|

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ – প্রবন্ধ

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ: গদ্য-ভাষায় কোনো বিষয়ের সুবিন্যস্ত আলোচনাকে বলা হয় প্রবন্ধ। প্রবন্ধ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে; যেমন- বিবরণমূলক প্রবন্ধ, তথ্যমূলক প্রবন্ধ, বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ। আর এই প্রবন্ধের বিষয় হতে পারে ধর্ম, রাজনীতি, ইতিহাস, খেলাধুলা ইত্যাদি। কামরুল হাসান রচিত ‘আমাদের লোকশিল্প’ মূলত ইতিহাস ও ঐতিহ্যনির্ভর প্রবন্ধ।

আলোচ্য প্রবন্ধে বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি এ দেশের মানুষের জীবিকা নির্বাহের বিষয়, নারী-পুরুষের অবদান ইত্যাদি বিষয় বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বিভক্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদে প্রবন্ধের বিষয় ‘আমাদের লোকশিল্প’র অন্তর্গত কুটিরশিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এরপর উপসংহারে কুটিরশিল্প উন্নয়নের দিকনির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে। প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আলোচ্য প্রবন্ধে নির্দিষ্ট বিষয়, গদ্যভাষা, ভূমিকা, উপসংহার, ধারাবাহিক তথ্য উপস্থাপন প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ

আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের মূলভাব

‘আমাদের লোকশিল্প’ বাংলাদেশের কুটিরশিল্প নিয়ে রচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ। এটির রচয়িতা খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। তিনি পটুয়া কামরুল হাসান নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর প্রবন্ধটি ‘আমাদের লোকবৃষ্টি’ বই থেকে গৃহীত। প্রবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘খাদ্যশস্যের পরেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে যে জিনিসটি অতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে, তা হলো এখানকার কুটিরশিল্প।’

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। এই বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের নিত্যব্যবহার্য অধিকাংশ জিনিসই এই কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা যায়। অতীতে আমাদের দেশে যেসব লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তার কতকগুলো অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। অধুনা ঢাকাই মসলিন বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি অনেকাংশে সেই স্থান দখল করেছে। বর্তমানে জামদানি শাড়ি দেশে-বিদেশে পরিচিত এবং আমাদের গর্বের বস্তু।

আমাদের আরও একটি গ্রামীণ লোকশিল্প নকশিকাঁথা। এই শিল্প আজ লুপ্তপ্রায়। তবু এটির কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকেই মেয়েরা তাদের মনের মতো করে কাঁথা সেলাইয়ের প্রেরণা লাভ করতেন। কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে এক-একটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ ও জীবনগাথা। আমাদের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা মাটি দিয়ে তৈজসপত্র ও নানা ধরনের শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকেন। গ্রামের ঘরে ঘরে যে শিকা, হাতপাখা, ফুলদানি, ছাইদানি, মাদুর, শীতলপাটি, নানা ধরনের পুতুল তৈরি করা হয় তা মোটেই অবহেলার নয়। এসব লোকশিল্প সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করতে হবে। এই দায়িত্ব আমাদের সকলের।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ অধ্যায়ের কাজ

কাজ ১: প্রবন্ধ লিখি – কোনো একটি বিষয় নির্বাচন করো। বিষয়টির কোন কোন দিক নিয়ে আলোচনা করবে, তা নিয়ে ভাবো। কয়েকটি অনুচ্ছেদে গদ্যভাষায় তোমার ভাবনাকে উপস্থাপন করো। লেখার শুরুতে ভূমিকা ও লেখার শেষে উপসংহার থাকবে। মাঝখানের অনুচ্ছেদগুলোতে তোমার বক্তব্য একের পর এক সাজিয়ে লিখবে। একেবারে উপরে প্রবন্ধের একটি শিরোনাম লেখো। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ১২৬]

ধান

ভূমিকা: বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। বাংলাদেশের কৃষিজ ফসলের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ধান। ধান থেকে চাল হয় আর চাল থেকে ভাত। বাংলাদেশের মানুষ ভাত খেয়ে জীবনধারণ করে। বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর অনেক দেশে ভাতই প্রধান খাদ্য। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য ধান।

