৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – সমালোচনা করতে শেখা
৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ: যেকোনো কিছুর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক থাকে। বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এসকল ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বের করে যৌক্তিক আলোচনার নামই সমালোচনা। সাধারণভাবে যেকোনো বিষয় নিয়েই সমালোচনা হতে পারে। এটি আমাদের ভালো গুণ সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি নেতিবাচক বা উচিত নয় এমন দিক সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সেগুলো শোধরানোর সুযোগ করে দেয়। তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রেই সমালোচনার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তবে সমালোচনা অবশ্যই যৌক্তিক ও ইতিবাচক উদ্দেশ্য নিয়ে হতে হবে। তবেই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এ পরিচ্ছেদটিতে তাই সমালোচনা করতে শেখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
পাঠ বিশ্লেষণ
পাঠের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীদের সমালোচনা, উপস্থাপনা ও বিতর্ক বিষয়ে দক্ষ করে তোলা।
নামকরণ: পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমালোচনা করতে শেখা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। এ পরিচ্ছেদে উপযুক্ত কোনো বিষয় সম্পর্কে নিজেদের মতামত ও ভিন্নমত উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা করার কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কোনো ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক কৌশল সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়েছে। সেই বিবেচনায় পরিচ্ছেদটির নাম সমালোচনা করতে শেখা’ সার্থক হয়েছে।
ভাষা: রচনাটি প্রমিত রীতিতে রচিত।
সমালোচনা
রাতুল, মিতুল, প্রভা ও সুস্মিতা মাঠে খেলতে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে তারা খেয়াল করল রাস্তার দুপাশের বড়ো বড়ো গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছ কাটার এই আয়োজন দেখে রাতুল বলল, ‘রাস্তার পাশের এসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে কেন?
প্রভা বলল, ‘তুই জানিস না? এই রাস্তাটা আরও চওড়া করা হবে।’
প্রভার কথা শুনে মিতুল বলল, “কিন্তু রাস্তা চওড়া করার জন্য গাছ কাটতে হবে কেন? গাছ আমাদের কত উপকার করে জানিস? সুস্মিতা বলল, “গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পাই, খাবার পাই, জ্বালানি পাই। এভাবে গাছ কেটে ফেলা ঠিক হচ্ছে না মোটেও। প্রভা বলল, ‘রাস্তা চওড়া করলেও তো আমাদের উপকার। তখন স্কুলে যাওয়ার পথে আর যানজটে পড়তে হবে না।’
রাতুল বলল, ‘সেটাও ঠিক। কিন্তু গাছ কেটে রাস্তা চওড়া করা মোটেও ঠিক নয়।’
ওপরের ঘটনাটিতে দেখা যায় রাতুল মিতুল, প্রভা ও সুস্মিতা একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। সেই বিষয়টি নিয়ে তারা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছে। এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতামত প্রদানই আলোচনা।
কোনো বিষয় বা ঘটনার প্রয়োজনীয়তা অপ্রয়োজনীয়তা, ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, যৌক্তিকতা ইত্যাদি নিয়ে মত-দ্বিমত, পক্ষে-বিপক্ষে মতামতই হচ্ছে সমালোচনা। যেকোনো বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়েই সে বিষয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।
সমালোচনার উদ্দেশ্য
- আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করা যায়।
- পরস্পরের মতামত সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে।
- নির্দিষ্ট বিষয়ে একে অপরের মনোভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।
- বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথোপকথনের সুযোগ তৈরি হয়।
- প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারে।
- কোনো ভ্রান্ত ধারণা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক জ্ঞান লাভ করা যায়।
- সমালোচনার মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্রে আদর্শগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়।
- সমস্যার ফলপ্রসূ সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।
সমালোচনার ক্ষেত্রে করণীয়
- নিজের কথা ও যুক্তি কাগজে টুকে রাখার
- নিজের পক্ষের যুক্তিগুলো একে একে তুলে ধরা।
- নিজের যুক্তির পক্ষে উদাহরণ ও ব্যাখ্যা দেওয়া।
- নিজের কথা সংক্ষেপে গুছিয়ে বলা।
