|

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ – কল্পনানির্ভর লেখা

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ: ‘সাত ভাই চম্পা’ কল্পনানির্ভর একটি রূপকথার গল্প। গল্পটি লিখেছেন বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার। বাংলাদেশে মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত অনেক রূপকথার গল্প সংগ্রহ করে তিনি কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা এ রকম একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘ঠাকুরমার ঝুলি’।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ পাঠ পর্যালোচনা

কল্পনা ও বাস্তবের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও এসব গল্প শিশু-কিশোরদের আনন্দ দেয়। কাল্পনিক যেকোনো বিষয়, যেটার অস্তিত্ব বাস্তব জীবনের উদাহরণের সঙ্গে মেলে না। তা-ই হলো কল্পনানির্ভর লেখা। এ ধরনের লেখার সঙ্গে অনেক সময়ে বাস্তব জীবনের তথ্য, ঘটনা, বস্তু, প্রাণী ইত্যাদির সম্পর্ক থাকতে পারে, আবার বাস্তব-অবাস্তব ধারণার সংমিশ্রণও থাকতে পারে। নানা ধরনের রূপকথা, উপকথা, প্রচলিত ভৌতিক কাহিনি, কমিকস ইত্যাদি তার উদাহরণ।

‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পে অনেক চরিত্র আছে। যেমন: রাজা, বড়ো রানি, মেজো রানি, সেজো রানি, নোয়া রানি, কনে রানি, ছোটো রানি, দুয়োরানি, মালি, ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী, রাজপুত্র, রাজকন্যা ইত্যাদি। এ গল্পের বেশ কিছু ঘটনা অবাস্তব যা বাস্তবে দেখা যায় না। বাস্তবে রাজা ও রানির কোমরে সোনার শিকল বেঁধে রাখা হয় না। মানুষের ঘরে ইঁদুর, ব্যাঙ, কাঁকড়ার জন্ম হয় না, পারুল ফুল আর চাঁপা ফুল কথা বলে না।

রূপকথার গল্পে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে যা বাস্তবেও দেখা যায়। যেমন- রাজার ছেলে নাও হতে পারে, মানুষ মানুষকে হিংসা করতে পারে, রাজার মনে দুঃখ-কষ্ট থাকতে পারে ইত্যাদি (ছোটে) রানির সাত রাজপুত্র আর এক রাজকন্যা পারুলকে নিয়ে হিংসা করে বড়ো রানিরা যে অন্যায় করেছে, সেই জন্যে রাজা তাদের কঠিন শাস্তি দিয়েছেন। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পের মূলকথা হলো- হিংসা করা ভালো নয়, হিংসা নিজের অমঙ্গল ডেকে আনে।


সাত ভাই চম্পা গল্প থেকে প্রশ্ন

ক. আগে এ ধরনের আর কোন গল্প পড়েছ?
উত্তর: আগে এ ধরনের রূপকথার গল্প, সিনবাদের কাহিনি, আলিফ লায়লার কাহিনি, পরিদের গল্প, পশু-পাখির কাহিনি ইত্যাদি পড়েছি।

খ. সাত ভাই চম্পা’ গল্পে কী কী চরিত্র আছে?
উত্তর: সাত ভাই চম্পা’ গল্পে রাজা, বড়ো রানি, মেজো রানি, সেজো রানি, নোয়া রানি, কনে রানি, ছোটো রানি, দুয়োরানি, মালি, ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী, রাজপুত্র, রাজকন্যা ইত্যাদি চরিত্র আছে।

গ. এখানকার কোন কোন ঘটনা বাস্তবে হয় না?
উত্তর: এখানকার রাজা ও রানির কোমরে সোনার শিকল বেঁধে রাখা হয় না; মানুষের ঘরে ইঁদুর, ব্যাঙ আর কাঁকড়ার জন্ম হয় না, মানুষকে হাঁড়ি-সরার ভিতর পুঁতে রাখলে বাঁচতে পারে না, কিংবা ফুল হয়ে ফুটতে পারে না; পারুল ফুল আর চাঁপা ফুল কথা বলে না।

