ডারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদেরও ব্যবস্থা করেছে। আমাদের নিয়মিত বাহিনীকে সম্মুখযুদ্ধের সময় দূরপাল্লার কামানের সাহায্যে আক্রমণে সাহায্য করেছে। আর শেষে যৌথভাবে মিত্র বাহিনী গঠন করে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের প্রায় ৪ হাজার সৈন্য শহিদ হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক সংযোগ: ১৯৭১ সালে ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পর দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পাকিস্তানি আক্রমণের কিছুদিন পর ৩১শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে সে দেশের পার্লামেন্ট লোকসভায় বাংলাদেশের অনুকূলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের কাছে যেসব বিষয়ে সহযোগিতা চেয়েছিলেন সেগুলো হলো মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা, প্রবাসী সরকার গঠনে সহায়তা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত অস্ত্র সহায়তা এবং শরণার্থীদের জন্য সব রকম মানসিক সাহায্য।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. ভারতে কতজন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল?
উত্তর: প্রায় ১ কোটি।
প্রশ্ন-২. শরণার্থী কাকে বলে?
উত্তর: বিদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মানুষদেরকে বলা হয় শরণার্থী।
প্রশ্ন-৩. কত তারিখে গণহত্যা শুরু হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ।
প্রশ্ন-৪. মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী ছিল?
উত্তর: ইন্দিরা গান্ধী।
বিশ্ব রাজনীতির হালচাল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ঝামেলা ছিল। সেই সময় ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন করলেও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। কারণ এক সময় চীন আর ভারতের বন্ধুত্ব থাকলেও সীমান্ত নিয়ে তাদের মাঝে মতবিরোধ হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৬২ সালের যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। এরপর থেকে এই দুই বড় দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। চীন এক পর্যায়ে ভারতের বদলে পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। এদিকে ভারত বিশ্ব রাজনীতিতে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখতে চাইলেও পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়ায়। পাকিস্তান শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একাধিক সামরিক চুক্তি এবং বিভিন্ন সহযোগিতা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও রাশিয়ার উৎপত্তি: বিশ্বের দুটি শক্তিধর দেশ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয়েছিল ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের মাধ্যমে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এই দেশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন বা দক্ষিণ আমেরিকার অধিকাংশ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীকালে সেসব দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে এবং বৃহৎ রাষ্ট্রটির ভূখণ্ড বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর উত্তর সোভিয়েত অঞ্চলে ১৫টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে অঞ্চলটিতে আরও অন্তত ৬টি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থলে বর্তমানে রয়েছে মোট ২১টি রাষ্ট্র। এর মধ্যে সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র হচ্ছে রাশিয়া। আর এভাবে রাশিয়ার উৎপত্তি হয়েছে।
NAM বা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন: ১৯৬১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেব্রু, ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রাণপুরুষ আহমদ সুকর্ণ, মিশরের জাতীয়তাবাদী নেতা প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দেল নাসের, ঘানার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রেসিডেন্ট কোয়ামে এনকুমা এবং তৎকালীন যুগোল্লাভিয়ার (বর্তমানে বহু দেশে বিভক্ত। যেমন— বসনিয়া, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি) প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রজ টিটো প্রমুখ মিলে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তৃতীয় পথ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। সেটি তখন সফলও হয়েছিল। এটির নামকরণ হয়েছিল নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট (NAM) বা ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’। সর্বশেষ এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১২০টি।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. কত সালে চীন ও ভারতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধ হয়?
উত্তর: ১৯৬২ সালে।
প্রশ্ন-২. রুশ বিপ্লব কত সালে হয়েছিল?
উত্তর: ১৯১৭ সালে।
প্রশ্ন-৩. সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৯১ সালে।
প্রশ্ন-৪. NAM গঠিত হয় কত সালে?
উত্তর: ১৯৬১ সালে।
প্রশ্ন-৫. NAM এর সদস্য দেশ কয়টি?
