৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ – নাটক
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ: এ পরিচ্ছেদে সাহিত্যের অন্যতম রূপ নাটক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সহজভাবে বললে, সংলাপনির্ভর রচনাকে নাটক বলে। নাটক বিশ্ব সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন সাহিত্যরূপ। এতে নির্দিষ্ট একটি কাহিনি থাকে। এই কাহিনিকে কেন্দ্র করেই নাটক অগ্রসর হয় এবং ধীরে ধীরে পরিণতি লাভ করে। সাধারণভাবে পাঠ করা গেলেও নাটক লিখিত হয় অভিনয়ের উদ্দেশ্যেই। এজন্য নাটককে এক বা একাধিক ভাগে ভাগ করা হয়। এমন একেকটি ভাগকে বলা হয় দৃশ্য। আলোচ্য ‘সেই ছেলেটি’ নাটকে এমন মোট তিনটি দৃশ্য রয়েছে।
নাট্যকার সম্পর্কিত তথ্য
মামুনুর রশীদ ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ওরা কদম আলী’, ‘এখানে নোঙর’, ‘মানুষ’ ইত্যাদি।
সেই ছেলেটি নাটকের মূলবক্তব্য
আলোচ্য ‘সেই ছেলেটি’ নাটকে এমন মোট তিনটি দৃশ্য রয়েছে। এছাড়া আরজু, সাবু, আইসক্রিমওয়ালার মতো বেশ কিছু চরিত্র রয়েছে। এই চরিত্রগুলোকে অবলম্বন করে সংলাপের মধ্য দিয়ে নাটকটি অগ্রসর হয়েছে।
পাঠ বিশ্লেষণ
পাঠের উদ্দেশ্য: সাহিত্যের অন্যতম শাখা হিসেবে নাটক সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং নাট্যচর্চায় পারদর্শী করে তোলা।
নামকরণ: পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নাটক সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাবে। সে হিসেবে পরিচ্ছেদটির নাম ‘নাটক’ রাখা যথার্থ হয়েছে।
ভাষা: রচনাটি প্রমিত ভাষারীতিতে রচিত।
নাটক
সংলাপ-নির্ভর রচনাকে নাটক বলা হয়। মঞ্চে অভিনীত হয় বলে একে দৃশ্যকাব্যও বলা হয়। নাটকে একটি কাহিনি থাকে, যা ধীরে ধীরে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। নাটকের এক একটি অংশকে দৃশ্য বলা হয়। যাদের ঘিরে নাটকের কাহিনি আবর্তিত হয় তাদের চরিত্র বলে। শ্রেণিবিন্যাস বিবেচনায় নাটককে ধ্রুপদি, রোমান্টিক, কাব্যধর্মী, সামাজিক, ঐতিহাসিক, পৌরাণিক, একাঙ্কিকা ইত্যাদি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। বাংলা নাট্যসাহিত্যের পরিধি ব্যাপক। উল্লেখযোগ্য নাট্যকারের মধ্যে রয়েছেন— মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দিজেন্দ্রলাল রায় ও অমৃতলাল বসু প্রমুখ।
নাটকের বৈশিষ্ট্য
সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো নাটকেরও বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এসব বৈশিষ্ট্যের নিরিখেই নাটক পূর্ণতা লাভ করে। এগুলো হলো—
- নাটক হবে সংলাপধর্মী। অর্থাৎ, সংলাপের মধ্য দিয়েই নাটকের কাহিনি অগ্রসর হবে।
- নির্দিষ্ট ঘটনা বা কাহিনিকে কেন্দ্র করে নাটক রচিত হবে।
- নাটকের কাহিনিতে একাধিক উপকাহিনি বা ছোটো ছোটো ঘটনা থাকতে পারে; এগুলোকে ‘দৃশ্য’ বলা হয়।
- নাটক সাধারণত গদ্যে লিখিত হয়। এতে কথ্যভাষার প্রয়োগই বেশি হয়।
- নাটককে অবশ্যই অভিনয় উপযোগী হতে হবে।
- সংলাপ বলার জন্য নাটকে বিভিন্ন চরিত্র থাকে।
- একটি আদর্শ নাটকে পাঁচটি অঙ্ক থাকবে।
- নাটকের প্রধান উপাদান চারটি। এগুলো হলো— ক. কাহিনি; খ. চরিত্র; গ. সংলাপ ও ঘ. ঘটনা-সমাবেশ।
নাটক লেখার কিছু কৌশল
নাটক লেখার বেশ কিছু কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো জেনে রাখলে নাটক রচনা অনেকটা সহজতর হতে পারে। এগুলো হলো-
- প্রথমে নাটক রচনার বিষয় নির্ধারণ করতে হবে।
- নাটকের চরিত্রগুলোর মুখে সংলাপ থাকতে হবে।
- নাটক রচনার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন তা মঞ্চে অভিনয় করার উপযোগী হয়।
- নাটকে কাহিনি থাকতে হবে।
- একাধিক অঙ্কে ও দৃশ্যে ভাগ করে লিখতে হবে।
- নাটক একই সঙ্গে দেখা ও শোনার বিষয়। ফলে নাটক রচনার সময় এই ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন-১. নাটক রচনার সময় কোন বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তর: এটি যেন মধ্যে অভিনয়ের উপযোগী হয়।
প্রশ্ন-২. কীসের মধ্য দিয়ে নাটকের কাহিনি অগ্রসর হয়?
