|

৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায় – গ্রাফটিং বা জোড়কলম

৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায়: বর্তমান যুগে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে প্রতিটি খাতে। কৃষিখাতও কোনো দিক থেকে পিছিয়ে নেই। আধুনিক কৃষিতে সংযোজিত হয়েছে গ্রাফটিং বা জোড়কলম। জোড়কলম হলো কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধির এক ধরনের প্রক্রিয়া যেখানে এক উদ্ভিদের শাখা কেটে নিয়ে অন্য উদ্ভিদে সংযোজন করা হয়।

বিভিন্ন উদ্ভিদের বাম্পার ফলন পেতে জোড়কলম করে গাছ লাগালে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের গ্রাফটিং বা জোড়কলমের বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অধ্যায়টি সাজানো হয়েছে। অধ্যায়টি পুরোপুরি পড়ার পরে একজন শিক্ষার্থী খুব ভালোভাবে জোড়কলম করতে পারবে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায়

কাজ ৩: গ্রাফটিং বা জোড়কলমের ধাপ কয়টি? ধাপসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: গ্রাফটিং বা জোড়কলমের ধাপ তিনটি। যথা-
১. আদিজোড় প্রস্তুতকরণ
২. উপজোড় প্রস্তুতকরণ।
৩. জোড়া লাগানো।

নিম্নে গ্রাফটিং বা জোড়কলমের ধাপসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. আদিজোড় প্রস্তুতকরণ:
ক. মাটি থেকে ১৫-২৫ সে.মি. উঁচুতে চারার যেকোনো একপাশে ৩-৫ সেন্টিমিটার লম্বা করে উপর থেকে নিচে তির্যকভাবে বাকলসহ কাঠের সামান্য অংশ ধারালো ছুরি দিয়ে কাটতে হবে।
খ. কর্তনকৃত ডালের নিচের অংশে “V” আকৃতির একটি পকেট তৈরি করতে হবে।

২. উপজোড় প্রস্তুতকরণ:
ক. উপজোড়ের জন্য ২-৩টি কুড়িসহ ডাল নির্বাচন করতে হবে।
খ. ধারালো ছুরি দিয়ে আদিজোড়ের কর্তন অংশের সমান করে (৩- ৫ সে.মি.) উপজোড়টি তৈরি করতে হবে।
গ. উপজোড়ের কর্তন অংশের পিছনে “V” আকৃতি করে দিতে হবে যাতে করে আদিজোড়ের কর্তন অংশের সাথে উপজোড়টি হুবহু মিলে যায়।

৩. জোড়া লাগানো:
ক. আদিজোড় ও উপজোড়ের কাটা অংশ মুখোমুখি করে মিলিয়ে এমনভাবে মিশাতে হবে যাতে ভিতরে কোনো ফাঁক না থাকে।
খ. এরপর পলিখিন টেপ দিয়ে শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
গ. উপজোড়টিকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

ঘ. ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই আদিজোড়ের সাথে উপজোড় জোড়া লেগে যাবে।
ঙ. উপজোড়ের কুঁড়ি ফুটে নতুন পাতা বের হবে।
চ. এ সময় পলিথিন খুলে দিতে হবে।
ছ. আদিজোড় ও উপজোড় জোড়া লেগে গেলে পেঁচানো পলিথিন টেপ ছিঁড়ে বা ব্লেড দিয়ে হালকা করে কেটে দিতে হবে। তবে বেশিরভাগ সময় এটা এমনিতেই ছিঁড়ে যায়।


৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায় কুইজ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। গ্রাফটিং-এর আরেক নাম কী?
উত্তর: জোড়কলম।

প্রশ্ন ২। জোড়কলমে কটি গাছ লাগবে?
উত্তর: দুটি।

প্রশ্ন ৩। যে গাছ থেকে ডাল নেওয়া হয় তাকে কী গাছ বলে?
উত্তর: মাতৃগাছ।

প্রশ্ন ৪। যে গাছের সাথে নতুন একটি ডাল এনে জোড়া লাগানো হয় ঐ গাছটিকে কী বলে?
উত্তর: আদিজোড়।

প্রশ্ন ৫। আদিজোড়ের সাথে জোড়া লাগানোকে কী বলে?
উত্তর: উপজোড়।

প্রশ্ন ৬। উপজোড়ের আরেক নাম কী?
উত্তর: সায়ন।

প্রশ্ন ৭। জোড়কলমের জোড়া স্থানের নিচের অংশকে কী বলে?
উত্তর: আদিজোড়।

প্রশ্ন ৮। জোড়কলমের জোড়া স্থানের উপরের অংশকে কী বলে?
উত্তর: উপজোড় বা সায়ন।

প্রশ্ন ৯। আদিজোড় হিসেবে নেওয়া গাছের চারার বয়স কত হতে হবে?
উত্তর: এক থেকে দেড় বছর।

প্রশ্ন ১০। বড় গাছের শাখা আদিজোড় হিসেবে নিলে এর বয়স কত হতে হবে?
উত্তর: এক থেকে দেড় বছর।

প্রশ্ন ১১। গোলাপ গাছের ক্ষেত্রে ডায়ামিটার কত হতে হবে?
উত্তর: ১ সে.মি.।

প্রশ্ন ১২। কীসের চারা স্বাস্থ্যবান, নীরোগ ও পেন্সিলের মতো মোটা হবে?
উত্তর: উপজোড়ের।