পরিচয়: বাংলাদেশের মাটি প্রায় সর্বত্রই ধান চাষের উপযোগী। জমি উত্তমরূপে চাষ করে ধান বোনা হয়। ধান গাছ এক রকম তৃণজাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ দেড় থেকে দুহাত উঁচু হলেই গাছের মাথায় শিষ বের হয়। শিষ থেকে জন্মে ধানের ছড়া। ধান পাকা পর্যন্ত গাছগুলো সবুজ থাকে। ধান পাকলে ধানের মতো গাছগুলোও সোনালি রং ধারণ করে।

প্রকারভেদ: আমাদের দেশে প্রধানত তিন রকম ধানের চাষ হয়। আউশ ধান বোনা হয় ফাল্গুন-চৈত্র মাসে; তা পাকে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে। আমন ধান বোনা হয় চৈত্র-বৈশাখ মাসে অথবা এ ধানের চারা করা হয় জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে। আমনের চারা রোপণ করা হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে, আমন ধান পাকে হেমন্তকালে। বোরো ধান বোনা হয় পৌঁস্ মাসে, পাকে চৈত্র-বৈশাখ মাসে। সম্প্রতি আমাদের দেশে ‘ইরি’ নামে এক রকম উচ্চ ফলনশীল ধান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ধান বছরের প্রায় সব সময় চাষ করা চলে। ‘ইরি’ সাধারণত নব্বই দিনের মধ্যে ফসল দেয়।

উৎপাদনস্থল: বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশে ধান জন্মে। ভারত, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে প্রচুর ধান জন্মে।

ধানের জমি নির্বাচন: আউশ ধানের জন্য উঁচু জমি দরকার। নিচু জমিতে ভালো ফলে আমন ধান। জলাভূমিতে ভালো ফলন হয় বোরোর। ইরি ধানের চাষের জন্য প্রচুর পানি দিয়ে ধানগাছের গোড়া সব সময় ডুবিয়ে রাখতে হয়। আবার এক শ্রেণির ইরি বেশি পানি ছাড়াও চাষ করা চলে।

চাষের প্রণালি: ধান চাষ দু রকমের হয়। বৃষ্টিতে মাটি যখন নরম হয়, তখন উত্তমরূপে চাষ করে সেই জমিতে ধানের বীজ বপন করতে হয়। এ ধান বোনাধান নামে পরিচিত। রোপাধান জন্মানোর প্রণালি অন্য রকম। কোনো ভিজা জমি কর্দমাস্ত করে বীজতলা তৈরি করা হয়। সেই বীজতলায় বোনা হয় খুব ঘন করে ধানের বীজ। চারাগুলো বড় হয়ে উঠলে সেগুলো তুলে নিয়ে রোপণ করতে হয় উত্তমরূপে কৰ্ষিত নিচু জমিতে। আমন, বোরো আর ইরি ধান বোনাও চলে; আবার অবস্থা বিশেষে রোপণও করতে হয়।

ধান মাড়াই: ধান পাকলে চাষিরা ধান গাছ কেটে আঁটি বেঁধে সেই ধান বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর সেই ধানের গাছ স্বল্পপরিসর জায়গায় ছড়িয়ে গরু বা মহিষ দিয়ে মাড়ায়। দরিদ্র চাষিরা পশুর অভাবে নিজেরাই আছড়ে আছড়ে ধানগুলো গাছ থেকে আলাদা করে নেয়। আজকাল কোনো কোনো চাষি মাড়াই করার যন্ত্রও ব্যবহার করে।

উপসংহার: স্বয়ংসম্পূর্ণতার জন্য ধানের ফলন বাড়ানো দরকার। তাহলে আমাদের আর বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে না। জমির উর্বরতা সার দিয়ে বাড়ানো যায়। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষ করলে ধানের উৎপাদন বাড়বে। এদিকে আমাদের যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন।

যাচাই করি
তোমার লেখা প্রবন্ধে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না, যাচাই করে দেখো।

১. গদ্যভাষায় রচিত কি না।
উত্তর: গদ্যভাষায় রচিত।
২. নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে লেখা কি না।
উত্তর: নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখা।

৩. ভূমিকা আছে কি না।
উত্তর: ভূমিকা আছে।
৪. উপংহার আছে কি না।
উত্তর: উপসংহার আছে।
৫. তথ্যগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজানো কি না।
উত্তর: ধারাবাহিকভাবে সাজানো।

