৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায় – আমার জীবন আমার লক্ষ
৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায়: আমার নাম রবিন। আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। আমাদের গ্রামের নাম থলিয়ারা। আমার বাবা একজন আদর্শ কৃষক। আমি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করি। আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন হলো বাবার মতো একজন আদর্শ কৃষক হওয়া। আমি কৃষির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করব। তারপর সে শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করব। প্রথমে সবজি চাষ থেকে শুরু করব।
পরবর্তীতে মাছ চাষ, হাঁস-মুরগির খামার, গাভি পালন প্রভৃতির মাধ্যমে আমার কৃষি কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করব। আমার কৃষি প্রকল্প থেকে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখব। এর মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। সেই সাথে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারব। মোটকথা, একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্দেশ্যেই আমি একজন আদর্শ কৃষক হতে চাই।
৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায়
নিজের পছন্দ ও দক্ষতা
নিজের পছন্দের বিষয়ের ওপর কাজ করলে আনন্দ পাওয়া যায়। যে কাজে আনন্দ থাকে, সে কাজটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পাদিত হয়। এজন্য আনন্দ আছে কিংবা আনন্দ পাওয়া যায় এমন কাজেই আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত। আমরা যখন নিজেদের পছন্দের কাজটি করব তখন সে কাজের ওপর দক্ষতা অর্জন দ্রুত হবে।
স্কুল বন্ধ থাকলে কিংবা পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাগান তৈরি, সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি দেখাশোনা- এসব কাজে আমি খুব আনন্দ পাই। তাই আমি সুযোগ পেলেই এসব কাজে সময় দেই। কখনো নিজে নিজে বাগান পরিচর্যা করি, আবার কখনো বাবার সাথে সময় দেই। পড়াশোনার পাশাপাশি এসব কাজ করতে আমার খুবই ভালো লাগে।
স্বপ্ন: আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া
কৃষিকে যেকোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষি খাতের উন্নয়ন জরুরি। এজন্য প্রয়োজন সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা। আমার পড়াশোনার অবসরে বাগান তৈরি, সবজি চাষ এবং বাবার সাথে কৃষিকাজে সময় দিতে খুব ভালো লাগে। আনন্দ পাই।
এজন্য আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন হলো আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া। আমি পড়াশোনা শেষ করে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করে নিজের এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারব বলে আশা করছি। এছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দারিদ্র্য জয় করে দরিদ্রের পাশে
ফরিদ। শৈশব থেকেই দারিদ্র্য যার নিত্যসঙ্গী। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালে শিক্ষক বাবা প্রাইমারি স্কুল থেকে অবসরে যান। মা একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। অভাব-অনটনের সংসার তাদের। রাতে পড়তে বসার জন্য কেরোসিন কেনার পয়সাও থাকত না। কখনো জ্যোৎস্নায়, চাঁদের আলোয় কিংবা মা যখন রান্না করতেন পাশে বসে পড়াশোনা করেছেন। এমনই পরিস্থিতি আর পরিবেশে ফরিদ দিন পার করেছেন। কিন্তু কখনো তিনি তার স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত হননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর প্রচেষ্টায় শত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে বড় হওয়ার স্বপ্নটাকে আগলে রেখেছিলেন ফরিদ।
