|

৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায় – আর্থিক ভাবনা

৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায়: অর্থ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা করাই হলো আর্থিক ভাবনা। আর্থিক ভাবনা থেকেই মানুষ সঞ্চয়ে উৎসাহিত হয়। আর্থিক ভাবনা ভবিষ্যতে আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা। বর্তমানে যেকোনো আয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে আর্থিক ভাবনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই আর্থিক ভাবনা ছোট-বড় যেকোনো বয়সের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ শিক্ষার্থী, গৃহিণী, পেশাজীবী যেই হোক না কেন সবাই কোনো না কোনোভাবে আয় করে থাকে। তাই ভবিষ্যতে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে যেন আমরা আর্থিক সংকটে না পড়ি কিংবা অর্থের অভাবে প্রয়োজন বা চাহিদা পূরণে ব্যর্থ যেন না হই তার জন্য আমাদের সবাইকে আর্থিক পরিকল্পনা ও সাধ্যমতো সঞ্চয় করতে হবে।

 

৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায়

কাজ ১: পিপীলিকা এবং ঘাসফড়িং এর গল্পটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৬০]

১। শীতকালে কে ভালোভাবে এবং নিশ্চিন্তে থাকতে পেরেছিল এবং কেন?
উত্তর: শীতকালে পিপীলিকা ভালোভাবে এবং নিশ্চিন্তে থাকতে পেরেছিল। কারণ— পিপীলিকা গ্রীষ্মকালে একটু একটু করে শীতকালের জন্য খাবার সঞ্চয় করে রেখেছিল। পিপীলিকা জানত যে, গ্রীষ্মশেষে ঝাঁকিয়ে শীত আসে। তখন খাবারের সংকট দেখা দেয়। খাবার সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। বিষয়টি আগে থেকেই অনুধাবন করে পিপীলিকা ঘাসফড়িংকে পরামর্শ দিয়েছিল শীতকালের জন্য খাবার সঞ্চয় করতে। কিন্তু ঘাসফড়িং গুরুত্ব দেয়নি। ফলে শীতকালে ঘাসফড়িং সত্যি সত্যি খাবারের সংকটে পড়ে এবং পিপীলিকার কাছে এসে খাবারের জন্য সাহায্য চায়।

২। গল্পটি থেকে তুমি কী শিখলে?
উত্তর: গল্পটি থেকে আমি যে বিষয়গুলো শিখলাম:
১. সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। সময়ের কাজ সময়ে করলে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে ভালো থাকা যায়।
২. ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কোনো বিপদ বা দুর্ঘটনা মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই সাধ্য অনুযায়ী কিছু সঞ্চয় করে রাখতে হবে।
৩. পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সবসময় সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যেতে হবে। এতে একদিকে যেমন নিজের এবং পরিবারের আয়-উন্নতি হবে, তেমনি আমাদের দেশও উন্নয়নের সোপানে পৌঁছাবে।

শিক্ষকের মন্তব্য: গল্পটির মধ্যে যে শিক্ষণীয় বিষয়টি আছে শিক্ষার্থী সেটা ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছে। আমি তার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট।

কাজ ৪: তোমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সঞ্চয়ের সুবিধাগুলো উল্লেখ কর। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৬৫]

উত্তর: আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে সঞ্চয়ের সুবিধাগুলো নিম্নরূপ:
১. সঞ্জয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
২. সঞ্চয় আয়ের উৎস হিসেবে কাজ করে।
৩. সঞ্চয় বৃদ্ধ বয়সে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ভূমিকা রাখে।
৪. সঞ্চয় স্বাস্থ্যগত অক্ষমতার সময় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৫. সঞ্জয় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্দিনে সহায়ক হয়।
৬. সঞ্চয় গৃহনির্মাণ ও গৃহসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
৭. সঞ্চয় মিতব্যয়ের অভ্যাস তৈরিতে ভূমিকা রাখে ইত্যাদি।
৮. উচ্চশিক্ষা, বিবাহ ও পারিবারিক অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে সঞ্জয় সহায়ক ভূমিকা রাখে।