কাজ ২: বলি ও লিখি— ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি নিজের ভাষার বলো এবং লেখো। [পাঠ্যবই পৃষ্ঠা ১২৪]

আমাদের লোকশিল্প

‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধে লেখক বাংলাদেশের লোকশিল্প ও লোক-ঐতিহ্যের বর্ণনা দিয়েছেন। এই বর্ণনায় লোকশিল্পের প্রতি তাঁর গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। আমাদের নিজ ব্যবহার্য অনেক জিনিসই কুটিরশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। শিল্পগুণ বিচারে এ ধরনের শিল্পকে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য করা হয়। আগে আমাদের দেশে যে সমস্ত লোকশিল্পের দ্রব্য তৈরি হতো তা অত্যন্ত উন্নতমানের ছিল। ঢাকাই মসলিন সেগুলোর অন্যতম।

ঢাকাই মসলিন অধুনা বিলুপ্ত হলেও ঢাকাই জামদানি শাড়ি সেই স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে জামদানি শাড়ি ভুবন বিখ্যাত এবং আমাদের গর্বের বস্তু। নকশিকাঁথা আমাদের একটি গ্রামীণ লোকশিল্প। এ শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায় হলেও এর কিছু কিছু নমুনা পাওয়া যায়। আপন পরিবেশ থেকে মেয়েরা নিজেদের মনের মতো করে কাঁথা সেলাইয়ের অনুপ্রেরণা পেতেন। কাঁথার প্রতিটি সুচের ফোঁড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে একেকটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, জীবনগাথা।

আমাদের দেশের কুমোরপাড়ার শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ছাড়াও পোড়ামাটি দিয়ে নানা প্রকার শৌখিন দ্রব্য তৈরি করে থাকেন। নানা প্রকার পুতুল, মূর্তি ও আধুনিক রুচির ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট ইত্যাদি তারা গড়েন। খুলনার মাদুর ও সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত। লোকশিল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পারি।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ কুইজ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান কী নামে পরিচিত?
উত্তর: খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান পটুয়া কামরুল হাসান নামে পরিচিত।

প্রশ্ন ২। ‘আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি কামরুল হাসানের কোন বই থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর: আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধটি কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোককৃষ্টি’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ৩। কুটিরশিল্পের মাধ্যমে তৈরি জিনিসগুলো শিল্পগুণ বিচারে কিসের মধ্যে গণ্য হয়?
উত্তর: কুটিরশিল্পের মাধ্যমে তৈরি জিনিসগুলো শিল্পগুণ বিচারে লোকশিল্পের মধ্যে গণ্য হয়।

প্রশ্ন ৪। এ দেশের তাঁতশিল্পের কোন বস্তুটি এককালে দুনিয়াজুড়ে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল?
উত্তর: এ দেশের তাঁতশিল্পের ঢাকাই মসলিন এককালে দুনিয়াজুড়ে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল।

প্রশ্ন ৫। ঢাকাই মসলিন কোন বাদশাহদের বিলাসের বস্তু ছিল?
উত্তর: ঢাকাই মসলিন মোগল বাদশাহদের বিলাসের বস্তু ছিল।

প্রশ্ন ৬। ঢাকাই মসলিন কারা তৈরি করতেন?
উত্তর: ঢাকাই মসলিন ঢাকার অদূরে ডেমরা এলাকার তাঁতিরা তৈরি করতেন।

প্রশ্ন ৭। একেকটা নকশিকাঁথা সেলাই করতে কত সময় লাগত?
উত্তর: একেকটা নকশিকাঁথা সেলাই করতে কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগত।

প্রশ্ন ৮। নারায়ণগঞ্জের কোন গ্রামে জামদানি কারিগরদের বসবাস?
উত্তর: নারায়ণগঞ্জের নওয়াপাড়া গ্রামে জামদানি কারিগরদের বসবাস।

প্রশ্ন ৯। এককালে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে কীসের বাসনপত্র প্রচলিত ছিল?
উত্তর: এককালে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে কাঁসা ও পিতলের বাসনপত্র প্রচলিত ছিল।

প্রশ্ন ১০। কীসের ঐতিহ্য এ দেশে বহু যুগের?
উত্তর: পোড়ামাটির কাজের ঐতিহ্য এ দেশে বহু যুগের।