একবার পঞ্চম শ্রেণিতে থাকাকালীন পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও পরে নিজ উদ্যমে আবারও শুরু করেন। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবেন। সেই স্বপ্নকে তিনি অত্যন্ত যত্ন করে লালন করেছেন। এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করলেন কৃতিত্বের সাথে। পরে ভর্তির সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর থেকে ফরিদকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে বিদেশি একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করলেন।
পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করলেন। তিনি বর্তমান সময়কার পদার্থবিদ্যা গবেষণায় সারা পৃথিবীর এই প্রজন্মের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন। বর্তমানে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাকর্মে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এভাবেই অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টার বিনিময়ে ফরিদ তার বিজ্ঞানী হবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করেছেন এবং সমাজে একজন সফল ও প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায় এর কাজ
কাজ ১: সাদিয়ার স্বপ্ন ও পছন্দের কাজ কী? [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৮২]
স্বপ্ন: মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা।
সাদিয়ার পছন্দের কাজ: পড়াশোনা, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, মা-বাবার সাথে ভ্রমণ, বিভিন্ন প্রকার গল্প ও সায়েন্স ফিকশনের বই পড়া, বাগান করা, কোডিং করা, প্রোগ্রামিং শেখা প্রভৃতি।
কাজ ২: রিফাতের স্বপ্ন ও পছন্দের কাজ কী?[পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৮]
স্বপ্ন: পোশাক নিয়ে কাজ করা।
রিফাতের পছন্দের কাজ: জামা-কাপড় বানানো, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ, প্রতিযোগীদের পোশাক নির্বাচনে ভূমিকা রাখা প্রভৃতি।
কাজ ৩: আসমার স্বপ্ন ও পছন্দের কাজ কী? [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৮৪]
স্বপ্ন: মানবসেবামূলক কাজ করা।
আসমার পছন্দের কাজ: ভাইবোনদের যত্ন নেওয়া, ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখা, টিভি দেখা, কার্টুন দেখা, অনলাইনে বই পড়া, গল্প লিখা এবং সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নেওয়া।
কাজ ৫: ছকটি পূরণ করে তুমি তোমার পছন্দ ও দক্ষতাগুলো নিশ্চয়ই জেনেছ। এবার তোমার পছন্দ ও দক্ষতাসমূহ বিবেচনা করে ভবিষ্যতে তুমি কী কী করতে চাও বা কী কী হতে চাও তার একটি তালিকা তৈরি কর। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৮৭]
উত্তর: ছকটি পূরণ করে আমি আমার পছন্দ ও দক্ষতাগুলো জেনেছি। এবার আমার পছন্দ ও দক্ষতাসমূহ বিবেচনা করে ভবিষ্যতে আমি কী কী করতে চাই নিচে তার একটি তালিকা তৈরি করে দেখানো হলো: আমার কী কী পছন্দ তা বিবেচনায় আমি কী হতে চাই তার একটি তালিকা তৈরি করা হলো-
১. সমাজসেবামূলক কাজ যেমন- বিনামূল্যে শিক্ষা দান, অসহায় ও দরিদ্রদের সহায়তা দান, যেকোনো দুর্যোগে দুর্গতদের পাশে থাকা।
২. পড়াশোনা শেষ করে নিজে উদ্যোক্তা হবো যেন অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারি। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।
৩. গ্রামের বাড়িতে হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার গড়ে তুলতে চাই। পাশাপাশি নিজস্ব পুকুরে মাছের চাষ এবং হ্যাচারি করতে পারি; যেখানে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের অন্যদেরও স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
৪. গান শেখা, কবিতা লেখা, গল্প শোনা, ছবি আঁকা প্রভৃতি সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকা।
কাজ ৭: দারিদ্র্য জয় করে দরিদ্রের পাশে গল্পের ওপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৯১]
১. গল্পের চরিত্রের কী স্বপ্ন ছিল?
উত্তর: গল্পের চরিত্রের নাম জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী ড. সিএন ফরিদ। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী হবেন।
২. স্বপ্ন অথবা জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে পরিকল্পনা ও কাজ করলেন?
