|

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ – তথ্যমূলক লেখা

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ: ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ একটি তথ্যমূলক রচনা। এটি লিখেছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেন। এই রচনায় তিনি রোকেয়া মূল্যায়ন প্রস্তুতিও শানিত হবে। সাখাওয়াত হোসেন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তথ্য নানা ধরনের হতে পারে। তাই তথ্যমূলক রচনাও নানা রকম হয়। জীবনীও এক ধরনের তথ্যমূলক লেখা। এছাড়া নানা ধরনের বিশ্বকোষ গ্রন্থে কিংবা অনলাইনে উইকিপিডিয়ায় বহু ধরনের তথ্যমূলক রচনা পাওয়া যায়। এই লেখায় একজন মহীয়সী নারীর জীবনভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ পাঠ পর্যালোচনা

‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনায় সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হলো শিক্ষার প্রতি রোকেয়ার আকর্ষণ ও অনুরাগ। রোকেয়া যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেন, সেই সময়ে বাঙালি মুসলমান সমাজে শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন ছিল না। ফলে মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। মেয়েদের অবস্থান ছিল খুবই শোচনীয়। রোকেয়া তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর ভাগলপুরে স্বামীর নামে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১১ সালে এ স্কুলটি তিনি কলকাতায় স্থানান্তর করেন। এভাবে মেয়েদের শিক্ষা ও উন্নতির জন্য তাঁর চেষ্টা ছিল জীবনভর।

মানুষের জন্য, সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাঁরা বিখ্যাত হয়েছিলেন, এমন সুপরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে এ ধরনের তথ্যমূলক রচনা লেখা হয়। ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ রচনা থেকে তাঁর জীবনসংগ্রামের কাহিনি জানা যায়। রোকেয়ার লেখা বইয়ের কথাও জানা যায় এই রচনা থেকে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি। যেমন: ‘মতিচূর’ প্রথম খণ্ড (১৯০৪), ‘সুলতানাজ ড্রিম’ (১৯০৮), ‘মতিচূর’ দ্বিতীয় খণ্ড (১৯২২), ‘পদ্মরাগ’ (১৯২৪) ও ‘অবরোধবাসিনী’ (১৯৩১)। তিনি ছিলেন নারীশিক্ষা ও নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অগ্রপথিক।


রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রচনা থেকে প্রশ্ন

ক. এই লেখায় কী ধরনের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর: এই লেখায় একজন মহীয়সী নারীর জীবনভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।

খ. এই লেখার কোন তথ্যটি তোমার ভালো লেগেছে?
উত্তর: এই লেখার আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ ও অনুরাগ। মেয়েদের শিক্ষা ও উন্নতির জন্য জীবনভর প্রচেষ্টা।

গ. এ ধরনের আর কী কী রচনা তুমি আগে পড়েছ?
উত্তর: এর আগে হযরত মুহাম্মদ (সা) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এ ধরনের লেখা পড়েছি।

ঘ. কাদের নিয়ে এ ধরনের লেখা তৈরি করা হয়?
উত্তর: যাঁরা বিখ্যাত মানুষ, মানুষের জন্য অনেক কিছু করে গেছেন, এমন সুপরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে এ ধরনের দেখা তৈরি করা হয়।

ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?
উত্তর: এই লেখা থেকে বেগম রোকেয়ার জীবন-সংগ্রামের কাহিনি জানতে পেরেছি। তাঁর লেখা বিভিন্ন বইয়ের কথা জানতে পেরেছি। তাঁর নানা মহৎ কাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বিশেষভাবে জানতে পেরেছি প্রতিকূল সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে রোকেয়ার নানারূপ লড়াই সম্পর্ক।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ কুইজ প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামের তথ্যমূলক লেখাটি কে লিখেছেন?
উত্তর: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ নামের তথ্যমূলক লেখাটি বিখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেন লিখেছেন।

প্রশ্ন ২। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন ৩। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন ৪। রোকেয়ার সময়ে মেয়েদের শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল না কেন?
উত্তর: রোকেয়ার সময়ে মেয়েদের শিক্ষালাভের সুযোগ ছিল না পর্দাপ্রথার কারণে।

প্রশ্ন ৫। রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষার শিক্ষিত করেন কে?
উত্তর: রোকেয়াকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করেন বড়ো ভাই ইব্রাহিম সাবের।