উত্তর: ১২০টি।
মুক্তিযুদ্ধ ও বিশ্বসমাজ
মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকদের অবদান: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকেরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা নিরীহ বাঙালিদের ওপর গণহত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের এই হত্যার খবর যেন বিশ্ববাসীর কাছে না পৌছাতে পারে তাই সকল সাংবাদিকদের দেশ থেকে বিতারিত করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লুকিয়ে থাকেন এবং ২৫শে মার্চের পর মিলিটারিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পুরোনো ঢাকার কিছু ছবি তুলে আনেন। পরবর্তী সময়ে তিনি দেশ ছেড়ে ব্যাংকক যান এবং সেখান থেকেই লন্ডনে ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে’ তা প্রকাশ করেন। পাকিস্তানিদের নেতিবাচক দিকগুলো বিশ্বের মানুষের কাছে প্রকাশ পায়। ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং-এর পাশাপাশি অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস নামক ‘পাকিস্তানি সাংবাদিকের প্রতিবেদন বড় চমক ঘটায় এবং বিশ্ব জনমত গঠনে প্রভাব বিস্তার করে।
মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা: পূর্ব পাকিস্তানে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর বাংলাদেশে যেসব সাংবাদিক শিল্পী-সাহিত্যিক আগরতলা বা কলকাতা পৌছান তারাও ভারত ও অন্যান্য দেশের সাংবাদিকদের কাছে দেশের ভেতরের প্রকৃত সত্য সরবরাহ করেন। ফলে প্রথম থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং শরণার্থীদের খবর প্রচার করে এসেছে। ইংল্যান্ডের বেসরকারি বেতার কেন্দ্র বিবিসি, মার্কিন বেতার কেন্দ্র ডোয়া, ভারতের আকাশবাণীসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর আক্রমণের খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে।
পাশাপাশি নয় মাস জুড়েই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নানা সাফল্যের খবর পরিবেশন করেছে। এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে শরণার্থী শিবিরে লাখ লাখ মানুষের কষ্টকর জীবন, অসহায় মৃত্যু, খাদ্যাভাবে অপুষ্টির শিকার শিশুদের অসহায় দুর্ভোগের বিবরণী ও ছবি প্রভৃতি। এতে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী-সাহিত্যিকদের অবদান: মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিক, গণমাধ্যম এর পাশাপাশি শিল্পী-সাহিত্যিকরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে ভূমিকা গ্রহণে শিল্পী-সাহিত্যিকরাও পিছিয়ে থাকেননি। বিখ্যাত ভারতীয় সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশংকর ও ব্রিটিশ গায়ক বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন মিলে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ১৯৭১ সালের ১লা আগস্ট নিউইয়র্কের মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
তাতে হ্যারিসন এবং আরেকজন খ্যাতিমান মার্কিন গায়িকা জোয়ান্ বায়েজ বাংলাদেশ নিয়ে আবেগপূর্ণ গান গেয়ে জনতাকে উদ্বুদ্ধ করেন। পণ্ডিত রবিশংকর, উস্তাদ আলী আকবর খান ও পণ্ডিত আল্লারাখার সেদিনের বাদন মানুষ আজও স্মরণ করে। পঞ্চাশ হাজার মানুষ এই কনসার্ট সরাসরি উপভোগ করেছিল। এদিকে ভারতজুড়ে শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীরা নানা আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
ঘাটজনের সাক্ষ্য: বিশ্বের বিখ্যাত ষাটজন মনীষী প্রকাশ করেছিলেন ‘টেস্টিমনি অব সিক্সটি’ বা ষাটজনের সাক্ষ্য। এ হলো এমন ষাটজন খ্যাতিমান মানুষের বক্তব্য যাঁরা তখন পূর্ব পাকিস্তানে যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছিল তা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন মাদার তেরেসা, মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, বিখ্যাত সাংবাদিক ক্লেয়ার হোলিংওয়ার্থ, জন পিলজার প্রমুখ। মাদার তেরেসা সাক্ষ্য দিয়ে লিখেছেন— “আমি পাঁচ-ছয় মাস ধরে শরণার্থীদের মধ্যে কাজ করেছি। আমি এসব শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মরতে দেখেছি। সে কারণেই আমি পৃথিবীকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এই পরিস্থিতিটা কত ভয়াবহ এবং কত জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য দরকার।”
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকার নাম কী?
উত্তর: সানডে টাইমস।
প্রশ্ন-২. জর্জ হ্যারিসন কোথায় ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজন করেন?
উত্তর: নিউইয়র্কের মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে।
প্রশ্ন-৩. ‘টেস্টিমনি অব সিক্সটি’ কারা প্রকাশ করেছিলেন?