উত্তর: সংলাপের মধ্য দিয়ে।
প্রশ্ন-৩. নাটককে কোন বিষয়ের উপযোগী হতে হয়?
উত্তর: অভিনয়ের।
প্রশ্ন-৪. একটি আদর্শ নাটকে কয়টি অঙ্ক থাকে?
উত্তর: পাঁচটি অঙ্কে থাকে।
প্রশ্ন-৫. নাটকের প্রধান উপাদান কয়টি?
উত্তর: চারটি।
প্রশ্ন-৬. সংস্কৃত আলংকারিকগণ নাটককে কোন ধরনের সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করেছেন?
উত্তর: কাব্যসাহিত্য হিসেবে।
সেই ছেলেটি নাটক থেকে প্রশ্নোত্তর
১. সেই ছেলেটি নাটকে যেসব চরিত্র আছে, তাদের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখো।
উত্তর: সেই ছেলেটি নাটকের চরিত্রগুলো ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:
সাবু: আরজুর বন্ধু, আরজুর সঙ্গে স্কুলে যায়।
আরজু: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের মূল চরিত্র। তার একটি পা অস্বাভাবিক চিকন। তাই সে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারে না। রোজই সে দেরি করে স্কুলে পৌছায়।
আইসক্রিমওয়ালা: স্কুলের গেটে আইসক্রিম বিক্রি করেন।
হাওয়াই মিঠাইওয়ালা: হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন।
লতিফ স্যার: আরজুর স্কুলের শিক্ষক। আরজু রোজ দেরি করে স্কুলে আসে বিধায় তিনি আরজুকে নিয়ে চিন্তিত হন।
সোমেন: আরজুর বন্ধু, তারা একসঙ্গে স্কুলে যায়।
মিঠু: আরজুর স্কুলের সহপাঠী।
২. ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটির কাহিনি প্রথমে গল্পের মতো করে বলো, তারপর লেখো।
উত্তর: গ্রামের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে সোমেন, সাবু ও আরজু। সবাই গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে, হঠাৎ থেমে যায় আরজু, সোমেন ও সাবু ওকে খেয়াল না করেই এগিয়ে যায়। সাবু যখন বুঝতে পারে, তখন ফিরে আসে। আরজু রোজ দেরি করে পৌছায় বলে স্যারের বকুনি খায়। আজও একই ঘটনা ঘটবে ভেবে আরজুকে পেছনে রেখেই তারা এগিয়ে যায়। সাবু চলে গেলে বসে পড়ে আরজু। এমন সময় পাশ দিয়ে একজন আইসক্রিমওয়ালা যায়।
তিনি আরজুকে বলেন, স্কুল ফাঁকি দেওয়া খুব খারাপ, পড়ালেখা করলে আজ তাকে আইসক্রিম বিক্রি করতে হতো না। আরজু তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, তিনি স্কুলের দিকে যাবেন কি না। কিন্তু আইসক্রিমওয়ালা জবাব দেন যে, তিনি এখন বাজারের দিকে যাবেন। ক্লাস চলে যখন, তখন আইসক্রিম বিক্রি হয় না। এরপর একজন হাওয়াই মিঠাইওয়ালার সঙ্গে আরজুর দেখা হয়। আরজুর সঙ্গে কথা বললে মিঠাইগুলো বাতাসে মিলিয়ে যাবে, তাই তিনিও চলে যান। একা হয়ে পড়ে আরজু। এদিকে টিফিনের ঘণ্টা পড়লে লতিফ স্যার সাবুকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন আরজুকে দেখেছ কি না।
সাবু পুরো ঘটনার বিবরণ দিলে স্যারকে চিন্তিত দেখায়। তাঁর সন্দেহ হয় যে আরজু ইচ্ছা করে এমন করছে কি না। তখন মিঠু বলে যে আরজুর সঙ্গে তার পলাশতলীর আমবাগানে দেখা হয়েছে। সেখানে আরজু বসে আছে। তখন লতিফ স্যার, সাবু, সোমেন আর মিঠুকে নিয়ে আরজুকে খুঁজতে যান। আরজু তখন মন খারাপ করে বসে আছে। বাড়িতে ফিরে গেলেও বাবা রকবেন, আর স্কুলে গেলে শিক্ষক।