ঘ. এখানকার কোন কোন ঘটনা বাস্তবেও ঘটতে পারে?
উত্তর: এখানকার যেসব ঘটনা বাস্তবে হতে পারে সেগুলো হলো রাজার ছেলে নাও হতে পারে, মানুষ মানুষকে হিংসা করতে পারে, রাজার মনে দুঃখ থাকতে পারে ইত্যাদি।

ঙ. এই গল্প পড়ে আমরা কী বুঝলাম?
উত্তর: এই গল্প পড়ে আমরা বুঝলাম- হিংসা করা ভালো নয়, হিংসা নিজের অমঙ্গল ডেকে আনে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ কুইজ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সংগৃহীত রূপকথার বইটির নাম কী?
উত্তর দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার সংগৃহীত রূপকথার বইটির নাম ঠাকুরমার ঝুলি’।

প্রশ্ন ২। ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পটি কোথা থেকে নেওয়া।
উত্তর: ‘সাত ভাই চম্পা’ গল্পটি ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বই থেকে নেওয়া।

প্রশ্ন ৩। রাজার সাত রানির মধ্যে কোন রানি খুব শান্ত?
উত্তর: রাজার সাত রানির মধ্যে ছোটো রানি খুব শান্ত।

প্রশ্ন ৪। ছোটো রানির ছেলে হবে শুনে রাজা আনন্দে কী করলেন?
উত্তর: ছোটো রানির ছেলে হবে শুনে রাজা আনন্দে রাজভাণ্ডার খুলে দিতে বললেন।

প্রশ্ন ৫। ছোটো রানির কয়টি ছেলে আর কয়টি মেয়ে সন্তান হলো?
উত্তর: ছোটো রানির সাতটি ছেলে আর একটি মেয়ে সন্তান হলো।

প্রশ্ন ৬। ছোটো রানির সন্তানদের পশিগাদায় কারা পুঁতে দিল?
উত্তর: ছোটো রানির সন্তানদের পাঁশগাদায় বড়ো রানিরা পুঁতে দিল।

প্রশ্ন ৭। বড়ো রানিরা রাজাকে ছোটো রানির সন্তান হিসেবে কী দেখাল?
উত্তর: বড়ো রানিরা রাজাকে ছোটো রানির সন্তান হিসেবে কতকগুলো ব্যাঙের ও ইঁদুরের ছানা দেখাল।

প্রশ্ন ৮। রাজা ছোটো রানির প্রতি রাগ করে কী করলেন?
উত্তর: রাজা ছোটো রানির প্রতি রাগ করে তাকে রাজপুরী থেকে বের করে দিলেন।

প্রশ্ন ৯। ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী হয়ে কে পথে পথে ঘুরতে লাগলেন?
উত্তর: ঘুঁটে-কুড়ানি দাসী হয়ে ছোটো রানি পথে পথে ঘুরতে লাগলেন।

প্রশ্ন ১০। মালি রাজাকে ফুল সম্পর্কে কী খবর দিল?
উত্তর: মাপি রাজাকে ফুল সম্পর্কে পাশগাদায় সাতটি চাপা ও একটি পারুল ফুল ফুটে থাকার খবর দিল।

প্রশ্ন ১১। রাজার হুকুমে মালি ফুল আনতে গেলে কী হলো?
উত্তর: রাজার হুকুমে মালি ফুল আনতে গেলে পারুল ফুলটি সাতটি চাঁপা ফুলকে ডেকে তুলল।

প্রশ্ন ১২। রাজা মালির সঙ্গে পাঁশগাদায় ফুটে থাকা ফুলের কাছে গেলে ফুলগুলো রাজাকে কী বলল?
উত্তর: রাজা মালির সঙ্গে পাঁশগাদায় ফুটে থাকা ফুলের কাছে গেলে ফুলগুলো ‘রাজাকে প্রথমে বড়ো রানি, পরে একে একে সব রানিকে ডাকতে বলল।

প্রশ্ন ১৩। সবশেষে ফুলগুলো রাজাকে কী করতে বলল?
উত্তর: সবশেষে ফুলগুলো রাজাকে ঘুঁটে-কুড়ানি দাসীকে ডেকে আনতে বলল।