উত্তর: বিশ্বের বিখ্যাত ষাটজন মনীষী।
প্রশ্ন-৪. অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস কে ছিলেন?
উত্তর: একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক।
প্রশ্ন-৫. ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত হয়েছিল কত তারিখে?
উত্তর: ১লা আগস্ট, ১৯৭১।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১. আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে বিদেশি গণমাধ্যমসমূহ খবর, ফিচার ও নিবন্ধ প্রকাশ করে বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করে। এ সম্পর্কে তুমি কী জানো? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিশ্বের খ্যাতিমান সব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলে খবর, ফিচার ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। বিশ্ববিখ্যাত সাময়িকী টাইম ও নিউজউইকে একাধিকবার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রচ্ছদ কাহিনী হয়েছিল, একবার প্রচ্ছদে ছাপা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। প্রথম সারির ব্রিটিশ পত্রপত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফ, গার্ডিয়ান, ইকনোমিস্ট, স্টেটসম্যান, দি টাইমস, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস প্রভৃতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পত্রিকাসহ সারা বিশ্বের অধিকাংশ পত্রিকার ভূমিকা ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। বিশ্বজনমত তৈরিতে এটি বড় ভূমিকা রেখেছিল।
প্রশ্ন-২. পরাশক্তির অন্তর্গত একটি দেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। পরাশক্তিটির নাম কী ছিল? দেশটি বাংলাদেশকে কী কী সহযোগিতা করেছিল? বর্ণনা করো।
উত্তর: পরাশক্তির নাম ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ পরাশক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক সহযোগিতা করেছিল। এই আগস্ট ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সাথে শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করে যেন প্রতিপক্ষকে জানান দেয় যে, পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করলে তারা চুপ থাকবে না, বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়তায় এগিয়ে আসবে।
এ সত্ত্বেও ডিসেম্বরে যখন পাকিস্তান ভারতে বিমান হামলা চায় ও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় তখন সবার ধারণা হয়েছিল যে যুক্ত পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য বঙ্গোপসাগরে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ সপ্তম নৌবহর পাঠাবে। আর দিক থেকে ভারতে অক্রমণ চালাবে। তবে সোভিয়েত হুঁশিয়ারি ও সহায়তা এবং ভারত-বাংলাদেশ মিতাহিনীর অতর যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বলে তারা কেউই পাকিস্তানের পক্ষে কোনো রকম সামরিক তৎপরতা চালাতে পারেনি।
প্রশ্ন-৪. মুক্তিযুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের সমন্বয়ে একটি বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনী সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: মুজিবনগর সরকারের সেক্টরভিত্তিক যুদ্ধ পরিচালনার ফলে ১৯৭১ সালের মে মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সাহসের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলা করতে থাকে। এ সময় ভারতীয় বাহিনীও মুক্তিবাহিনীকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। এরপর পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর সুদৃঢ় আক্রমণের জন্য ২১শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী গঠিত হয়। যৌথবাহিনী গঠনের ফলে মুক্তিযুদ্ধ দারুণ গতি লাভ করে এবং বাংলাদেশের বিজয় লাভ ত্বরান্বিত হয়।
প্রশ্ন-৫. মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এবং প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। এখানে কোন দেশের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের কয়েকটি বৃহৎ ও শক্তিশালী দেশ বিভিন্নভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে, এর অন্যতম ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। মুক্তিকামী বাঙালিকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, শরণার্থীদের আশ্রয়, স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টিসহ বিভিন্নভাবে ভারত সরকার সহযোগিতা করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে যে গণহত্যা চালায় ভারত সরকার তার তীব্র নিন্দা জানায়।
গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়। এসময় ভারত এদেশের জনগণের সহায়তার জন্য ‘শরণার্থী কর’ চালু করে। ভারতের মাটিতে বাঙালিদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। ৬ই ডিসেম্বর ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারত যৌথবাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করে। ফলে ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