একা একা বসে একটি চন্দনা পাখির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে সে। একটু পরে ছোটো পাখি চন্দনাও উড়ে চলে গেলে আরজু আরও অসহায় হয়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে সে। এমন সময় লতিফ স্যার উপস্থিত হন সেখানে। আরজুকে জিজ্ঞেস করেন সে কাঁদছে কেন? আরজু তখন জবাব দেয় কিছুক্ষণ হাঁটলেই তার পা দুটি অবশ হয়ে আসে। আরজু তার বাবা-মাকে জানিয়েছে কি না, তা জিজ্ঞেস করেন লতিফ স্যার। আরজু বলে তার বাবা বলেছেন হাঁটাহাঁটি করলে ঠিক হয়ে যাবে। আর মা শুধু কাঁদেন।
স্যার তখন আরজুর পা দুটো দেখে নিলেন। তার একটি পা চিকন। স্যার বললেন, এটা কোনো রোগের লক্ষণ। লতিফ স্যার তখন আরজুর বন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কোনো খেয়াল করেনি, তাদের যদি এমন হতো, তখন তারা বলল, তারা বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারলে আরজুকে নিয়ে যেত, এই বলে আরজুকে তারা কাঁধে তুলে নিল। স্যার তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে কোথায় যেতে চায় বাড়িতে না স্কুলে। আরজু বলল সে স্কুলে যেতে চায়, বন্ধুদের কাঁধে ভর দিয়ে আরজু তখন স্কুলে গেল। লতিফ স্যার বললেন, ‘চলো, দেখি তোমার চিকিৎসার কী ব্যবস্থা করতে পারি।
৩. ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের সঙ্গে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো।
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের বিষয়বস্তু আমার চারপাশের পরিবেশের একটি পরিচিত ঘটনা। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা লেখাপড়ায় অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকে। তখন কোনো শিক্ষকের সহায়তায় তারা তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠে।
‘সেই ছেলেটি’ নাটকের লতিফ স্যার চরিত্রের মাধ্যমে আমরা সেই ঘটনার কাল্পনিক বহিঃপ্রকাশই দেখতে পাই। এছাড়া কখনো কখনো আমাদের শিশুদের কোনো সমস্যা হলে বাবা-মা বুঝতে পারেন না, মায়েরা বুঝতে পারলেও অনেক সময় অসহায় থাকেন যা আরজুর বাবা-মায়ের চরিত্রে ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশে অনেক শিশুই ছোটোবেলায় টিকা না নেওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। সেই ছেলেটি’ নাটকেও আরজু ছোটোবেলা থেকেই একটি রোগে আক্রান্ত। নাটকে আমাদের সামাজিক জীবনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সেই ছেলেটি’ নাটকও তার ব্যতিক্রম নয়। এই নাটকের সঙ্গে আমার চারপাশের অনেক ঘটনারই মিল আছে।
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ বড় প্রশ্ন
প্রশ্ন ০১: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি পড়ে বুঝে নিয়ে দুটি দলে ভাগ হও। এরপর নাটকটি কেমন বুঝতে পেরেছ তা যাচাই করার জন্য একদল আরেক দলকে নিচের প্রশ্নগুলো করো এবং উত্তর দাও।
ক. ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের ঘটনাটি শহরের নাকি গ্রামের?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের ঘটনাটি গ্রামের।
খ. স্কুলে যাওয়ার পথে সঙ্গীরা আরজুকে ফেলে যায় কেন?