উত্তর: গল্পের চরিত্রের নাম জগৎখ্যাত বিজ্ঞানী ড. সিএম ফরিদ। তনি তার স্বপ্ন অথবা জীবনের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। অভাব-অনটনের সংসারকে সঙ্গী করেই নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। শৈশব কেটেছে খড়ের চালার কুঁড়েঘরে। বৃষ্টি হলেই টিপটিপ করে পানি গড়িয়ে পড়ত।
কেরোগিন কেনার পয়সাও ছিল না। তাই কখনো জ্যোৎত্মার চাঁদের আলোয় কিংবা কখনো মা যখন রান্না করতেন, পাশে বসে পড়াশোনা করেছেন। বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার অদম্য আগ্রহ। সেই আগ্রহ আর উদ্যমেই ফরিদ তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। তিনি সময়ের কাজ সময়মতো করার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেই আজকে তিনি একজন জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে সারা পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করেছেন।
৩. সিএন ফরিদ কীভাবে নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে জীবনে সফলতা লাভ করেছেন?
উত্তর: ড. সিএন ফরিদ উদ্যম, নিষ্ঠা, ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা আর কঠোর পরিশ্রমকে সাথী করেই নিজ লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকেছেন এবং বিভিন্ন বাধ্য অতিক্রম করে জীবনে সফলতা লাভ করেছেন। তিনি সময়ের কাজ সময়মতো সম্পন্ন করতেন। আজকের কাজটি আগামীকালের জন্য কখনো রেখে দিতেন না।
আমরা দেখতে পাই যে, কখনো পড়ার জন্য কেরোসিন না থাকলেও ফরিদ তার পড়া শেষ করার জন্য মায়ের রান্নার সময় চুলার আগুনের কাছে গিয়ে পড়াশোনা করেছেন। চরম দরিদ্রতার কারণে পঞ্চম শ্রেণিতে থাকার সময় পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হলেও হাল ছেড়ে দেননি। পরবর্তীতে তিনি মেধা, ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রমকে সঙ্গী করেই আবারো পড়াশোনায় মনোযোগ দেন এবং সকল ক্ষেত্রেই কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে অভাব সঙ্গী হলেও এসব তার এগিয়ে যাওয়ার পথে খুব বেশি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মূলত উদ্যম, লেগে থাকা, ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, সঠিক পরিকল্পনা আর অদ্যম মেধাশক্তির কারণেই ফরিদ তার লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন এবং সকল বাধা অতিক্রম করে জীবনে সফলতা লাভ করেছেন।
৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায় কুইজ প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। বিজ্ঞান নিয়ে যিনি গবেষণা করেন তাকে কী বলে?
উত্তর: বিজ্ঞানী।
প্রশ্ন ২। পাইলটের কাজ কী?
উত্তর: বিমান চালনা।
প্রশ্ন ৩। ইচ্ছা বা স্বপ্নগুলো কীসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর: আমার যা যা পছন্দ বা ভালোলাগার রয়েছে তার ওপর।
প্রশ্ন ৪। আমার স্বপ্ন তৈরিতে কোনটি অবদান রাখে?
উত্তর: যে কাজে আমি বেশি দক্ষ সেটি।
প্রশ্ন ৫। এক বা একাধিক কিছু করার বা হবার স্বপ্নই আমাদের কী করে?
উত্তর: লক্ষ্যস্থির করে দেয়।
প্রশ্ন ৬। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ নামে বাংলাদেশের কী আছে?
উত্তর: স্যাটেলাইট।
প্রশ্ন ৭। গার্লস গাইড কী?
উত্তর: গার্লস গাইড হলো একটি আন্তর্জাতিক, অরাজনৈতিক, শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক সংস্থা।
প্রশ্ন ৮। রেড ক্রিসেন্ট কী?
উত্তর: আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
প্রশ্ন ৯। পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের অগ্রিম সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন ১০। লক্ষ্য অর্জন করার জন্য কোনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ?
উত্তর: পরিকল্পনা।
প্রশ্ন ১১। কীভাবে কাজের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন করা যায়?
উত্তর: যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে।
প্রশ্ন ১২। মাইলস্টোন অর্থ কী?