প্রশ্ন ১৪ । ছোটো রানিকে দেখে ফুলেরা কী করল?
উত্তর: ছোটো রানিকে দেখে ফুলেরা আকাশ থেকে নেমে এলো।

প্রশ্ন ১৫। ছোটো রানির কাছে ফুলগুলো কী হলো?
উত্তর: ছোটো রানির কাছে ফুলগুলো সাতটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয়ে গেল।

প্রশ্ন ১৬। ছোটো রানির সন্তানদের দেখে বড়ো রানিদের কী অবস্থা হলো?
উত্তর: ছোটো রানির সন্তানদের দেখে বড়ো রানিরা ভয়ে কাঁপতে লাগল।

প্রশ্ন ১৭। রাজা ছোটো রানি আর সাত রাজপুত্র ও এক রাজকন্যাকে নিয়ে কী করলেন?
উত্তর: রাজা ছোটো রানি আর সাত রাজপুত্র ও এক রাজকন্যাকে নিয়ে রাজপুরীতে গেলেন।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ এক কথায় প্রকাশ

(ক) পায়ের অলংকার – মল।
(খ) নাকে পরার অলংকার – নথ।
(গ) যে ঘরে শিশু জন্ম নেয় – আঁতৃড়ঘর।
(ঘ) ঘুঁটে কুড়ায় যে – ঘুঁটে-কুড়ানি।
(ঙ) যারা পালকি বহন করে – বেহারা।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ বড় প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। “অনেকদিন আগে এক গ্রামে বাস করত এক কৃষক। কৃষিকাজ করে খুব কষ্টে দিন কাটাত সে। একদিন সে জমিতে হালচাষ করতে গিয়ে পিতলের একটা সিন্দুক খুঁজে পায়। বাড়িতে এসে সিন্দুক খুলে দেখে ভেতরে সোনা-দানা, মণি-মুক্তায় ভরা। তারপর থেকে তার আর কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকে না। সে আর তার বউ সুখে দিন কাটায়।” বলতে পারবে, এ ধরনের লেখাকে কী বলে? তুমি কি এ ধরনের আর কোনো গল্প পড়েছ?

উত্তর: এ ধরনের লেখাকে বলা হয় কল্পনানির্ভর লেখা। কল্পনানির্ভর লেখার সবকিছু বাস্তবে সম্ভব নয়। আমি আমার পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে অনেক রূপকথার গল্প পড়েছি। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- আলিফ লায়লার কাহিনি, সিনবাদের কাহিনি, পরিদের গল্প, ভূতের গল্প, রাজা-রানির গল্প ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২। কল্পনানির্ভর অনেক লেখাই তোমরা পড়েছো। বলো তো, কল্পনানির্ভর লেখার কোনো ঘটনা কি বাস্তবে ঘটতে পারে?

উত্তর: কল্পনানির্ভর লেখা মূলত বাস্তবে কখনো ঘটে না। যেমন- কল্পনানির্ভর লেখায় ফুল কথা বলে, মাছের বিয়ে হয়, খেঁকশিয়ালের বিয়ে হয়, পরি ডানা মেলে আকাশে উড়তে পারে, এমন অনেক কল্পকাহিনির উল্লেখ থাকে। কিন্তু এসব কোনো ঘটনাই বাস্তবে ঘটা সম্ভব নয়। তবে, রাজার রানি থাকে, রাজপুত্র অনেক সুন্দর হয়, অথবা রাজার সন্তান নেই, রানির মনে দুঃখ, এসব ঘটনা বাস্তবেও ঘটতে পারে।

প্রশ্ন ৩। আমাদের নানা উপকথা সমৃদ্ধ সাহিত্য রয়েছে। সেরূপ শিয়ালের বুদ্ধিমত্তামূলক একটি গল্প লেখো।

সাক্ষী শিয়াল

একজন সওদাগর একটি ঘোড়া নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিল। যেতে- যেতে তার বড্ড ঘুম পেল। তখন সে ঘোড়াটিকে এক গাছে বেঁধে, সে গাছের তলায় ঘুমিয়ে রইল।
এমন সময় এক চোর এসে সওদাগরের ঘোড়াটিকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সওদাগর ঘোড়ার পায়ের শব্দে জেগে উঠে বলল, ‘কী ভাই, তুমি আমার ঘোড়াটি নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’
চোর তাতে ভারি রাগ করে বলল, ‘তোমার ঘোড়া আবার কোনটা হলো?’
শুনে সওদাগর আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, ‘সে কী কথা! তুমি আমার ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছ, আবার বলছ কোনটা আমার ঘোড়া?’