উত্তর: আরজুর পায়ে ব্যথা তাই সে বসে পড়ে, আর দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে ক্লাসে যোগ দিতে সবাই আরজুকে ফেলে চলে যায়। কেননা, আরজুর জন্য রোজ রোজ ওদের দেরি হয় এবং বকুনি খেতে হয়।
গ. আইসক্রিমওয়ালার সঙ্গে আরজুর কী নিয়ে কথা হয়?
উত্তর: আইসক্রিমওয়ালার সাথে আরজুর স্কুলে যাওয়া ও আইসক্রিমওয়ালার স্কুল ফাঁকি দেওয়া নিয়ে কথা হয়। আর কথা হয় আইসক্রিম বিক্রি নিয়ে।
ঘ. হাওয়াই মিঠাইকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: হাওয়াই মিঠাইকে মেঘের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
ঙ. আরজুর পা ব্যথার কারণ কী?
উত্তর: ছোটোবেলায় আরজুর অসুখ হয়েছিল, তখন থেকে পাগুলো চিকন হয়ে আছে। কিছু পথ হাঁটলে অবশ মনে হয়।
চ. পাখি ও মেঘের কাছে আরজু কী আবদার করেছিল?
উত্তর: পাখি ও মেঘের কাছে আরজু আবদার করেছিল, তারা যেন তাকে স্কুলে পৌছে দেয়।
ছ. কখন আরজুর সঙ্গীদের ভুল ভাঙল?
উত্তর: যখন সঙ্গীরা জানতে পারল আরজুর পা দুটো চিকন, আর সে একটা রোগে ভুগছে।
জ. এই নাটকে লতিফ স্যার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র কেন?
উত্তর: লতিফ স্যারের মাধ্যমেই আরজুর সঙ্গীদের এতদিনের ভুল ভাঙে; তারা জানতে পারে, তাদের বন্ধু আরজু রোগে ভুগছে। এছাড়া তিনি আরজুর চিকিৎসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন ০২: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি মধ্যায়নের জন্য নির্দেশক হিসেবে কাকে নির্বাচন করবে এবং কেন?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি মঞ্চায়নের জন্য নির্দেশক হিসেবে আমি আমাদের ক্লাসের সলিলকে নির্বাচিত করব। এর কারণ, সলিলের কবিতা, নাটক ইত্যাদি রচনার অভিজ্ঞতা আছে। সলিল যেকোনো অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিলে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারে। নাটক সম্পর্কে সলিলের যথাযথ ধারণা আছে। তাই আমার মনে হয়, সলিল নির্দেশকের কাজটি ভালোভাবে করতে পারবে।
প্রশ্ন ০৩: নাটক কী? নাটকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: নাটক: নাটক হলো এক ধরনের সংলাপধর্মী সাহিত্য, যা সংলাপের মাধ্যমে মানবজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেয় ও মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদির দর্পণ হিসেবে কাজ করে। নাটক সাধারণত শুধু পড়ার জন্য লিখিত না হয়ে মঞ্চায়নের উদ্দেশ্যে লিখিত হয়।
নাটকের বৈশিষ্ট্য:
i. একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা কাহিনি থাকবে।
ii. নাটকের কাহিনিতে একাধিক উপকাহিনি থাকতে পারে।
iii. নাটক অবশ্যই সংলাপধর্মী হবে।
iv. নাটক সাধারণত গদ্যে লিখিত হয়। তবে পদ্য-ভাষাতেও নাটক লিখিত হতে পারে।
v. নাটকে বিভিন্ন চরিত্র থাকবে।
vi. নাটকের প্রধান উপাদান চারটি। যথা— ক. কাহিনি, খ, চরিত্র, গ. সংলাপ এবং ঘ. ঘটনা সমাবেশ।
vii. নাটকের কাহিনি সংলাপের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
প্রশ্ন ০৪: নাট্যকার বলা হয় কাদের? নাট্যকারেরা কীভাবে নাটক লেখেন?