কাজ ৫: সঞ্চয় না করলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে বলে তোমরা মনে কর। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৬৫]

উত্তর: সঞ্চয় না করলে যেসব সমস্যা হতে পারে সেগুলো নিম্নরূপ:
১. পছন্দের জিনিসটি কেনার ইচ্ছা ত্যাগ করতে হয়।
২. মা-বাবার টাকার প্রয়োজন হলে সাহায্য করা যায় না।
৩. আর্থিক সংকটে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কেনা যায় না।
৪. নিজেদের অযাচিত ইচ্ছা পূরণের জন্য কিছু বদঅভ্যাস গড়ে ওঠে।
৫. ভবিষ্যতে অন্য কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।

কাজ ৬: তোমার কোন কাজগুলো করা ঠিক হচ্ছে না, তা নিজেই খুঁজে বের কর। কোনগুলো তোমার জন্য বিলাসী আচরণ তাও ভাব। এরপর তোমার কোন জিনিসগুলো কেনা প্রয়োজন তার একটি তালিকা বানাও। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ৬৭]

উত্তর: আমির কোন কাজগুলো করা ঠিক হচ্ছে না তা নিজেই খুঁজে বের করি। কোনগুলো আমার জন্য বিলাসী আচরণ তাও ভোবে আমার কোন জিনিসগুলো কেনা প্রয়োজন তার একটি তালিকা বানিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা হলো :

তোমার কী কী বদঅভ্যাস (যেমন- জাঙ্ক ফুড) আছে, যা বাদ দিতে হবে:
১। জাঙ্ক ফুড খাওয়া
২। রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
৩। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা

তোমার কী কী বিলাসিতা আছে, যা কমাতে হবে:
১। অযথা কেনাকাটা করা
২। বন্ধুদের জন্য দামি গিফট কেনা
৩। ঘনঘন নতুন জামা কেনা

তোমার কী কী প্রয়োজন আছে, যা কিনতে হবে:
১। শিক্ষাসামগ্রী
২। পড়ার টেবিল
৩। ছোট বোনের জন্য কিছু বই


৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায় কুইজ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। পিপীলিকা কী চায়?
উত্তর: শীতের সঞ্চয়।

প্রশ্ন ২। পিপীলিকা কী খুঁজছে?
উত্তর: খাদ্য।

প্রশ্ন ৩। পিপীলিকার কয়টি পা?
উত্তর: ছয়টি

প্রশ্ন ৪। পিপীলিকা এখানে সেখানে কেন ঘুরে বেড়ায়?
উত্তর: খাবারের সন্ধানে।

প্রশ্ন ৫। দীর্ঘ কয় মাস ধরে পিপীলিকা এ কাজ করতে থাকে?
উত্তর: ছয় মাস।

প্রশ্ন ৬। আগামী কয় মাসের খাবার জোগাড়ের জন্য পিপীলিকা এ কাজ করে?
উত্তর: ছয় মাসের।

প্রশ্ন ৭। বিপদের বন্ধু কী?
উত্তর: সঞ্জয়।

প্রশ্ন ৮। ATM-এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর: Automated Teller Machine |

প্রশ্ন ৯। সঞ্চয় কখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: হঠাৎ অর্থের প্রয়োজন হলে।

প্রশ্ন ১০। আমাদের বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণের জন্য কী প্রয়োজন?
উত্তর: সঞ্জয়।

প্রশ্ন ১১। সঞ্চয়ের জন্য মূল বিষয় কী?
উত্তর: ইচ্ছে।

প্রশ্ন ১২। স্কুল সঞ্চয়ী হিসাবে প্রাথমিক জমার পরিমাণ কত?
উত্তর: মূল সঞ্চয়ী হিসাবে প্রাথমিক জমার পরিমাণ ১০০ টাকা।

প্রশ্ন ১৩। শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে সঞ্চয়ে কী পায়?
উত্তর: শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের সঞ্চয়ে আকর্ষণীয় লভ্যাংশ বা মুনাফা পায়।