প্রশ্ন ৬। কার অনুপ্রেরণায় রোকেয়া বাংলা সাহিত্য রচনায় আগ্রহী হন?
উত্তর: বড়ো বোন করিমুন্নেসার অনুপ্রেরণায় রোকেয়া বাংলা সাহিত্য রচনায় আগ্রহী হন ।

প্রশ্ন ৭। রোকেয়া তাঁর রচিত ‘মতিচূর’ দ্বিতীয় খণ্ড কাকে উৎসর্গ করেন?
উত্তর: রোকেয়া তাঁর রচিত ‘মতিচূর’ দ্বিতীয় খণ্ড বড়ো বোন করিমুন্নেসাকে উৎসর্গ করেন।

প্রশ্ন ৮। রোকেরা কী কী ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন?
উত্তর: রোকেয়া বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

প্রশ্ন ৯। ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় প্রকাশিত রোকেয়ার প্রথম রচনার নাম কী?
উত্তর: ‘নবপ্রভা’ পত্রিকায় প্রকাশিত রোকেয়ার প্রথম রচনার নাম “পিপাসা’।

প্রশ্ন ১০। রোকেয়ার ইংরেজি রচনার নাম কী?
উত্তর: রোকেয়ার ইংরেজি রচনার নাম ‘সুলতানাজ ড্রিম’।

প্রশ্ন ১১। রোকেয়ার ‘সুলতানাজ ড্রিম’ কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রোকেয়ার ‘সুলতানাজ ড্রিম’ ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন ১২। রোকেয়া দুস্থ নারীদের সেবায় কোন সংগঠন স্থাপন করেন?
উত্তর: রোকেয়া দুস্থ নারীদের সেবায় আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম’ নামে একটি মহিলা সংগঠন স্থাপন করেন।

প্রশ্ন ১৩। বিংশ শতাব্দীর সূচনায় রোকেয়া কাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন?
উত্তর: বিংশ শতাব্দীর সূচনায় রোকেয়া নারীদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।

প্রশ্ন ১৪। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালি সমাজে কী হিসেবে অন্বেয়?
উত্তর: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাঙালি সমাজে নারীশিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে গ্রন্থেয়।

প্রশ্ন ১৫। রোকেয়ার ‘মতিচুর’ কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রোকেয়ার ‘মতিচূর’ প্রথম খণ্ড ১৯০৪ সালে এবং দ্বিতীয় খণ্ড ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন ১৬। রোকেয়া রচিত ‘পদ্মরাগ’ কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রোকেয়া রচিত ‘পদ্মরাগ’ ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন ১৭। রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ গ্রন্থটি কত সালে প্রকাশিত হয়?
উত্তর: রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ গ্রন্থটি ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়।

প্রশ্ন ১৮। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কয়টি?
উত্তর: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচটি।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট-১: ছবির (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) ব্যক্তিটি কে? তাঁর সম্পর্কে তথ্যমূলক লেখা লেখো।

ছবির ব্যক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৮৬১ সালের ৭ই মে (বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫শে বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদা দেবী।

চার বছর বয়সে গৃহশিক্ষকের কাছে রবীন্দ্রনাথের লেখাপড়া শুরু হয়। কিছু দিন পর তাঁকে ভর্তি করা হয় নর্মাল স্কুলে। পরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, বেঙ্গল একাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেন। কিন্তু স্কুলে তাঁর ভালো লাগত না। তাই বাড়িতেই বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা করা হয়।

শৈশব থেকেই রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি ‘বনফুল’ কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, দার্শনিক, সাহিত্যিক, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার ও ছোটগল্পকার। তিনি অসংখ্য গানও লিখেছেন। তাঁর লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ‘শান্তিনিকেতন’ ও ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ তাঁর মহান কীর্তি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা ও বাঙালির কবি। তাঁর সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্বের দরবারে গৌরবের আসন লাভ করেছে। ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট (বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২শে শ্রাবণ) তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর সৃষ্টি যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।

অ্যাসাইনমেন্ট-২: তোমার বিদ্যালয়ে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তুমি তথ্য- উপাত্তসহ একটি লেখা লেখো। লেখার একটি শিরোনাম দাও।