উত্তর: ধাপ বা সিঁড়ি।
৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। কীভাবে ফসলের চাষ করা হয়? বর্ণনা কর।
উত্তর: ফসল আবাদ হলো এক খণ্ড ভূমি বা জমিকে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষিকাজের জন্য তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া। এটি হতে পারে মাটি খুঁড়ে লাঙলের মাধ্যমে চাষ দিয়ে অথবা আঁচড়া দিয়ে। এক্ষেত্রে শারীরিক শ্রম বেশি দিতে হয়।
সাধারণত কোদাল, কাস্তে, মই প্রভৃতির মাধ্যমে ফসল আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। পরে বীজ বা চারাগাছ রোপণ করে দিতে হয়। পরবর্তীতে নিয়ম অনুযায়ী জমি পরিচর্যা করলে চারাগাছ ধীরে ধীরে বড় হয় এবং একসময় ফসল আসে বা পরিপক্ক হয়। এসব ফসলের মাধ্যমে পরিবারের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায়।
প্রশ্ন ২। অনলাইনে ফসল বিক্রি করার পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: অনলাইনে ফসল বিক্রয় করার জন্য প্রথমে ইন্টারনেট প্রযুক্তির সাথে যুক্ত হতে হবে। এটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গুগল অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট প্রভৃতির মাধ্যমে অনলাইনে ফসল বিক্রির কাজকে সহজতর করা যায়।
এজন্য অনলাইনের যেকোনো একটি মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রচারণা চালাতে হবে। কিছু মাধ্যমে ফ্রি প্রচারণা চালানো যায়। আবার কিছু মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। অনলাইনের মাধ্যমে ফসল বিক্রয় করার বড় সুবিধা হলো কোনোরকম মধ্যস্থব্যবসায়ীর সাহায্য ছাড়া সরাসরি বিক্রয়। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হন।
প্রশ্ন ৩। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর: বঙ্গবন্ধু-১ হলো একটি মহাকাশ স্যাটেলাইট। এটি বাংলাদেশের মালিকানাধীন প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। বাংলাদেশের প্রথম ভৃস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১১ মে (বাংলাদেশ সময় ১২ মে) কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
এর মাধ্যমে বিশ্বে ৫৭ তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট চ্যানেলের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এছাড়া বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে গেলে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন ৪। কীভাবে মঞ্চ সাজাতে হয়? বর্ণনা কর।
উত্তর: সাধারণত নাটক, অভিনয়, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি, সভা প্রভৃতি উপস্থাপনের জন্য তুলনামূলক উঁচু স্থানে যে বিশেষ জায়গা বা কেন্দ্র তৈরি করা হয় তাকে মঞ্চ বলে। অনুষ্ঠানের ধরন ও প্রকৃতিভেদে মণ্য ভিন্ন ভিন্ন আকৃতিতে সাজাতে হয়। যেমন- গায়ে হলুদের মঞ্চ ফুল আর কারুকাজ দিয়ে সাজানো হয়, অভিনয়ের মঞ্চ শিল্পীদের অভিনয়কে প্রাধান্য দিয়ে সাজাতে হয়, আবার আবৃত্তির মঞ্চ হবে কবিতার ভাব ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করে।
সভার মধ্য হবে চেয়ার, টেবিল, কার্পেট ও পর্দা দিয়ে। অর্থাৎ অনুষ্ঠানের ধরন ও প্রকৃতি বিবেচনা করে একেক অনুষ্ঠানের জন্য একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করে মঞ্চ সাজাতে হয়। তবে মঞ্চের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মঞ্চটি এমনভাবে সাজাতে হবে যেন দূরের দর্শকেরাও মঞ্চের অনুষ্ঠানাদি নির্বিঘ্নে দেখতে ও শুনতে পারে।
প্রশ্ন ৫। গার্ল গাইডস সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর: গার্ল গাইডিং হলো একটি আন্তর্জাতিক, অরাজনৈতিক, শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক যুবা আন্দোলন। স্বাস্থ্য ও চরিত্র গঠনে এবং মানবিক গুণাবলি বিকাশে একজন বালিকা বা কিশোরীকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই আন্দোলনের সৃষ্টি। গার্ল গাইডের সদস্যদের জন্য ১০টি নিয়মের কথা, উল্লেখ রয়েছে। এগুলো গাইডের প্রত্যেক সদস্যকে মানতে হয় এবং নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হয়। ১০টি নিয়ম নিম্নরূপ:
