|

৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৭ম পরিচ্ছেদ – সাহিত্যের নান রূপ

৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৭ম পরিচ্ছেদ: সাহিত্য একটি বিস্তৃত পরিধির বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় সাহিত্যের বিশাল ভান্ডার ছড়িয়ে আছে। তবে এই বিশাল পরিধির সাহিত্য আবার নানা শাখা ও উপশাখায় বিভক্ত। সাহিত্যের রূপ বলতে আমরা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখাকে বুঝি। যেমন- কবিতা, নাটক, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি। আবার প্রতিটির কিছু শাখা-প্রশাখা আছে। আলোচ্য অনুচ্ছেদে সাহিত্যের এসব রূপের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে। কবিতা, ছড়া, গান, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক ইত্যাদি উপ-শিরোনামে অনুচ্ছেদটিতে প্রতিটি রূপের বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে।

পাঠ বিশ্লেষণ

পাঠের উদ্দেশ্য: সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা এবং এগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা।
নামকরণ: পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা তথা রূপ সম্পর্কে একটি সাম্যক ধারণা লাভ করবে। সে হিসেবে পরিচ্ছেদটির নাম ‘সাহিত্যের নানা রূপ” রাখা যথার্থ হয়েছে।
ভাষা: রচনাটি প্রমিত ভাষারীতিতে রচিত।


সাহিত্যের রূপ

কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধের মতো বিভিন্ন শাখার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে সাহিত্য-জগৎ। সাহিত্যের রূপ বলতে আমরা সাহিত্যের এসব শাখাকে বুঝি । সাধারণভাবে সাহিত্যকে গদ্য, পদ্য ও নাটক এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য-আঙ্গিককেই সাহিত্যের বিভিন্ন রূপ বলে অভিহিত করা হয়। তবে কবিতা, ছড়া, গান বা নাটক সাহিত্যের অন্তর্গত হলেও প্রতিটি রূপেরই রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।

কবিতা

কবতিা হলো ছন্দোবদ্ধ রচনা – যা একজন কবির আবেগ-অনুভূতি, উপলব্ধি ও চিন্তার সংক্ষিপ্ত রূপ।

ছড়া

ছড়া হলো এক ধরনের লঘু প্রকৃতির কবিতা। ছড়ার বর্ণনার ধরন সাধারণত সহজ-সরল হয়। সাহিত্যের এ শাখাটি মূলত শিশুদের উদ্দেশ করে, তাই ছড়ার ভাষা এবং ভাব সহজ-সরল হওয়ার পাশাপাশি এর পরিধিও কম হয়ে থাকে। কবিতার মতো হলেও ছড়ার কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

গান

গান হচ্ছে নির্দিষ্ট সুর, তাল ও লয়ে উচ্চারিত ছন্দোবদ্ধ রচনা বা সংগীত। গানে পরপর দুই লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে। লাইনগুলো সুর করে এবং তালে তালে গাওয়া হয়। সুরই হলো গানের প্রাণ। ছন্দোবদ্ধ ভাষা বা পদ্যভাষায় গান লেখা হয়।

গল্প

গল্প কথাসাহিত্যের এমন একটি বিশেষ রূপ, যা দৈর্ঘ্যে ছোটো এবং একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। গল্প হলো কোনো কাল্পনিক বা বাস্তব ঘটনার বর্ণনা, যা লেখক ভাষায় প্রকাশ করে লিপিবদ্ধ করে। গল্পের কাহিনি নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে গদ্য-ভাষায় লিখিত হয়। সেই কাহিনিকে প্রকাশ করার জন্য কিছু চরিত্র থাকে। গল্পের চরিত্রগুলো অভিনয় করা যায়। গল্প কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে এবং চরিত্রের প্রয়োজনে মাঝে মাঝে সংলাপ থাকে। গল্পের কাহিনি সাধারণত বর্ণনানির্ভর হয়।

প্রবন্ধ

গদ্যভাষায় কোনো বিষয়ের সুবিন্যস্ত আলোচনাকে প্রবন্ধ বলে। অর্থাৎ, প্রবন্ধ হলো কোনো বিষয়ে যুক্তিপূর্ণ রচনা। প্রবন্ধে মূলত কোনো বিষয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। লেখকের সুচিন্তিত মতামত অর্থাৎ যে বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা হয়, লেখক সেই বিষয়ের আলোচনা-সমালোচনা সুচারুরূপে ব্যক্ত করেন। প্রবন্ধ কতকগুলো অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে। প্রতিটি অনুচ্ছেদই পরস্পরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও সম্পর্কযুক্ত থাকে। প্রবন্ধের বিষয় সম্পর্কে শুরুতে ইঙ্গিত এবং শেষে লেখকের মতামত থাকে।