দুষ্ট চোর তখন মুখ ভার করে বলল, ‘খবরদার! তুমি আমার ঘোড়াকে তোমার ঘোড়া বলবে না!
সওদাগর বলল, ‘কী? আমি আমার ঘর থেকে ঘোড়াটা নিয়ে এলাম, আর তুমি বলছ সেটা তোমার?
চোর বলল, ‘বটে! এটা তো আমার ঐ গাছের ছানা। এক্ষুনি হলো। তুমি বুঝে শুনে কথা কও, নইলে বড় মুশকিল হবে।’
তখন সওদাগর গিয়ে রাজার কাছে নালিশ করল, “মহারাজ, আমি গাছে আমার ঘোড়াটি বেঁধে ঘুমাচ্ছিলুম, আর ঐ বেটা এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।

রাজামশাই চোরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী হে, তুমি ওর ঘোড়া নিয়ে যাচ্ছ কেন?’
চোর হাত জোড় করে বলল, ‘দোহাই মহারাজ! এটি কখনই ওর ঘোড়া নয়। এটি আমার গাছের ছানা। ছানাটি হতেই আমি তাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম, আর ঐ বেটা উঠে বলছে কিনা ওটা ওর ঘোড়া, সব মিথ্যে কথা!’
তখন রাজামশাই বললেন, এটা তো ভারি অন্যায়। গাছের ছানা হলো, আর তুমি বলছ সেটা তোমার ঘোড়া। তুমি দেখছি বড় দৃষ্ট লোক। পালাও এখান থেকে!’ বলে তিনি ঘোড়াটা চোরকেই দিয়ে দিলেন।

সওদাগর বেচারা তখন মনের দুঃখ কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে চলল। খানিক দূরে গিয়ে এক শিয়ালের সাথে তার দেখা হলো। শিয়াল তাকে কাঁদতে দেখে বলল, ‘কী ভাই? তোমার মুখ এমন ভার দেখছি যে! কী হয়েছে?’
সওদাগর বলল, ‘আর ভাই, সে কথা বলে কী হবে? আমার ঘোড়াটি চোরে নিয়ে গেছে। রাজার কাছে নালিশ করতে গেলাম। সেখানে চোর বলল কি না ওটা তার গাছের ছানা! রাজামশাই তাই শুনে ঘোড়াটি চোৱকেই দিয়ে দিয়েছেন।’
এই কথা শুনে শিয়াল বলল, ‘আচ্ছা, এক কাজ করতে পার?’
সওদাগর বললে, ‘কী কাজ?’
শিয়াল বলল, ‘তুমি আবার রাজামশাইয়ের কাছে গিয়ে বল, মহারাজ, আমার একজন সাক্ষী আছে। আপনার বাড়িতে যদি কুকুর না থাকে, তাহলে সেই সাক্ষীটিকে নিয়ে আসতে পারি।’

তখন সওদাগর আবার রাজার কাছে গিয়ে বলল, ‘মহারাজ, আমার একটি সাক্ষী আছে, কিন্তু আপনার বাড়ির কুকুরদের ভয়ে সে আসতে পারছে না। অনুগ্রহ করে যদি কুকুর তাড়িয়ে দেওয়ার হুকুম দেন, তবে আমার সাক্ষীটিকে নিয়ে আসতে পারি।’
তাই শুনে রাজামশাই তখনই সব কুকুর তাড়িয়ে দেওয়ার হুকুম দিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, এখন তোমার সাক্ষী আসুক।’
এসব কথা সওদাগর শিয়ালকে এসে বলতেই শিয়াল চোখ বুকে। টলতে টলতে রাজার সভায় এলো। সেখানে এসেই সে দেয়াে হেলান দিয়ে ঝিমাতে লাগল। রাজামশাই তা দেখে হাসতে হাসতে বললেন, ‘কে, শিয়াল পণ্ডিত? ঘুমাচ্ছ যে!’