উত্তর: নাট্যকার: যিনি নাটক রচনা করেন, তাঁকে নাট্যকার বলে। নাটকের মাধ্যমে একজন নাট্যকার সমাজের চালচিত্র দর্শক ও পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন।
নাট্যকার যেভাবে নাটক লেখেন: একজন নাট্যকার নাটক লেখার সময় প্রথমে একটি বিষয় নির্ধারণ করেন। কাহিনির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নাটকের চরিত্র বিন্যাস করেন। নাটকের কিছু উপকাহিনি থাকে, যাকে দৃশ্য বলে। নাট্যকার সংলাপের সৃষ্টি করে সেই দৃশ্যগুলো লিখে থাকেন। নাট্যকার শুধু নাটক লেখাই নয়; বরং নাটকে অভিনয়ের সময় সেই দৃশ্যগুলো কেমন হবে তা নির্ধারণ করেন। এভাবে নানা ঘটনা দৃশ্যায়নের উপযোগী করে লিখে কাহিনির বিন্যাস ঘটিয়ে নাট্যকার নাটক রচনা করেন।
প্রশ্ন ০৫: একটি সফল নাটক ম্যায়নের পেছনে কাদের অবদান থাকে? গুছিয়ে লেখো।
উত্তর: একটি সফল নাটক মঞ্চায়নের পেছনে অনেক কৌশল থাকে। নাটকের সফল মধ্যায়নের পেছনে যাদের অবদান থাকে, নিচে তাঁদের বর্ণনা দেওয়া হলো।
i. নাট্যকার: নাটক মঞ্চায়নের পেছনে প্রধান অবদান থাকে নাট্যকারের। নাট্যকারের কল্পনায় দৃশ্যগুলো যেভাবে রচিত হয়, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে মঞ্চে। তাই নাটকের সফলতা নাট্যকারের ওপরই বেশি নির্ভরশীল।
ii. নির্দেশক: নির্দেশক নাটকটি মঞ্চে কীভাবে অভিনীত হবে তার নির্দেশ দেন। সাধারণত নির্দেশকের স্বাধীনতা থাকলে সফল মঞ্চায়নের জন্য তাঁকে নাট্যকারের পরামর্শ নিতে হয়।
iii. অভিনয়শিল্পী: নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের অভিনয় যদি দুর্বল হয়, তবে নাটককে সফল বলা যায় না। তাই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয় দক্ষতা একটি নাটকের সফল মঞ্চায়নের জন্য জরুরি।
iv. কলাকুশলী: এই তিন শ্রেণির মানুষ ছাড়াও নাটক মধ্যায়নের পেছনে অনেক কলাকুশলী কাজ করেন। যেমন কেউ আলো নিয়ে কাজ করেন, কেউ শব্দ নিয়ে কাজ করেন। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই একটি নাটকের সফল মধ্যায়ন ঘটে।
প্রশ্ন ০৬: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকে নাটকের সকল বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা হয়েছে কি? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ একটি সংলাপনির্ভর রচনা। যাতে বিভিন্ন দৃশ্যের অবতারণা করে সংলাপের মাধ্যমে কাহিনিকে এগিয়ে নেওয়া হয়েছে ও পূর্ণতা দান করা হয়েছে। আরজু যখন স্কুলে যাচ্ছে, সেই দৃশ্যটি আরজু ও সাবুর সংলাপ রয়েছে। সাবু চলে গেলে অন্য একটি দৃশ্যে আবির্ভূত হয়েছেন একজন আইসক্রিমওয়ালা।
এভাবে রচনাটিতে চরিত্র সংযোজন করা হয়েছে এবং চরিত্রগুলোর সংযুক্তি প্রাসঙ্গিক। রচনাটিতে কোন দৃশ্যে কেমন আবহ, তার বর্ণনা দিয়ে একে মধ্যে অভিনয়ের উপযোগী করে লেখা হয়েছে। নাটকের প্রধান চারটি উপাদান, যথা: কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ ও ঘটনা সমাবেশ এই নাটকে সুচারুরূপে বিদ্যমান। সব দিক বিবেচনা করে দেখা যায়, সেই ছেলেটি’ একটি নাটকের সকল বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ০৭: তুমি ও তোমার বন্ধুরা ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপন্যাপনে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে পারো?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটক উপস্থাপনের জন্য আমরা নাটকটি। মধ্যায়নের ব্যবস্থা করতে পারি। এক্ষেত্রে প্রথমে একজন নির্দেশক নির্বাচন করতে হবে। নির্দেশকের পরামর্শক্রমে উপযোগী সামগ্রী সংগ্রহ করে মঞ্চ তৈরি করতে হবে। নির্দেশকই নাটকে অভিনয়ের জন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজে নেবেন। তারপর নির্দেশনা অনুসারে নাটক মঞ্চস্থ হবে। নাটকের মধ্যের বাইরে দর্শকদের জন্য বসার জায়গা থাকবে। সেখান থেকে তারা নাটকটি উপভোগ করতে পারবেন। এই কৌশল অবলম্বন করে ‘আমরা ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপস্থাপন করতে পারি।