নাটক

মঞ্চে অভিনেতা-অভিনেত্রীর সাহায্যে মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা যখন সংলাপের মাধ্যমে দর্শকের সামনে উপস্থিত করা হয়, তখন তাকে নাটক বলে। অন্যকথায়, রঙ্গমঞ্চে অভিনয়ের উপযোগী করে যে সাহিত্য রচিত হয়, তাকে নাটক বলে। সংলাপকে নাটকের প্রাণ বলা হয়। একটি আদর্শ নাটকে পাঁচটি অঙ্কে থাকে।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন-১. কবিতা, ছড়া, গল্প, প্রবন্ধের মতো বিভিন্ন শাখার সমন্বয়ে কোনটি তৈরি হয়েছে।
উত্তর: সাহিত্য জগৎ।

প্রশ্ন-২. সাহিত্যকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর: তিন ভাগে।

প্রশ্ন-৩. সাহিত্যের যে শাখায় কবিভাবনার ছন্দময় প্রকাশ ঘটে, তাকে কী বলে?
উত্তর: কবিতা।

প্রশ্ন-৪. ছড়ার ভাষা এবং ভাব কেমন হয়?
উত্তর: সহজ-সরল।

প্রশ্ন-৫. নির্দিষ্ট সুর, তাল ও লয়ে উচ্চারিত ছন্দোবদ্ধ রচনাকে কী বলে?
উত্তর: গান।

প্রশ্ন-৬. বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনাকে জড়িয়ে কী রচিত হয়?
উত্তর: গল্প।

প্রশ্ন-৭. ‘গল্প’ শব্দটি সংস্কৃত কোন শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর: ‘জল্প’।

প্রশ্ন-৮. কোনটির মূল উদ্দেশ্য থাকে পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা?
উত্তর: প্রবন্ধের।


৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৭ম পরিচ্ছেদ বড় প্রশ্ন

প্রশ্ন ০১: ‘কবিতা ও ছড়ার মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি’— বক্তব্যটির সঙ্গে কি তুমি একমত? যদি তাই হয়, তবে কীভাবে তা লেখো।
উত্তর: কবিতা ও ছড়ার মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি’ বক্তব্যটির সঙ্গে আমি একমত। কবিতা ও ছড়া প্রায় অভিন্ন দুটি সাহিত্যকর্ম। এগুলোর মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত অনেক মিল রয়েছে। এগুলোর সম্পর্ক অনেকটা সহোদর ভাই-বোনের মতো। কবিতা ও ছড়া উভয়ই মিল-শব্দের ব্যবহারে লিখতে হয়। লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে।

কবিতার মতো ছড়াতেও শব্দরূপের পরিবর্তন হয়। কবিতা তাল দিয়ে পড়া যায়। এই তাল কখনো ধীরগতিতে পড়ে, কখনো দ্রুতগতিতে পড়ে। আবার কোনো কবিতায় তাল একেবারেই থাকে না। তবে ছড়া অবশ্যই ঘন ঘন তাল দিয়ে পড়তে হয়। কবিতা ও ছড়া উভয়ই পদ্যভাষায় রচনা হয়। ওপরের আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, কবিতা ও ছড়ার মধ্যে পার্থক্যের চেয়ে মিলই বেশি।

প্রশ্ন ০২: গানের সঙ্গে কবিতার মিল-অমিলগুলো চিহ্নিত করো।
উত্তর: বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য দুটি শাখা হলো গান ও কবিতা। এ দুটি শাখার মধ্যে যেমন মিল রয়েছে, অমিলও তেমনি লক্ষণীয়। সাহিত্যের যে শাখায় কবি-ভাবনার ছন্দময় প্রকাশ ঘটে, তা-ই কবিতা। অন্যদিকে, গান হলো, মানুষের আবেগ প্রকাশের শুদ্ধতম মাধ্যম। গান হলো সুর করে গাওয়া কথা, যার মাধ্যমে বিশেষ কোনো আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়।

অপরদিকে, কবিতা সুর করে পাঠ করা হয় না তবে এর মাধ্যমে কবির ভাবাবেগ পূর্ণাঙ্গরূপে প্রকাশিত হয়। কবিতার ভাষাকে সুন্দর করার জন্য ছন্দ ও মিলের ব্যবহার করা হয়। গানের ক্ষেত্রেও ছন্দ ও মিলের ব্যবহার করা হয়। গানে সুর আবশ্যক হলেও কবিতায় সুর অনাবশ্যক। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বর্জনীয়। কবিতা ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত থাকে, যাকে স্তবক বলে। অপর দিকে গান চারটি অংশে বিভক্ত থাকে, যথা- স্থায়ী, অন্তরা, স্যারী, আভোগ। যাঁরা কবিতা লেখেন, তাঁদের কবি বলা হয় এবং যাঁরা গান লেখেন, তাঁদের গীতিকার বলা হয়। গীতিকারেরা গানের কথাকে কবিতার মতো করে লেখেন।

প্রশ্ন ০৩: নিচের ছড়াটিতে ছড়ার সকল বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে কি? বর্ণনা করো।

পালকি চলে!
পালকি চলে!
গগন তলে
আগুন জ্বলে!
স্তব্ধ গায়ে
আদুল গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা!