- অন্যের কথা ও যুক্তি মনোযোগ দিয়ে শোনা।
- অন্যের বক্তব্যের দুর্বল অংশ খুঁজে বের করা।
- বিনয়ের সঙ্গে অন্যের যুক্তি খণ্ডন করা।
- অন্যের কথার মাঝখানে কথা না বলা।
- যে ব্যাপারে যুক্তি বা মতামত দেওয়া হচ্ছে তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জেনে নেওয়া।
- ভিন্ন মতামত প্রদান করার সময়ে বিনয় প্রকাশ করা।
- এমনভাবে মতামত না প্রকাশ করা যাতে কেউ মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- এমনভাবে মতামত না প্রকাশ করা যাতে পরবর্তীতে নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং ভিন্ন মতামত হলেও আক্রমণাত্মক ভাষায় সমালোচনা না করা।
বিতর্ক
বিতর্ক হচ্ছে যুক্তি-তর্ক ও তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করা। কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে সে বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, তত্ত্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বাদানুবাদকে বিতর্ক বলা হয়। একটি নির্ধারিত বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই বিতর্কের মূল উদ্দেশ্য। বিতর্কের মাধ্যমে ব্যক্তির জানায় ও বলায় দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
✔ আরও দেখুন: স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে পক্ষ দলের বক্তব্য
বিতর্কের শ্রেণিবিভাগ
বিতর্ককে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তার মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় বিতর্ক হলো— প্রচলিত বা সনাতনি বিতর্ক, সংসদীয় বিতর্ক, বারোয়ারি বিতর্ক, জাতিসংঘ মডেল বিতর্ক প্রভৃতি।
প্রচলিত বা সনাতনি বিতর্ক: বিতর্কের সবচেয়ে প্রাচীন ধারা হচ্ছে সনাতনি বিতর্ক। সাধারণত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের বিতর্ক হয়ে থাকে। এ ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি দল থাকে। সাধারণত প্রতি দলে তিনজন সদস্য থাকে। বিতর্ক পরিচালনার জন্য থাকেন একজন সভাপতি। মূল্যায়ন করার জন্য থাকেন তিন বা ততোধিক সদস্যের বিচারকমণ্ডলী। প্রত্যেক বক্তা সাধারণত পাঁচ মিনিট কথা বলার সময় পান। দুই দলনেতা যুক্তি খণ্ডনের জন্য অতিরিক্ত দুই মিনিট করে সময় পান।
সংসদীয় বিতর্ক: সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত বিতর্ককে সংসদীয় বিতর্ক বলা হয়। সংসদীয় বিতর্ক ধারা বর্তমানে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে সরকারি দলে থাকেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সরকারি দলের সাংসদ এবং বিরোধী দলে থাকেন নেতা, উপনেতা ও বিরোধী দলীয় সাংসদ। সংসদীয় বিতর্ক যিনি পরিচালনা করেন তাঁকে বলে স্পিকার।
বারোয়ারি বিতর্ক: এ ধরনের বিতর্কে কোনো পক্ষ-বিপক্ষ দল থাকে না। এটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এখানে ব্যক্তির ক্ষুরধার বক্তব্য, চিন্তার নতুনত্ব, বিষয়ের গভীরতা, নাটকীয়তা, সাবলীলতা ও অনবদ্য শৈল্পিক উপস্থাপনের মাধ্যমে মানুষের সমর্থন আদায় করেন।
বিতর্কে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে করণীয়
- বিতর্কের বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা।
- নিজের কথা ও যুক্তিগুলো কাগজে টুকে রাখা।
- অন্যের বক্তব্যের দুর্বল অংশগুলো চিহ্নিত করা।
- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বক্তব্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও যুক্তি উপস্থাপন করা।
- নিজ দলের উপস্থাপিত বিষয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন বক্তব্য পরিহারে সতর্ক থাকা।
- বিতর্কের বিধিমালা মেনে বক্তব্য উপস্থাপন করা।
- প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করতে গিয়ে কোনো আক্রমণাত্মক বক্তব্য থেকে বিরত থাকা।
- প্রতিপক্ষ, সভাপতি বা মডারেটর, বিচারক, দর্শকসহ উপস্থিত সকলের দৃষ্টি যাতে বিতার্কিকের প্রতি নিবন্ধ থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা।
- চেহারা বা অবয়বে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস রাখা।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. কোনো বিষয় বা ঘটনার প্রয়োজনীয়তা-অপ্রয়োজনীয়তা, ভালো- মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, যৌক্তিকতা ইত্যাদি নিয়ে মত-দ্বিমত, পক্ষে- বিপক্ষে মতামতকে কী বলে?
উত্তর: সমালোচনা।
প্রশ্ন-২. কীসের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কথোপকথনের সুযোগ তৈরি হয়?
উত্তর: সমালোচনার।
প্রশ্ন-৩. বক্তব্য দেওয়ার সময় কী ধরনের বক্তব্য পরিহার করতে হবে?