বুদ্ধিজীবী দিবস

দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতি সচেতন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ সুশিক্ষিত মানুষ, যারা বুদ্ধির চর্চা করেন, বুদ্ধিকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে দেশ ও স্বজাতিসহ বিশ্ববাসীর কল্যাণ চিন্তা ও সেবা করেন এমন ব্যক্তিত্বই বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হন। শিক্ষক, গবেষক, লেখক, সাংবাদিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, চিকিৎসক, স্থপতি, ভাস্কর, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্রকার, অভিনেতা- এঁরা বুদ্ধিজীবীর পর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিত্ব। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে যে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করেছিল, তাকেই বলা হয় বুদ্ধিজীবী হত্যা।

এ দেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের তালিকা তৈরি করে নির্মমভাবে তাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করার আগে তাঁদের ওপর চলেছে নানা প্রক্রিয়ায় অত্যাচার ও নির্যাতন। কেননা তাঁরা ছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের শত্রু। কারণ হানাদারদের সমস্ত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করার জন্য তাঁরাই যেকোনো আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকতেন, পরামর্শ ও সাহস জোগাতেন।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জনের দুদিন আগে বুদ্ধিজীবীদের ওপর সর্বশেষ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। তালিকা অনুযায়ী তাঁদেরকে অপহরণ করে নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর রায়েরবাজার, মিরপুর, মহাখালী, তেজগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়। স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ১৪ ডিসেম্বরকে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতিবছরই এ দেশের মানুষ এই দিনে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এবং তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগকে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করে।

অ্যাসাইনমেন্ট-৩: তুমি যদি একটি তথ্যমূলক লেখা লেখো কাদের নিয়ে লেখবে?

উত্তর: আমি যদি তথ্যমূলক লেখা লিখি তাহলে আমাদের সমাজের ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে লিখব। যে লেখাটি নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে লেখা হয় সেটি হলো তথ্যমূলক লেখা। যাঁরা সমাজ এবং সমাজের মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন তাঁদের নিয়ে এ ধরনের লেখা তৈরি করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন। যেসব দেশপ্রেমিকের আত্মদানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ তাঁদের মধ্যে একজন। স্বাধীনতার পর তাঁকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি, নড়াইলের মহেশখালি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ আমানত শেখ, মাতার নাম জেন্নাতুন্নেসা। নূর মোহাম্মদ শেখ স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে হাই স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানকার লেখাপড়া শেষ না করেই তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদান করেন। নূর মোহাম্মদ শেখ ১৯৫৯ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। চাকরিজীবনে তিনি ছিলেন সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, কর্তব্যপরায়ণ ও সাহসী। অন্যদের তুলনায় তাঁর দক্ষতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে নূর মোহাম্মদ শেখ ছুটি কাটানোর সময়েই মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর যশোরের পাকিস্তানি ছুটিপুর ক্যাম্পে কিছু রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনা অবস্থান করছিল। এই ক্যাম্পের সামান্য দূরে গোয়ালহাটি গ্রামে টহল দিচ্ছিলেন অধিনায়ক নূর মোহাম্মদসহ আরও চারজন মুক্তিযোদ্ধা। ঐ দিন সকাল ৯টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ সময় অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়া হালকা মেশিনগান থেকে গুলি ছুড়তে থাকেন।

অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি প্রতিপক্ষের গুলিতে আহত হন। নূর মোহাম্মদ শেখ তাঁকে এক হাতে কাঁধে তুলে নিয়ে অন্য হাতে গুলি চালাতে থাকেন। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকলেন। সংখ্যায় কম বলে তিনি সহযোদ্ধাদের পিছিয়ে গিয়ে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন। হঠাৎ শত্রুর মর্টারের গোলার আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। অধিনায়কোচিত আদেশ দিলেন তাঁকে রেখে চলে যেতে। সহযোদ্ধারা তাঁকে রেখে চলে যান। রক্তাক্ত ভূলুণ্ঠিত অর্ধমৃত নূর মোহাম্মদ শেখ গুলি ছুড়ে তাঁদেরকে নিরাপদে চলে যেতে সাহায্য করেন। শহিদ হলেন নূর মোহাম্মদ শেখ। নিজের জীবন তুচ্ছ করে তিনি সেদিন রক্ষা করেছিলেন সহযোদ্ধাদের জীবন ।