উত্তর: আমরা জানি, ছড়ায় লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে, আলোচ্য ছড়াটিতেও লাইনের শেষে মিল-শব্দ রয়েছে। ছড়ায় সাধারণত শব্দরূপের পরিবর্তন হয়, ঘন ঘন তাল দিয়ে পড়ার উপযোগী করে লেখা হয়। এ ছড়াতেও এই বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে। ছড়ার আয়তন সাধারণত ছোটো হয়, লাইনগুলোও আকারে ছোটো হয়। এ ছড়াটিও আয়তনে ছোটো এবং এর লাইনগুলো খুবই ছোটো। তাই বলা যায়, ওপরের ছড়াটিতে ছড়ার সকল বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রশ্ন ০৪: নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো। এটি কোন ব্রনের সাহিত্যরূপ? যুক্তি দাও।
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয়তি বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো ঢাকায় বেড়াতে এসেছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাবা-মা ওকে নিয়ে যান কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সে-ও ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। বাবার কাছে ভাষাশহিদদের আত্মত্যাগের কথা শুনে গর্বে মনটা ভরে ওঠে প্রিয়তির।

উত্তর: ওপরের অনুচ্ছেদটি হলো গল্প। আমরা জানি, গল্পে কাহিনি ও চরিত্র থাকে, এখানেও একটি ছোটো কাহিনি রয়েছে। গল্পের আয়তন ছোটো হয়, একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয় ও কোনো শাখাকাহিনি বা উপকাহিনি স্থান পায় না। এই অনুচ্ছেদটিও ছোটো, একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে এটি আবর্তিত হয়েছে ও কোনো শাখাকাহিনি বা উপকাহিনি নেই।

গল্পে চরিত্রের সংখ্যা অনেক হবে না, এখানেও মাত্র তিনটি চরিত্র রয়েছে। গল্পে পুরো জীবনের ঘটনা উঠে আসবে না, টুকরো কোনো ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা হবে। এই অনুচ্ছেদেও এই বৈশিষ্ট্য রক্ষিত হয়েছে। ওপরের যুক্তিগুলো থেকে দেখা যায়, গল্পে যেসব বৈশিষ্ট্য থাকে, ওপরের অনুচ্ছেদেও সেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই বলা যায়, অনুচ্ছেদটি একটি গল্প।

প্রশ্ন ০৫: নিচের কাব্যাংশটি পড়ো। এটি কবিতা না ছড়া? যুক্তিসহ লেখো।

আমার বাড়ি যাইও ডোমর,
বসতে দেবো পিঁড়ে,
জলপান যে করতে দেবো
শালি ধানের চিড়ে।
শালি ধানের চিড়ে দেবো,
বিন্নি ধানের খই,
বাড়ির গাছের কবরী কলা,
গামছা-বাঁধা দই।

উত্তর: ওপরের কাব্যাংশটি একটি কবিতা। কবিতার বাক্যগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। ওপরের কাব্যাংশটিও নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যসম্পন্ন। কবিতার ভাষাকে সুন্দর করার জন্য ছন্দ ও মিলের ব্যবহার করা হয়, এখানেও ছন্দ ও মিলের ব্যবহার করা হয়েছে। কবিতা পদ্য ভাষায় লেখা হয়, এটিও পদ্য- ভাষায় লেখা হয়েছে। কবিতায় মিল-শব্দ থাকে এবং শব্দ-রূপের পরিবর্তন হয়। এখানেও মিল-শব্দ আছে এবং শব্দ-রূপের পরিবর্তন হয়েছে। তাল রেখে পড়ার ব্যাপারটি কবিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই কাব্যাংশও তালে তালে পড়া যায়। তাই বলা যায়, কাব্যাংশটি একটি কবিতা।


আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ – নাটক


৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৭ম পরিচ্ছেদ এ সাহিত্যের নান রূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির বাংলা ৭ম অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ সাহিত্যের নান রূপ এর সকল প্রশ্নোত্তর শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।