শিয়াল আধ-মেলা চোখে মিট মিট করে তাকিয়ে বলল, “মহারাজ, কাল সারা রাত জেগে মাছ খেয়েছি, তাই আজ বড্ড ঘুম পাচ্ছে।
রাজা বললেন, ‘এত মাছ কোথায় পেলে?’
শিয়াল বলল, ‘কাল নদীর জলে আগুন লেগে সব মাছ এসে ডাঙায় উঠল। আমরা সকলে মিলে সারা রাত খেলাম, খেয়ে কী শেষ করতে পারি!”এই কথা শুনে রাজামশাই এমনই ভয়ানক হাসলেন যে, একটু হলেই তিনি ফেটে যেতেন। শেষে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললেন, ‘এমন কথা তো কখনো শুনিনি! জলে আগুন লাগে, এও কি কখনো হয়? এসব পাগলের কথা!

তখন শিয়াল বলল, ‘মহারাজ ঘোড়া গাছের ছানা হয় এমন কথাও কি কখনো শুনেছেন? সেটা যদি পাগলের কথা না হয়, তবে আমার এই কথাটার কী দোষ হলো?’ শিয়ালের কথায় রাজামশাই ভারি ভাবনায় পড়লেন। ভেবে-চিন্তে শেষে তিনি বললেন, তাই তো! ঠিক বলেছ! গাছের আবার কী করে ছানা হবে? সে বেটা তবে নিশ্চয় চোর। তখনই হুকুম হলো, ‘আন তো রে সেই চোর বেটাকে বেঁধে! অমনি দশ পেয়াদা গিয়ে চোরকে বেঁধে আনল।

আনতেই রাজামশাই বললেন, `মার বেটাকে পঞ্চাশ জুতো!” বলতে-বলতেই পেয়াদারা তাদের নাগরা জুতো খুলে চটাস চটাস চোরের পিঠে মারতে লাগল। সে বেটা পঁচিশ জুতো খেয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘গেলাম-গেলাম! আমি ঘোড়া এনে দিচ্ছি। আর এমন কাজ কখনো করব না!’ কিন্তু তার কথা আর তখন কে শোনে! পঞ্চাশ জুতো মারা হলে রাজা বললেন, শিগগির ঘোড়া এনে দে, নইলে আরও পঞ্চাশ জুতো!”

চোর তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ঘোড়া এনে দিল। তারপর তার নিজ হাতে তার নাক-কান মলিয়ে মাথা চেঁছে, তাতে ঘোল ঢেলে হতভাগাকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হলো। সওদাগর তার ঘোড়া পেয়ে শিয়ালকে আশীর্বাদ করতে লাগল। (সংকলিত)

প্রশ্ন ৪। ‘সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা’ এ বিষয়ের উপর একটি রূপকথার গল্প লেখ।

উত্তর: এক গ্রামে এক কাঠুরে বাস করত। একদিন সে এক নদীর ধারে কাঠ কাটছিল। হঠাৎ তার কুঠার নদীতে পড়ে গেল। নদীটি ছিল খুব গভীর। কাঠুরে সাঁতার কাটতে বা ডুব দিতে জানত না। তাই সে বিষণ্ণ মনে সেখানে বসে ছিল। তখন এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার ঘটল। কাঠুরের সামনে এক সুন্দরী পরি হাজির হলো। সে কাঠুরেকে মিষ্টি কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “তুমি এত বিষণ্ন কেন? তুমি কাঠ কাটছ না কেন?” কাঠুরে দুঃখিতভাবে উত্তর দিল, “আমার কুঠার নদীতে পড়ে গেছে। আমি এখন কাঠ কাটতে পারছি না।”