অ্যাসাইনমেন্ট-৪: তথ্যমূলক লেখা কীভাবে লিখতে হবে এবং যে যে বিষয়ে নিয়ে লেখা যেতে পারে তার তালিকা তৈরি করো।

কীভাবে লিখব
১. লেখায় বিবরণ থাকবে। নিজের মতামত বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রধান হয়ে উঠবে না।
২. যে বিষয় লিখবে তার তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করতে হবে।
৩. তথ্য-উপাত্ত, ছক বা সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করবে।

যে যে বিষয় নিয়ে লেখা যেতে পারে
১. ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা, দৃশ্য, কাহিনি।
২. প্রাণী, উদ্ভিদ, খাবারের বৈশিষ্ট্য ও উপকরণ, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
৩. বিশেষ স্থান, বই, গল্প, কবিতা।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ এক কথায় প্রকাশ

(ক) বইটি কাকে উৎসর্গ করা হয়েছে যে পাতায় লেখা থাকে – উৎসর্গপত্র।
(খ) যার আলস্য নেই – নিরলস।
(গ) ভবিষ্যতে কী হবে তা যিনি আন্দাজ করতে পারেন – দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ।
(ঘ) বর্ণমালা শেখার বই – বর্ণপরিচয়।
(ঙ) নারীদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার সামাজিক রীতি – পর্দাপ্রথা

(চ) অনেক বড়ো – বিশাল।
(ছ) জায়গা বদল – স্থানান্তর।
(জ) স্নেহের প্রসাদে — আদরে।
(ঝ) যিনি পথ দেখান – পথপ্রদর্শক।
(ঞ) অত্যন্ত খারাপ – শোচনীয়।


৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ বড় প্রশ্ন

প্রশ্ন ১। বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে একটা তথ্যমূলক রচনা তৈরি করা হয়। তুমি কি একটা তথ্যমূলক লেখা লিখতে পারবে? লিখে দেখাও।

আব্দুর রহিম মাস্টার

আব্দুর রহিম মাস্টার ১৯২৩ সালের ২৬ জুন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার ইসলামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নঈম উল্লা সাহেব অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই আব্দুর রহিম মাস্টার ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ইসলামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষালাভ করে এরালিয়া বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৪০ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ‘এমসি কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় লেটার মার্কস পেয়ে পাস করে সবার নজরে আসেন।

১৯৪৩ সালে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫২ সালে। ১৯৫৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি থেকে চার বিঘা জমি দান করেন। নিজের এলাকায় ভালো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য।

১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হাজি নঈম উল্লা উচ্চ বিদ্যালয়।’ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র সংগ্রহ করেন স্কুলের জন্য। এলাকার মানুষের অনুরোধে তিনিই হন স্কুলের প্রিন্সিপাল। খুব অল্প সময়েই স্কুলের নাম- ডাক ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। দলে দলে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় এসে। আব্দুর রহিম মাস্টার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সশরীরে অংশ নেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মোকাবিলায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলে পড়ে তোলেন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প।

বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তাঁর এই অবদান কোনো দিন কেউ ভুলবে না। ১৯৯২ সালে তিনি শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান। নিজ গ্রামে তৈরি করেন ‘স্বাধীন পাঠাগার’ নামে একটা লাইব্রেরি। ১৯৯৫ সালে গ্রামে তৈরি করেন ‘বায়তুস সালাম’ নামে একটা মসজিদ। আব্দুর রহিম মাস্টার গরিব অসহায় মানুষের জন্য, তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। মেধাবী পরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছেন নিজ কাঁধে। ২০০৬ সালে এই মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রশ্ন ২। ফেসবুক কীভাবে আবিষ্কার হলো সেই তথ্য নিয়ে একটি তথ্যমূলক লেখা দেখো।

উত্তর : ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় এই সময়ের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’। আমেরিকান কম্পিউটার প্রোগ্রামার ও সফটওয়্যার ডেভেলপার মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার রুমমেট ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিৎস এবং ক্রিস হিউজেসের সাহায্য নিয়ে ফেসবুক নির্মাণ করেন।

প্রথমে ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ফেসম্যাশ ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মূলত ঐ ফেসম্যাশ ওয়েবসাইট থেকেই ফেসবুকের চিন্তা মাথায় আসে জুকারবার্গের। আর সেই ভাবনা থেকেই ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি দি ফেসবুক ডট কম ডোমেইন কিনে ফেলেন তিনি।