উত্তর: আক্রমণাত্মক বক্তব্য।
প্রশ্ন-৪. বিতর্কের সবচেয়ে প্রাচীন ধারা কোনটি?
উত্তর: সনাতনি বিতর্ক।
প্রশ্ন-৫. সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত বিতর্ককে কী বলা হয়?
উত্তর: সংসদীয় বিতর্ক।
প্রশ্ন-৬. সংসদীয় বিতর্ক যিনি পরিচালনা করেন তাঁকে কী বলে?
উত্তর: স্পিকার।
প্রশ্ন-৭. কোন বিতর্ক ব্যক্তিকেন্দ্রিক?
উত্তর: বারোয়ারি বিতর্ক।
‘কত কাল ধরে’ রচনা সম্পর্কে আমার অভিমত লেখ।
‘কত কাল ধরে’ রচনায় বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের কিছু বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজবাস্তবতা, বাঙালির খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ ও প্রসাধনীর ব্যবহার এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। পাঠ শেষে আমার মনে হয়েছে, রচনাটিতে যে ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর কথা বলা হয়েছে, তা আরও সুনির্দিষ্ট হওয়ার প্রয়োজন ছিল।
‘মাঝি’ কবিতা সম্পর্কে আমার অভিমত লেখ।
‘মাঝি’ কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অনবদ্য শিশুতোষ-কবিতা। এ কবিতায় কবির দেশাত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। কবি বড়ো হয়ে মাঝি হতে চেয়েছেন। কারণ, তিনি বিদেশ-বিভুঁইয়ে না গিয়ে নিজ দেশের প্রকৃতি ও মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন। এখানে মা ও মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে, যা আমাকে কবিতাটি পাঠে অনুপ্রাণিত করেছে।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ বড় প্রশ্ন
প্রশ্ন-১. মনে করো, তুমি মিমি, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে’— এটা নিয়ে তোমার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তুমি এ কথার পক্ষে ও বিপক্ষে তোমার মতামত তুলে ধরো।
স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে
উত্তর: স্কুল থেকে যত বেশি বাড়ির কাজ দেওয়া হবে পড়াশোনা তত ভালো হবে:
পক্ষে যুক্তি:
১. বাড়ির কাজ বেশি দেওয়া হলে পড়ায় মনোযোগ বাড়বে।
২. শিক্ষার্থীরা অলস সময় কাটাতে পারবে না।
৩. বাড়ির কাজ বেশি হলে ব্যস্ততা বাড়বে, এতে মোবাইল ফোনে আসক্তি কমবে ও পড়াশোনা ভালো হবে।
৪. বাড়ির কাজ বেশি থাকলে শিক্ষার্থীরা অসৎ সঙ্গে জড়ানোর সুযোগ কম পাবে।
৫. বাড়ি কাজ বেশি থাকলে পড়ার মোট সময় বাড়বে, এতে অধিক সময় পড়া হবে।
বিপক্ষে যুক্তি:
১. পড়ালেখা ছাড়াও অবসরের প্রয়োজন আছে। বাড়ির কাজ বেশি থাকলে তা সম্ভব নয়।
২. বাড়ির কাজ বেশি থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বাড়বে। এতে পড়াশোনায় অনীহা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. কিছু বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সব বিষয়েই অধিক বাড়ির কাজ থাকলে কঠিন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা সৃষ্টি হতে পারে।
৪. বাড়ির কাজ বেশি থাকলে নিজস্ব অধ্যয়নের সুযোগ কম পাওয়া যায়। এতে কোনো বিষয় গুছিয়ে পড়ার সুযোগ কমে যায়।
৫. পড়ালেখা যেমন দরকারি, খেলাধুলাও তেমনি শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশের জন্য দরকারি। বাড়ির কাজ বেশি থাকলে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সময় পাবে না, এতে মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হয়ে পড়াশোনার আরও ক্ষতি হবে।
প্রশ্ন-২. মনে করো, তুমি হাসিব। মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপকারী ও ক্ষতিকর দুটি দিকই রয়েছে। তাই কলেজে ভর্তির আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত নয়- এ কথার পক্ষে ও বিপক্ষে তোমার মতামত ব্যক্ত করো।
কলেজে ভর্তির আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়
পক্ষে যুক্তি:
১. কলেজে ভর্তির আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সময় নষ্ট হতে পারে, এতে পড়াশোনা বিঘ্নিত হতে পারে।
২. কলেজে ভর্তির আগে একজন শিক্ষার্থীর বয়ঃসন্ধি কালের সময় চলে। এ সময় তারা ভালো-মন্দ বিচার করতে পারে না, ফলে যেকোনো সময় বড়ো বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। মোবাইল ফোন সেই ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৩. মোবাইল ফোনে অধিক সময় কাটানোর অভ্যাস তৈরি হলে সামাজিক যোগাযোগ কমে যেতে পারে শিক্ষার্থীর।