তখন পরি তাকে একটা স্বর্ণের তৈরি কুঠার দেখাল। সে তাকে জিজ্ঞেস করল এটা তার কি না। কাঠুরে কুঠারটি দেখল এবং বলল, “এটা আমার কুঠার নয়।” পরি তাকে রুপার তৈরি আরেকটি কুঠার দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, “এটা কি সেই কুঠার, যেটা তুমি হারিয়েছ?” কাঠুরে বলল, “না, এটা আমার নয়। আমার কুঠার লোহার তৈরি।” পরি তাকে হারানো কুঠারটি দেখাল। কাঠুরে তখন আনন্দচিত্তে বলল যে, এটা তার কুঠার। পরি খুবই সন্তুষ্ট হলো এবং তাকে স্বর্ণের ও রূপার তৈরি কুঠারটিও দিয়ে দিল। তখন কাঠুরে ধনী হলো এবং সুখে বাস করতে লাগল।

প্রশ্ন ৫। ‘চালাকের কথায় মন দেয়া উচিত নয়’- এ বিষয়ে একটি গল্প লেখো।

উত্তর: একদা এক কাক একটি গাছের ডালে বসে ছিল। এর ঠোঁটে এক টুকরা মাংস ছিল। হঠাৎ একটি শিয়াল সেখানে উপস্থিত হলো এবং গাছটির নিচে দাঁড়াল। ভালো কিছু খাওয়ার গল্প তার নাকে এলো। চারদিকে তাকিয়ে সে কাকের মুখে মাংসের টুকরাটি দেখতে পেল। মাংসের টুকরাটি পাওয়ার ব্যাকুল প্রত্যাশা তার মনে জাগ্রত কীভাবে সে মাংসের টুকরাটি পাবে? সে গাছে চড়তে পারে না। আর গাছে চড়তে পারলেও কি লাভ হতো?

কাক তাকে আসতে দেখে উড়ে যেত। সে কাকটিকে নিচে নেমে আসতে প্রলুব্ধ করতে পারে না। কারণ কাক ভালোভাবেই জানে শিয়াল কী খেতে পছন্দ করে। অবশেষে তার মাথায় এক দুষ্টবুদ্ধি এলো। সে নিজে নিজে বলল, “কাক হলো আমার জানা পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে দাম্ভিক। আমি তার তোষামোদ করব এবং সে মাংসের কথা ভুলে যাবে।” তাই সে তার মধুর কণ্ঠে বলল, “শুভ দিন, সুন্দর পাখি। কিন্তু কাক কোনো উত্তর করল না।

আরো পডুনঃ ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ – কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সে কেবল গর্বের সাথে গাছের ডালে পদসঞ্চালন করল। “আমার সাধ হয় যে আমার যদি তোমার মতো এমন সুন্দর চেহারা থাকত।” এবারও কোনো উত্তর এলো না, কিন্তু কাক সন্তুষ্ট হয়েছে এটা বোঝাতে তার মাথা জাগাল এবং এক দিক থেকে অন্যদিকে ঘোরাল “কী সুন্দর গলা এবং উজ্জ্বল চোখ!” শিয়াল বলল। “অন্য পাখিরা হয়তো তোমার প্রতি ঈর্ষান্বিত হবে।” এবারও কোনো জবাব এলো না। সে শুধু তার ডানা কিছুটা জাগাল এবং শিয়ালের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। “তোমার কণ্ঠ যদি তোমার চেহারা ও পোশাকের মতো সুন্দর হতো তবে তুমি হতে পাখিদের রানি।

কিন্তু মনে হয় তুমি আদৌ কথা বলতে পার না। কী পরিতাপের বিষয় যে তুমি বধির!” কাক ‘কা’ রবে জোরে চিৎকার করে উঠল। আর যখনই সে এটি করল, মাংসের টুকরাটি তার মুখ থেকে পড়ে গেল। শিয়াল দ্রুত তা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল এবং দৌড়ে চলে গেল। অসহায় কাক অবশেষে বুঝতে পারল যে, শিয়াল তাকে শুধু বোকা বানিয়েছে, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় – চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ – প্রায়োগিক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – বিবরণমূলক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ – তথ্যমূলক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ – বিশ্লেষণমূলক লেখা


আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।