মার্ক জুকারবার্গ যখন “দ্য ফেসবুক” নামে নতুন সাইটটি চালু করেন তার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১২০০ জন শিক্ষার্থী এতে রেজিস্ট্রেশন করেন। প্রথমদিকে এটি শুধু হার্ভার্ড কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও দুই মাসের মাথায় এটি বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

জুন মাসের মধ্যে সাইটে প্রায় দেড় লাখ (১,৫০,০০০) ইউজার ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় এক মিলিয়নে। অবশেষে ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে জাকারবার্গ শ্রুতিমধুর নামের কারণে “দ্য ফেসবুক (The Facebook)” কে সংক্ষিপ্ত করে “ফেসবুক (Facebook)” রাখেন এবং এই নামে একটি ডোমেইন কেনেন। তবে এজন্য খরচ হয়েছিল দুই লাখ মার্কিন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

প্রশ্ন ৩। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা দিবসকে নিয়ে একটি তথ্যমূলক লেখা লেখো।

স্বাধীনতা দিবস

২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমাদের অবিসংবাদী নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পাকিস্তানের সামরিক সরকার বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে এবং গভীর ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাসহ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেন- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এ দেশের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়ের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। তারপর থেকে এ দেশের মানুষ প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করছে।

প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশের জাতীয় কবি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি তথ্যমূলক লেখা লেখো।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, বিশ্বের মেহনতি মানুষের মুক্তির দিশারি। তাই তিনি শুধু বিদ্রোহের নন, বিপ্লবের কবি বলেও পরিচিত।

বাংলা ১৩০৬ সনের ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ইংরেজি ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জায়েদা খাতুন। শৈশবে কবির নাম ছিল দুখু মিয়া। তিনি গ্রামের মন্তবে শিক্ষালাভ করেন। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন প্রথম মহাযুদ্ধ আরম্ভ হলে তিনি বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি চলে যান।

যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে নজরুল দেশকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য এ দেশবাসীর মনে স্বাধীনতার চেতনা জাগানোর লক্ষ্যে কলম ধরেন। এই সময়েই তিনি বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা করেন। তাঁর বিদ্রোহ ও বিপ্লবের অগ্নিময় বাণী ব্রিটিশ সরকারকে রীতিমতো বিচলিত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে। ফলে ব্রিটিশ সরকার কবিকে জেলে পাঠায়। কিন্তু জেলে থেকেও কবি নিরস্ত ছিলেন না। “কারার ঐ লৌহ-কপাট”, “শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল’ ইত্যাদি গান তাঁর জেলবন্দি জীবনেরই রচনা।

নজরুল একাধারে কবি, গায়ক, সুরকার ও সংগীত রচয়িতা ছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা, বিষের বাপী, সিন্ধু হিন্দোল, চক্রবাক ইত্যাদি; সংগীতের মধ্যে বুলবুল, গুলবাগিচা, কুহেলিকা, মৃত্যুক্ষুধা ইত্যাদি উপন্যাস; আলেয়া ও ঝিলিমিলি ইত্যাদি নাটক প্রসিদ্ধ। তাঁর রচিত ইসলামি নাত, হামদ, গজল, শ্যামাসংগীত, আধুনিক গান, দেশাত্মবোধক ও ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া ইত্যাদি গান সংগীত জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।

১৯৪২ সালে নজরুল মস্তিষ্কের পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসায় তেমন উন্নতি হয়নি। ১৯৭২ সালে তাঁকে ঢাকায় আনা হয় এবং নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সকাল দশটায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকার পিজি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

প্রশ্ন ৫। নিচের ছবিটি (টেলিফোন আবিষ্কার) দেখে তথ্য সংগ্রহ করে একটি তথ্যমূলক লেখা।

উত্তর : স্রষ্টাকে ভুলে গেলেও সৃষ্টির মহিমা কিন্তু থেকেই যায়। টেলিফোন সারা বিশ্বে এখন একটি জরুরি মাধ্যম। বর্তমান সময়ে ফোন ছাড়া একটি মুহূর্তও চলে না আমাদের। এই ফোন যন্ত্র যিনি আবিষ্কার করেন আমরা অনেকেই হয়তো ভুলতে বসেছি তাঁর নাম। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল সেই মহান ব্যক্তি, যিনি টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত।