৪. কলেজে ভর্তির আগে হাতে মোবাইল ফোন পেলে মোবাইল ফোনে আসক্তি তৈরি হতে পারে, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেক কষ্ট হতে পারে শিক্ষার্থীর।
৫. মোবাইল ফোনের আসক্তি থেকে মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে, তাই কলেজে ভর্তির আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত নয়।
বিপক্ষে যুক্তি:
১. বর্তমানে স্কুলের অনেক ক্লাস মোবাইল ফোনে সম্পাদিত হয়, তাই কলেজের আগেই অনেক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনের প্রয়োজন হয়।
২. মোবাইল ফোন পাঠের সহায়ক হিসেবেও ভূমিকা পালন করে। তাই কলেজে ভর্তির আগেই ফোন প্রয়োজন হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে।
৩. বাবা-মায়ের তত্ত্বাবধানে ফোন ব্যবহার করলে মোবাইল ফোনের নেতিবাচক দিক এড়িয়ে যাওয়া যায়।
৪. মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে। এতে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকে।
৫. মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যাওয়ায় আমরা অনেক জরুরি সেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। যেমন- ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য নেওয়া যায়। তাই কলেজে ভর্তির আগে শিক্ষার্থীকে ফোন দেওয়া অনুচিত নয়।
প্রশ্ন-৩. মনে করো, তুমি আসিফ ও তোমার বন্ধু আতিক। বাংলা ভাষা নিয়ে তোমরা আলোচনা করছ। এখন ‘ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বই পড়ার চেয়ে নাটক, সিনেমা, কার্টুন ইত্যাদি দেখা বেশি কার্যকর’— এ কথার পক্ষে ও বিপক্ষে তোমার যুক্তিগুলো উপস্থাপন করো।
‘ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বই পড়ার চেয়ে নাটক, সিনেমা, কার্টুন ইত্যাদি দেখা বেশি কার্যকর’
পক্ষে যুক্তি:
(i) শোনা, বলা, পড়া, লেখা এই চার ধরনের ভাষা দক্ষতার প্রথম স্থান দেওয়া হয় শোনাকে। ভাষার দক্ষতা অর্জনে এটি জোগান (Input) হিসেবে বিবেচিত হয়। যা নাটক, সিনেমা, কাটুন ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জন করা যায়; বই পড়ার মাধ্যমে নয়।
(ii) সিনেমা, কার্টুন, নাটক প্রভৃতি দেখে ও শুনে ভাষাকে যেভাবে উপলব্ধি করা যায় বই পড়ে তা কখনোই সম্ভব নয়।
(iii) নাটক, সিনেমার ভাষা আমাদের ভাষার ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। বই পড়ে এই দক্ষতা অর্জন হয় না।
(iv) পড়ার তুলনায় দেখা ও শোনা যেহেতু মস্তিষ্কে বেশি সময় স্থায়ী হয়, তাই নাটক, সিনেমা দেখে বই থেকে অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে ভাষিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
(v) নাটক, সিনেমা, কার্টুন প্রভৃতি বক্তব্য পরিবেশনে যথার্থ স্বরক্ষেপণ ও দেহভঙ্গি প্রদর্শনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
বিপক্ষে যুক্তি:
(i) বই পড়ার মাধ্যমে ভাষার বিস্তৃত শব্দ ভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। অন্যদিকে নাটক, সিনেমা, কার্টুন ইত্যাদি মাধ্যমে বিস্তৃত শব্দ ভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায় না।
(ii) বইপড়া ভাষিক বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশক্তিকে উন্নত করে।
(iii) বইপড়া শব্দের উচ্চারণে আঞ্চলিকতার ত্রুটি কাটাতে কাজ করে।
(iv) বইপড়ার মাধ্যমে ভাষার ব্যাকরণগত পরিচয় মেলে যা নাটক, সিনেমা প্রভৃতিতে পাওয়া সম্ভব নয়।
(v) তাছাড়া বই পড়লে কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে।
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ – নাটক
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৭ম পরিচ্ছেদ – সাহিত্যের নান রূপ
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ – প্রশ্ন করতে শেখা
৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ এ সমালোচনা করতে শেখা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমালোচনা করতে শেখা এর সকল প্রশ্নোত্তর শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।