প্রশ্ন ১১। এ দেশের লোকশিল্পের এক অতুলনীয় নিদর্শন কী?
উত্তর: এ দেশের লোকশিল্পের এক অতুলনীয় নিদর্শন নকশাদার ইট।

প্রশ্ন ১২। ঢাকার নবাব পরিবার শীতলপাটির দক্ষ কারিগরদের দিয়ে কী তৈরি করিয়েছিলেন?
উত্তর: ঢাকার নবাব পরিবার শীতলপাটির দক্ষ কারিগরদের দিয়ে হাতির দাঁতের শীতলপাটি তৈরি করিয়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৩। কোন অঞ্চলের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত?
উত্তর: সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত।

প্রশ্ন ১৪। হাতির দাঁতের শীতলপাটিটি কোথায় সংরক্ষিত আছে?
উত্তর: হাতির দাঁতের শীতলপাটিটি ঢাকার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

প্রশ্ন ১৫। কোনটি আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে?
উত্তর কাপড়ের ‘পুতুল আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও জীবনের প্রতিনিধিত্ব করে।

প্রশ্ন ১৬। লোকশিল্প সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব কাদের?
উত্তর: লোকশিল্প সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের দায়িত্ব আমাদের সকলের।

প্রশ্ন ১৭। ঐতিহ্য মানে কী?
উত্তর: ঐতিহ্য মানে অতীতকালের গৌরবের বস্তু।

প্রশ্ন ১৮। গদ্যভাষায় কোনো বিষয়ে সুবিন্যস্ত আলোচনাকে কী বলে?
উত্তর: গদ্যভাষায় কোনো বিষয়ে সুবিন্যস্ত আলোচনাকে প্রবন্ধ বলে।

প্রশ্ন ১৯। অনেক অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে, শেষ অনুচ্ছেদে লেখকের মতামত ও সিদ্ধান্ত থাকে কীসে?
উত্তর: অনেক অনুচ্ছেদে বিভক্ত থাকে, শেষ অনুচ্ছেদে লেখকের মতামত ও সিদ্ধান্ত থাকে প্রবন্ধে।

প্রশ্ন ২০। যাঁরা প্রবন্ধ লেখেন তাঁদেরকে কী বলে?
উত্তর: যাঁরা প্রবন্ধ লেখেন তাঁদেরকে প্রাবন্ধিক বলে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট-১: তোমার এলাকায় বা অন্য কোথাও লোকশিল্পের কোনো কাজ দেখে থাকলে তা নিজের মতো করে লেখো।

উত্তর: আমাদের এলাকায় অনেক মানুষ নিজ হাতে জাল বুনে থাকে। অবসর সময়ে ঘরের দরজায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জাল বোনে। অবশ্য এসব জাল বিক্রির উদ্দেশ্যে বোনা হয় না। এগুলো দিয়ে নিজেরা মাছ ধরে। মাছ ধরার আরও কিছু সামগ্রী যেমন- কোচ, টেটা ও বর্শা তারা নিজ হাতে তৈরি করে।

হাতে তৈরি এসব জিনিস বাজারের জিনিসের মতো এত সুন্দর না হলেও খুবই মজবুত হয়ে থাকে। বাঁশ দিয়ে অসংখ্য মানুষকে নানান কাজ করতে দেখেছি। আমাদের সমাজে বাঁশের ব্যবহার বহুবিধ। মাটি বা চালাঘরের মাঝখানে পার্টিশন দেওয়ার জন্য বাঁশ চিকন ও পাতলা করে কেটে বেড়া তৈরি করা হয়। একইভাবে বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার নানান যন্ত্র তৈরি হয়। বাঁশ দিয়ে খাঁচা, মই ইত্যাদি তৈরি করতে দেখেছি। কাঁথা সেলাই আমাদের গ্রামবাংলার খুবই সাধারণ একটি চিত্র।

ধানের মৌসুম ছাড়া প্রায় সারা বছরই কেউ না কেউ তাদের নিজেদের জন্য কাঁথা সেলাই করে থাকে। কোনো কোনো এলাকায় মা নিজ হাতে কাঁথা সেলাই করে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর প্রচলন আছে। এসব শিল্পকর্ম দৃশ্যত অত আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু এসবের ভেতর লুকিয়ে থাকে মানুষের স্মৃতি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সনাতনী পদ্ধতিতে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা থেকে কাপড় বোনা দেখেছি। তবে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়নি। একটু দূর থেকে একবারই দেখেছি।