জন্মের ২৯ বছর পর তাঁর জন্মদিনে ১৮৭৬ সালের ৩রা মার্চ তিনি আবিষ্কার করেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে কথা বলাব ও শোনার অভাবনীয় যন্ত্র টেলিফোন। পরবর্তী জীবনে বেল আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন যার মধ্যে রয়েছে উড়ো নৌকা এবং বিমান চালন বিদ্যা। ১৮৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেল। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৪৭ সালের ৩রা মার্চ স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় জন্মগ্রহন করেন।

তাঁর পিতা আলেকজান্ডার মেলভিল বেল এবং মাতা এসিজা গ্রেইস সাইমন্ডস বেল ডাইদের মতো আলেকজান্ডারও ছোটবেলায় পরিবারে বাবার কাছ থেকেই শিক্ষা লাভ করেন। যদিও খুব অল্প বয়সেই তাঁকে এডিনবার্গের রয়েল হাই স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানে তিনি চার ক্লাস পর্যন্তই পড়াশুনা করেন এবং মাত্র ১৫ বছর বয়সেই স্কুল ছেড়ে দেন। শিশুকাল থেকেই তিনি প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে অত্যন্ত কৌতূহলী ছিলেন এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করতেন।

তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে পেরেকের ব্রাশ এবং ঘূর্ণায়মান প্যাডেলের সমন্বয়ে একটি গম পেষাই যন্ত্র তৈরি করেন আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোনের অন্যতম আবিষ্কারক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ১৮৭৬ সালে তাঁকে টেলিফোনের প্রথম মার্কিন পেটেন্টের সম্মানে ভূষিত করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত বেলই টেলিফোন আবিষ্কারের কর্তৃত্ব লাভ করেন। আজ আমরা দিনে বহুবার উচ্চারণ করি হ্যালো শব্দটি। Hello শব্দটি প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের মুখেই। হ্যালো তাঁর বান্ধবীর নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো। কথিত আছে ১৮৭৬ সালে টেলিফোন আবিষ্কারের পর তিনি তার বান্ধবী হ্যালোকেই প্রথম ফোনটি করেছিলেন।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর টেলিফোন পেটেন্ট করেন ১৮৭৬ সালে। তিনি তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন যে টেলিফোন, সেটিকেই তিনি এক উটকো ঝামেলা মনে করতেন। এজন্যেই তিনি নিজের গবেষণা ও অধ্যয়ন কক্ষে কোনো টেলিফোন রাখতেন না। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল ১৯২২ সালের ২রা আগস্ট ৭৫ বছর বয়সে পানিসিয়াস অ্যানিমিয়া রোগে নোভা স্কটিয়া, কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন।

বেল মারা যাওয়ার পর আমেরিকার সকল টেলিফোনে এক মিনিটের জন্য অবিরাম রিং বাজানো হয়। মার্কিন প্রশাসনের ভাষ্য মতে, যে মহান ব্যক্তি মানুষে মানুষে যোগাযোগের এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেখানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে। আজ এই মহান আবিষ্কারকের ১৬৭তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। [লেখক : কোবিদ; সম্পাদনায় জানা অজানার পথিক]

প্রশ্ন ৬। নিচের ছবিটির (কান্তজির মন্দির) তথ্য সংগ্রহ করে তথামূলক একটি লেখা।

দিনাজপুর শহর থেকে পঞ্জগড়-তেঁতুলিয়া সড়কে মাত্র বিশ কি.মি. দূরত্বে কান্তজির মন্দিরের অবস্থান। সকাল আটটার মধ্যেই আমি ও আমার বন্ধুরা সবাই সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগরে উপস্থিত হলাম। দিনাজপুর- তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে কান্তনগরে যাওয়ার পথে পড়ে শীর্ণ এক নদী, নাম তার ঢেপা। ঢেপা নদীর তীর ঘেঁষে দুটি স্থাপনা চোখে পড়ল; একটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মন্দিরের কাঠামো, অন্যটি উঁচু এক মাটির প্রাচীর। কন্তনগরে অবস্থিত কান্তজির মন্দিরটি ‘নবরত্ন মন্দির’ নামেও পরিচিত।