প্রশ্ন ১৪। কত বছর আগে সঞ্চয়ের উপায় উদ্ভাবন হয়?
উত্তর: প্রায় শত বছর।

প্রশ্ন ১৫। পারিবারিক আর্থিক খতিয়ানকে জাপানি ভাষায় কী বলে?
উত্তর: কাকেইবো।

প্রশ্ন ১৬। কাকেইবোতে হিসাব-নিকাশ রাখা হয় কীভাবে?
উত্তর: কাগজে-কলমে।

প্রশ্ন ১৭। যে বইয়ে আর্থিক হিসাব-নিকাশ রাখা হয় তাকে কী বলে?
উত্তর: আর্থিক ডায়রি।

প্রশ্ন ১৮। রাস্তা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া কী?
উত্তর: বদ অভ্যাস।

প্রশ্ন ১৯। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনোকিছু করা কী?
উত্তর: ভালো নয়।

প্রশ্ন ২০। সঞ্চয় আমাদের কী বাড়িয়ে দেবে?
উত্তর: আত্মবিশ্বাস।


৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। সঞ্চয় কী?
উত্তর: খরচের চেয়ে আয় বেশি হলে যে টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায় তাকে সঞ্জয় বলে। সঞ্চয় ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রশ্ন ২। সঞ্চয় কেন করা হয়?
উত্তর: ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাই ভবিষ্যতে যেকোনো আর্থিক সংকট মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সঞ্চয় করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে কোনো প্রয়োজনে বা চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে মানুষ সঞ্চয় করে থাকে।

প্রশ্ন ৩। মানুষ কীভাবে আয় করতে পারে?
উত্তর: মানুষ বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারে। যেমন- কোনো নির্দিষ্ট কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে ব্যবসায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে, কোনো পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে এর বিনিময়ে আয় করে ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৪। শিক্ষার্থীদের আয়ের উৎস কী কী?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের আয়ের উৎস হলো বৃত্তি/উপবৃত্তির টাকা, টিফিনের টাকা, ঈদ-পূজায় প্রাপ্ত সেলামি/প্রণামির টাকা, জন্মদিন বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পাওয়া টাকা ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৫। স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর: স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়, তাকে স্কুল ব্যাংকিং বলে। শিক্ষার্থীরা স্কুল সঞ্চয়ী হিসাব স্থলে স্কুল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা পেয়ে থাকে। শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় এ হিসাবে এ ধরনের আমানতি অর্থের ওপর ব্যাংক আমানতকারীকে সুদ প্রদান করে থাকে। মূলত স্কুল থেকেই সঞ্চয়ে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়।

প্রশ্ন ৬। ‘কাকেইবো’ কী?
উত্তর: প্রায় শত বছর আগে সন্বয় করার একটি সহজ ও ঝামেলাহীন কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন জাপানি এক নারী, যার নাম ‘কাকেইবো’। এটি এক ধরনের পারিবারিক আর্থিক খতিয়ান।

প্রশ্ন ৭। আর্থিক ডায়েরি কী?
উত্তর: আর্থিক ডায়েরি হলো আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ লিপিবদ্ধ করার খাতা। এ ডায়েরি থেকে আয়-ব্যয়, সঞ্জয় বা উদ্বৃত্তের পরিমাণ জানা যায়।

প্রশ্ন ৮। সঞ্চয়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনে সঞ্জয়ের গুরুত্ব রয়েছে। কারণ সঞ্জয় মানুষকে ভবিষ্যৎ যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করে। এছাড়া পূর্বপরিকল্পনামাফিক লক্ষ্য অর্জনে সঞ্জয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া সঞ্জয় মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।

প্রশ্ন ৯। কোন কাজগুলো বদঅভ্যাস গড়ে তুলে?
উত্তর: জাঙ্ক ফুড খাওয়া, রাস্তা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা বা সামনে কিছু দেখলেই কেনার জন্য ছটফট করা ইত্যাদি বিষয়গুলো বদ অভ্যাস গড়ে তোলে।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৩য় অধ্যায় – আগামীর স্বপ্ন


আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির জীবন ও জীবিকা ৪র্থ অধ্যায়” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।