প্রশ্ন-৬. স্বাধীন নিরপেক্ষ তৃতীয় পথ তৈরির চেষ্টায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ একটি জোট গঠন করেন। এখানে কোন জোটের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এখানে ‘নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’ (NAM) বা ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’ এর কথা বলা হয়েছে। ১৯৬১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণ পুরুষ আহমদ সুকর্ণ, মিশরের জাতীয়তাবাদী নেতা প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের।
ঘানার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও প্রেসিডেন্ট কোয়ামে এনকুমা এবং তৎকালীন যুগোস্লাডিয়ার (বর্তমানে বহু দেশে বিভক্ত, যেমন— বসনিয়া, সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ইত্যাদি) প্রেসিডেন্ট জোসেফ ব্রজ টিটো প্রমুখ মিলে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ তৃতীয় পথ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। সেটি তখন সফলও হয়েছিল। এটির নামকরণ হয়েছিল ‘নন-অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট’ (NAM) বা ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’। সর্বশেষ এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১২০টি।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-৭. মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। এর পরিচয় ৫টি বাক্যে লেখো।
উত্তর: ১৯৭১ সালে যে সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও পরিচালিত হয় সেটি ‘মুজিবনগর সরকার’ বা ‘প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সরকারের রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এছাড়া আরও তিনজন মন্ত্রী ছিলেন।
প্রশ্ন-৮. বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত হয় দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ’ বলা হয়। এ সম্পর্কে ৫টি বাক্য লেখো।
উত্তর: ছয় দফা দাবিতে বাঙালির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা উল্লেখ থাকায় একে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ বলা হয়। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তদানীত্তন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। এতে বাঙালির চরম প্রত্যাশিত দ্বায়ত্তশাসনের জোর দাবি উত্থাপন করা হয়। এ দাবিগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও তা বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। এ কারণেই ছয় দফাকে ‘বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ’ বলা হয়।
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন
প্রশ্ন-৯. ‘পাকিস্তানে ট্যাংকের নিচে বিদ্রোহ দমন’- এটি সাইমন ড্রিং- এর লেখা বিখ্যাত প্রতিবেদনের শিরোনাম। এর প্রথম বাক্যটি কী ছিল?
উত্তর: সাইমন ড্রিং-এর ‘পাকিস্তানে ট্যাংকের নিচের বিদ্রোহ দমন শিরোনামে লেখা বিখ্যাত প্রতিবেদনটির প্রথম বাক্যটি ছিল: “সৃষ্টিকর্তা এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের নামে ঢাকা আজ বিধ্বস্ত ও ডয়ার্ড এক শহর।
প্রশ্ন-১০. মুক্তিযুদ্ধের তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য আমরা বিভিন্ন উৎসের সাহায্য নিতে পারি। এরকম সম্ভাব্য বিভিন্ন উৎস কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের তথ্যাদির সম্ভাব্য বিভিন্ন উৎস হলো— বয়স্ক আত্মীয়, প্রতিবেশী বা পরিচিত ব্যক্তি, পাঠ্যবই, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই, স্থানীয় লাইব্রেরি, তখনকার পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট, গুগল ইত্যাদি।
প্রশ্ন-১১. আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সহায়তাকারী সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমন চার ধরনের সহায়তাকারীর নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এমন চার ধরনের সহায়তাকারী হলেন— বিদেশি সাংবাদিক ও সংবাদপত্র, শরণার্থীদের মূলভার বহনকারী দেশ ভারত, জাতিসংঘ, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশ।
প্রশ্ন-১২. ভারত সরকার প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। তাদেরকে ভারত সরকার কীভাবে সাহায্য করেছিল?
উত্তর: ভারত সরকার শরণার্থীদের জন্য তার সীমান্তের সব পথ খুলে দিয়েছিল, তাদেরকে আশ্রয় ও খাবার দিয়েছিল এবং ঔষধপত্রের ব্যবস্থা করেছিল।
প্রশ্ন-১৩. ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। এজন্য তারা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল?
উত্তর: ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা দানের জন্য শরণার্থী শিবির নির্মাণ, ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসার ব্যবস্থা এমনকি তাদের জনগণের ওপর বাড়তি কর আরোপেরও ব্যবস্থা করেছিল।
প্রশ্ন-১৪. মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় গঠিত হয় ‘মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা”। এর সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে গঠিত মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’-এর সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – সমালোচনা করতে শেখা
৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় এ মুক্তিযুদ্ধের দেশি ও বিদেশি বন্ধুরা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ৪র্থ অধ্যায় এর সকল প্রশ্নোত্তর শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।