প্রশ্ন ০৮: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপস্থাপনের জন্য কীভাবে মধ্য প্রস্তুত করবে?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপস্থাপনের জন্য আমরা কোনো একটি ঘর বেছে নেব। সেখানে বসার বেঞ্চগুলো পাশাপাশি সাজিয়ে একটি মঞ্চ বানাব। এরপর মঞ্চে উপযুক্ত আলোর আবহ তৈরি করতে পারে, এমন বাতির সরবরাহ করব। নাটকটিতে স্কুলে যাওয়ার পথের দৃশ্য রয়েছে এবং স্কুলের ও পলাশতলীর আমবাগানের দৃশ্য রয়েছে। এই তিনটি পরিবেশ অবলম্বনে তিনটি আঁকা দৃশ্যপট মঞ্চের দেয়ালে টানানো হবে, যখন যে দৃশ্যে অভিনয় হবে, তখন সেই দৃশ্যের ওপর আঁকা ছবি মঞ্চের দেয়ালে থাকবে। মঞ্চ প্রস্তুতের পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখব, যাতে করে অভিনয়শিল্পীদের আওয়াজ দর্শকসারিতে পৌছায়।
প্রশ্ন ০৯: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটিতে অভিনয়ের জন্য তোমার কোন কোন সহপাঠীকে নির্বাচন করবে এবং কেন?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকে অভিনয়ের জন্য আমি ‘লতিফ স্যার’ চরিত্রের জন্য আমাদের সহপাঠী কামালকে প্রথমে বেছে নেব। সে চরিত্রটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবে। ‘আরজু’ চরিত্রের জন্য আমি বেছে নেব আমাদের মুহিবকে। ছোটোবেলায় পোলিও হওয়ার কারণে ওর একটি পা কিছুটা বাঁকা ও চিকন হয়ে যায়।
ওর এই রোগের কারণে ‘আরজু’ চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারবে বলে মনে হয়। সাবু চরিত্রে থাকবে মুহিবের বন্ধু আল- আমিন। সোমেন ও মিঠু চরিত্রে আমি বেছে নেব যথাক্রমে আবির ও শিপলুকে। আবির ও শিপলু ভালো অভিনয় করে। আইসক্রিমওয়ালা ও হাওয়াই মিঠাইওয়ালা চরিত্রে থাকবে শাহীন ও দীপু।
প্রশ্ন ১০: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপস্থাপনের জন্য তোমরা কোন স্থানটি বেছে নেবে এবং দর্শক ও মূল্যায়নকারী হিসেবে কাদের নির্বাচন করবে?
উত্তর: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকটি উপস্থাপনের জন্য আমরা আমাদের স্কুলের অডিটোরিয়ামকে বেছে নেব। এর কারণ, অডিটোরিয়ামে যথেষ্ট আলোক সরবরাহ আছে এবং এর শব্দব্যবস্থাও চমৎকার। বাইরে থেকে আওয়াজ না আসায় সেখানে নির্বিঘ্নে নাটক মধ্যস্থ করা যাবে।
পাশাপাশি রোদ, ঝড়-বৃষ্টির চিন্তাও করতে হবে না। সেখানে দর্শকদেরও বসার জায়গা আছে। নাটকটির দর্শক হিসেবে আমরা সাধারণ মানুষকে বেছে নেব। কারণ, নাটকটি সাধারণ মানুষের দেখা প্রয়োজন। নাটকটির মূল্যায়নকারী হিসেবে আমরা আমাদের শিক্ষকমণ্ডলীকে বেছে নেব এবং দর্শক হিসেবে যাঁরা থাকবেন, তাঁরাও মূল্যায়ন করবেন।
আরও দেখুন: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায় এর প্রশ্নোত্তর
৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ এ নাটক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, এবং আমাদের আজকের আর্টিকেলে ৭ম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ নাটক এর সকল প্রশ্নোত্তর শেয়ার করা হয়েছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।