অ্যাসাইনমেন্ট-২: তুমি কোথাও বেড়াতে গিয়ে দেখলে কিছু মানুষ মাটি দিয়ে এক বিশেষ পদ্ধতিতে নানান জিনিসপত্র তৈরি করছে। আমাদের লোকশিল্প’ প্রবন্ধ অনুসারে তোমার দেখা শিল্পকর্মগুলো মূল্যায়ন করো।

উত্তর: পোড়ামাটি দিয়ে নানান প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করা এ দেশে বহু যুগের ঐতিহ্য। এককালে মাটির হাঁড়িতে ভাত তরকারি রান্নাবান্না হতো। এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করে। মাটির হাঁড়িতে দই খুব ভালো হয়। আখ বা খেজুরের গুড় মাটির পাত্রে রাখা হয়। এতে এগুলোর স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকে।

খেজুরের রস মাটির পাত্রে রাখার প্রচলন আছে। মাটি দিয়ে এসব জিনিসপত্র যারা তৈরি করে তাদেরকে কুমোর বলে। হাঁড়ি, পাতিল, মাটির কলস, পুতুল, দইয়ের পাতিল, সানকি, বাসন ইত্যাদির একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল। কুমোরেরা তখন এসব তৈরিতে সারা দিন ব্যস্ত থাকত। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এসব জিনিসের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। এগুলোর বিকল্প চলে এসেছে।

অবশ্য ঘরবাড়ি সাজানোর উপকরণ হিসেবে নানা ধরনের শৌখিন সামগ্রী যেমন- ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট, কৌটা, বাক্স ইত্যাদি রুচিশীল জিনিসের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এককালের প্রাচীন স্থাপনা, দুর্গ, কেল্লা, মিনার, মসজিদ ও মন্দিরের গায়ে যেসব চোখ জুড়ানো ও দৃষ্টিনন্দন নকশা দেখা যায় তা আমাদের দক্ষ কারিগরদের এক অতুলনীয় নিদর্শন।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। ঢাকাই মসলিন সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর: দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঢাকাই মসলিন তাঁতিদের এক অমূল্য সৃষ্টি। মোগল সম্রাটদের বিলাসের বস্তু ছিল ঢাকাই মসলিন। মসলিন কাপড় এত সূক্ষ্ম সুতা দিয়ে তৈরি হতো যে ছোট্ট একটি আংটির ভেতর দিয়ে কয়েকশ গজ কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া যেত।

প্রশ্ন ২। নকশিকাঁথার সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর: এক সময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নকশিকাঁথা তৈরির রেওয়াজ ছিল। সাধারণ মানের একেকটি নকশিকাঁথা তৈরিতে সময় লাগত কমপক্ষে ৬ মাস। নকশিকাঁথার বিচিত্র সব নকশার আড়ালে লুকিয়ে থাকে একেকটি পরিবারের কাহিনি, তাদের পরিবেশ, তাদের জীবনগাথা।

প্রশ্ন ৩। নকশিকাঁথা সেলাইয়ের উপযুক্ত সময় কখন?
উত্তর: বর্ষাকালে যখন মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে চারদিকে পানি থৈ থৈ করে, ঘর থেকে বের হওয়া যায় না, তখন নকশিকাঁথা সেলাইয়ের উপযুক্ত সময়। মেয়েরা সংসারের কাজ শেষ করে খাওয়া-দাওয়া সেরে পাটি বিছিয়ে পানের বাটা সাথে নিয়ে পা মেলে নকশিকাঁথা সেলাই করতে বসতেন।

প্রশ্ন ৪। জামদানি সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর: নারায়ণগঞ্জ জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে জামদানি কারিগরদের বসবাস। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকায় শতাব্দীকাল ধরে জামদানি তাঁতশিল্প বিস্তার লাভ করেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর বাষ্প থেকে সৃষ্ট আর্দ্রতা জামদানি বোনার জন্য শুধু উপযোগীই নয়, বরং অপরিহার্য।