প্রশ্ন ১৩। কীসের চারা বা শাখা শক্ত কাঠের মতো হতে হবে?
উত্তর: উপজোড়ের।

প্রশ্ন ১৪। উপজোড় কেমন গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে?
উত্তর: সুস্থ, সবল ও বড় গাছ হতে।

প্রশ্ন ১৫। উপজোড় শাখার আকার কীসের সমান হতে হবে?
উত্তর: আদিজোড় শাখার সমান।

প্রশ্ন ১৬। জোড় কলম করার উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর: বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস।


৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। গ্রাফটিং-এর আরেক নাম কী?
গ্রাফটিং কেন করা হয়? উত্তর: গ্রাফটিং-এর আরেক নাম হলো জোড়কলম। বিভিন্ন উদ্ভিদের বাম্পার বা দ্রুত ফলন পাওয়ার জন্য মূলত গ্রাফটিং করা হয়।

প্রশ্ন ২। জোড়কলম কাকে বলে?
উত্তর: গাছের সংযোজনযোগ্য অংশসমূহকে পাশাপাশি একত্রে বেঁধে রাখার পর যদি তারা পরস্পর মিলে বা একত্রে জোড়া বেঁধে একটি একক গাছ হিসেবে বৃদ্ধি পেতে থাকে, তখন তাকে জোড়কলম বলে ।

প্রশ্ন ৩। আদিজোড় বলতে কী বোঝ?
উত্তর: যে গাছের সাথে নতুন একটি ডাল এনে জোড়া লাগানো হয় ঐ গাছটিকে বলা হয় আদিজোড়।

প্রশ্ন ৪। উপজোড় বলতে কী বোঝ?
উত্তর: চাহিদাকৃত যে ডালটি এনে আদিজোড়ের সাথে জোড়া লাগানো হয় তাকে উপজোড় বলে।

প্রশ্ন ৫। সারন কী?
উত্তর: উপজোড়ের আরেক নাম হলো সায়ন।

প্রশ্ন ৬। প্রুনিং শিয়ার কী?
উত্তর: প্রুনিং শিয়ার হলো গাছের ডালপালা ছাঁটাইয়ের কাজে ব্যবহৃত এক ধরনের যন্ত্র।

প্রশ্ন ৭। কী কী গাছে গ্রাফটিং করা যায়?
উত্তর: সাধারণত দ্বিবীজপত্রী সকল গাছেই গ্রাফটিং করা যায়। যেমন— লেবু, আম, কাঁঠাল প্রভৃতি।

প্রশ্ন ৮। আদিজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় কী কী?
উত্তর: আদিজোড় হিসেবে নিতে হলে গাছের চারার বয়স এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। এমনকি বড় গাছের শাখার ক্ষেত্রে উত্ত শাখার বয়স এক থেকে দেড় বছর হতে হবে। তবে গোলাপের ক্ষেত্রে বয়স হবে ৩-৪ মাস। চারা বা শাখাটি শক্ত কাঠের মতো হতে হবে। চারা নীরোগ হতে হবে।

প্রশ্ন ৯। কলম করার উপযুক্ত সময় কোনটি?
উত্তর: কলম করার উপযুক্ত সময় হলো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস।

প্রশ্ন ১০। কলম করার জন্য কী কী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন?
উত্তর: কলম করার জন্য চাকু, প্রুনিং শিয়ার, পলিব্যাগ ও পলিথিন টেপ প্রয়োজন।

প্রশ্ন ১১। উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয় কী কী?
উত্তর: উপজোড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বিষয়গুলো হলো-
১. একটি সুস্থ সবল বড় গাছ হতে উপজোড় সংগ্রহ করতে হবে।
২. উপজোড় শাখার বয়স আদিজোড় শাখার বয়সের সমান হতে হবে।
৩. উপজোড় শাখার আকার আদিজোেড় শাখার সমান হতে হবে।

প্রশ্ন ১২। জোড় কলমের সফলতার জন্য কোন বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে?
উত্তর: জোড় কলমের সফলতার জন্য যে কয়টি বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো:
১. উপজোড় ও আদিজোড়ের বয়স, আকার ও আকৃতির দিক থেকে পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
২. আদিজোড় এবং উপজোড় এমনভাবে পলিখিন ফিতা দিয়ে বাঁধতে হবে যেন এর ভিতর কোনো ফাঁক না থাকে এবং পানি প্রবেশ না করে।
৩. সঠিক মৌসুমে (বৈশাখ, জৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে) জোড় কলম করতে হবে।

প্রশ্ন ১৩। আদিজোড় ও উপজোড়ের আন্তঃপরিচর্যা সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর: আদিজোড় ও উপজোড়ের আস্তঃপরিচর্যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. উপজোড়ের নতুন পাতা যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে সবুজ রং ধারণ করবে তখন আদিজোড়ের উপরের এক-তৃতীয়াংশ কেটে দিতে হবে। এতে উপজোড়ের বৃদ্ধি দ্রুততর হবে।
২. এক সপ্তাহ পর আদিজোড়ের উপরের অংশের পাতা ও ডাল সম্পূর্ণরূপে কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৩. এরপর আদিজোড়ের সাথে উপজোড় সংযুক্ত হয়ে নতুন গ্রাফটিং বা কলমের চারা তৈরি হবে।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৩য় অধ্যায় – আগামীর স্বপ্ন
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায় – আর্থিক ভাবনা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায় – আমার জীবন আমার লক্ষ
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৬ষ্ঠ অধ্যায় – দশে মিলে করি কাজ
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৭ম অধ্যায় – কুকিং

আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৮ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।