১. গাইডের আত্মমর্যাদা নির্ভরযোগ্য।
২. গাইড কর্তব্যপরায়ণ।
৩. গাইডের কর্তব্য নিজে কার্যোপযোগী হওয়া এবং অপরকে সাহায্য করা।
৪. গাইড সকলের বন্ধু এবং গাইড মাত্রই সকলের বোন।
৫. গাইড মাত্রই বিনয়ী।
৬. গাইড জীবনের বন্ধু।
৭. গাইড কথা, কাজে ও চিন্তায় নির্মল।
৮. গাইড আদেশ পালন করে।
৯. গাইড হাসিমুখে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে।
১০. গাইড মিতব্যয়ী।
প্রশ্ন ৬। রেড ক্রিসেন্টের কাজ সম্পর্কে লেখ।
উত্তর: আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ মিলিয়ন ছেচ্ছাসেবী, সদস্য এবং কর্মীসহ একটি আন্তর্জাতিক মানবিক আন্দোলন। এটি মানুষের জীবন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সব মানুষের প্রতি শ্রান্থা নিশ্চিত করা এবং মানুষের দুর্ভোগ প্রতিরোধ ও লাঘব করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আন্দোলনটি বেশকিছু স্বতন্ত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত; যারা একে অপরের থেকে আইনত স্বতন্ত্র হলেও আন্দোলনের মধ্যে সাধারণ মৌলিক নীতি, উদ্দেশ্য, চিহ্ন, সংবিধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে একতাবদ্ধ।
৩১ মার্চ, ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি আদেশ ১৯৭৩ (পিও-২৬) জারি করেন। এই আদেশের বলে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি’ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ সালে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি রাখা হয়। বাংলাদেশে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে আর্তমানবতার সেবা করে থাকে।
প্রশ্ন ৭। দুর্যোগ কী?
উত্তর: একটি বিপর্যয় যখন কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জনগণের বেশিরভাগ মানুষকে বিপদাপন্ন করে তুলে এবং তাদের নিজস্ব মোকাবিলা ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তখন তাকে দুর্যোগ বলে। এসব দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হয়। দুর্যোগ কখনো হঠাৎ সংঘটিত হয় আবার কখনো বা এক বা একাধিক ঘটনা ধীরে ধীরে দুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে।
আবার অনেক সময় একটি দুর্যোগ একাধিক দুর্যোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন- ভূমিকম্প থেকে সুনামি হতে পারে। আবার সুনামি থেকে জলোচ্ছ্বাস এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা হতে পারে। দুর্যোগ দুই রকমে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগ।
প্রশ্ন ৮। ব্যাকওয়ার্ড প্লানিং কী? যা জান লেখ।
উত্তর: ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বর্তমানে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে ব্যাকওয়ার্ড প্লানিং বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ভবিষ্যতের ইচ্ছা বা লক্ষ্য পূরণ করার জন্য দীর্ঘমেয়াদে, মধ্যমেয়াদে এবং স্বল্পমেয়াদে এখনই কী করা হবে এরূপ পরিকল্পনার পদ্ধতিকে ব্যাকওয়ার্ড গ্লানিং অথবা ব্যাককাস্টিং বলা হয়। এটি পরিকল্পনার একটি কৌশল মাত্র।
এরূপ পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট সময় শেষে বা বছর শেষে পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করে দেখা হয়, যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে সে অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আনতে হবে কিনা। এক্ষেত্রে কোথাও পরিবর্তন আনতে হলে সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৩য় অধ্যায় – আগামীর স্বপ্ন
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায় – আর্থিক ভাবনা
আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৫ম অধ্যায়” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।