প্রশ্ন ৫। খন্দর বা খাদি কাপড়ের বিশেষত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: শহর কিংবা গ্রাম সবজায়গাতেই খদ্দরের সমাদর আছে। খাদি কাপড়ের সবটাই প্রস্তুত হয় হাতে। তুলা থেকে সুতা কাটা হয় হাতে। হস্তচালিত তাঁতে হাতে কাটা সুতায় যে কাপড় প্রস্তুত করা হয়, সেই কাপড়ই প্রকৃত খাদি।

প্রশ্ন ৬। উপজাতিদের কাপড় তৈরির বর্ণনা দাও।
উত্তর: চাকমা, চুকি, মুরং, মণিপুরি মেয়েরা তাদের নিজেদের ও পুরুষদের পরিধেয় কাপড় নিজেরাই বুনন করে থাকে। তাদের তৈরি কাপড়গুলো সাধারণত মোটা ও টেকসই হয়ে থাকে। নকশা, রং ও বুনন কৌশল সবই তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী হয়ে থাকে।

প্রশ্ন ৭। কাঁসা, পিতলের জিনিসপত্র কীভাবে তৈরি হয়?
উত্তর: শত শত গ্রামা কারিগর কাঁসা ও পিতলের বিচিত্র সব তৈজসপত্র তৈরি করে। প্রথমে মাটির ছাঁচ করে তাতে ঢেলে দেওয়া হয় গলিত কাসা। ধাতু ঠান্ডা হয়ে গেলে মাটির ছাঁচটি ভেঙে ফেললেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে বদনা, বাটি, গ্লাস, থালা ইত্যাদি। তারপর এগুলো পালিশ করা হয়।

প্রশ্ন ৮। মাটির তৈরি জিনিসের বর্ণনা দাও।
উত্তর: বাংলাদেশের পালপাড়া এবং কুমোরপাড়ার বাসিন্দারা সারা বছরই মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। মাটির কলস, হাঁড়ি, পাতিল, গানকি, ফুলদানি, ছাইদানি, চায়ের সেট এবং ঘর সাজানোর নানা ধরনের শৌখিন সামগ্রী মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। এছাড়াও প্রাচীন মসজিদ, মন্দিরের গায়ে নকশাদার ইট এ দেশের লোকশিল্পের অতুলনীয় নিদর্শন।

প্রশ্ন ৯। শীতলপাটি সম্পর্কে যা জান লেখো।
উত্তর: গ্রীষ্মকালে শীতলপাটির ব্যবহার আরামদায়ক। পাশাপাশি শীতলপাটির নকশা একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। এক সময় শীতলপাটির বহু সুদক্ষ কারিগর ছিল। এসব কারিগর দিয়ে এককালে ঢাকার নবাব পরিবার হাতির দাঁতের শীতলপাটি তৈরি করিয়েছিলেন। জাদুঘরে এটি এখনও সংরক্ষিত আছে।

প্রশ্ন ১০। বাঁশ শিল্পের আলোচনা করো।
উত্তর: আমাদের জীবনে বাঁশের নানা রকম ব্যবহার রয়েছে। বাঁশ দিয়ে আকজকাল আধুনিক রুচির নানা ব্যবহারিক সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিদেশেও এগুলোর বিপুল চাহিদা রয়েছে।

প্রশ্ন ১১। লোকশিল্প সংরক্ষণ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: লোকশিল্প আমাদের ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য আছে, যা বিশ্বদরবারে দেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাদের অনেক ঐতিহ্য থাকলেও তা আজ বিলুপ্তপ্রায়। এগুলো আবার বাঁচিয়ে তুলতে হবে। তাহলে সমগ্র বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে।

প্রশ্ন ১২। অঞ্চল বা জেলাভেদে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য লোকশিল্প কোনগুলো?
উত্তর: ঢাকাই মসলিন ঢাকার অদূরে ডেমরায় সৃষ্টি হয়। নারায়ণগঞ্জের নওয়াপাড়া গ্রামে জামদানি শিল্প বিস্তার লাভ করে। কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে খাদি কাপড় তৈরি হয়। রাঙামাটি, বান্দরবান, রামগড় এলাকায় এবং সিলেটের মাছিমপুরে মোটা ও টেকসই খাদি কাপড় তৈরি হয়। খুলনার মাদুর আর সিলেটের শীতলপাটি সকলের কাছে পরিচিত।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – বিবরণমূলক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ – তথ্যমূলক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ – বিশ্লেষণমূলক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ – কল্পনানির্ভর লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ – কবিতা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – গান
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ – গল্প


আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।