কারণ তিনতলা এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিল। তবে কান্তজির মন্দির বিখ্যাত হয়েছে মন্দিরের গায়ে অপরূপ টেরাকোটার কাজের জন্যে। মন্দিরের দেয়ালের পোড়ামাটির ফলকগুলোকে টেরাকোটা বলে। টেরাকোটার কাজ বর্তমানে আমাদের দেশে খুবই দুর্লভ। মন্দিরটি যে ভিত্তি বেদির উপর অবস্থিত সেটি পাথরে তৈরি এবং ভূমি থেকে প্রায় এক মিটার উঁচু। বেদিটি বর্গাকার। আর এই বেদির উপরের মন্দিরটিও বর্গাকার। সব দিকেই মন্দিরগৃহটি টানা বারান্দা দিয়ে ঘেরা। সবদিকের বারান্দাতেই আছে দুটি করে স্তম্ভ ও তিনটি করে প্রবেশপথ। মন্দিরটির প্রথম তলার ছাদে চার কোনায় চারটি, দ্বিতীয় তলায় চার কোনায় চারটি এবং তৃতীয় তলার কেন্দ্রভাগে একটি চূড়া ছিল। এভাবে সব মিলিয়ে মোট নয়টি চূড়া থাকায় এই মন্দিরটি হলো একটি নবরত্ন মন্দির।

রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনি ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসের বহু ঘটনাই ফুটে উঠেছে এই মন্দিরের দেয়ালে দেয়ালে। পুতুল এই মন্দিরের টেরাকোটা শিল্পের এক বিশেষ দিকের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সেটি হচ্ছে, এটি একটি ধর্মমন্দির হলেও ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন বহু কিছুই, বিশেষ করে সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়ও ফুটে উঠেছে এটির দেয়ালের টেরাকোটার ফলকচিত্রে। যে যুগে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল সেই যুগে বাংলাদেশে বর্গি আর পর্তুগিজ জলদস্যুদের হামলা হতো প্রায়ই। মন্দিরের দেয়ালের সাঁটা ফলকে উৎকীর্ণ আছে পর্তুগিত সেনা বোঝাই জাহাজের ছবি। তৎকালীন নবাব-আমির- ওমরাহদের মজলিশ ও পোশাক-পরিচ্ছদের নানা ঢঙের ছবি।

মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তি বেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, দিনাজপুর রাজবংশের রাজা প্রাণনাথ রায় শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে ১৭২২ সালে রুক্মিণীকান্ত মন্দির হিসেবে এই মন্দিরের কাজ শুরু করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ সালে মন্দিরটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ সালে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। পোড়ামাটির ফলকে আবৃত কান্তজির মন্দির বাংলাদেশের পুরনো স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন। ফিরতি পথে বারবার মনে দোলা দিচ্ছিল স্থাপত্য, চিত্রকলা, সাহিত্য ও ইতিহাসের এরূপ সমন্বিত বিস্ময় দেখার অনির্বচনীয় আনন্দানুভূতি।

প্রশ্ন ৭। চিত্রটি দেখো। চিত্রের বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি তথ্যমূলক লেখা লেখো [চিত্র পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার]

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রতি আমি কেমন যেন একটা অনিবার্য আকর্ষণ অনুভব করি। সেই আকর্ষণেই একদিন গিয়ে হাজির হই পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে, যা সোমপুর বিহার নামেও পরিচিত। এই বিহারটির অবস্থান বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে। জয়পুরহাট জেলার জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে পাহাড়পুর গ্রামে যখন পৌছালাম তখন বেলা প্রায় এগারোটা। স্থানীয় রেস্টুরেন্ট থেকে সকালের নাশতা সেরে আমরা মূল বিহারটি পরিদর্শনে মনোনিবেশ করলাম।

পাহাড়পুর বা সোমপুর বৌদ্ধবিহারটি পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে কিংবা নবম শতকের প্রথম দিকে তৈরি করেন। এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত প্লাইস্টোসিন যুগের বরেন্দ্র নামক অনুষ্ঠ এলাকার অন্তর্ভূক্ত ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধবিহারটিতে গিয়ে দেখা গেল, এটির ভূমি-পরিকল্পনা চতুষ্কোনাকার। এটির চারদিক চওড়া সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা ছিল সীমানা দেয়াল বরাবর অভ্যন্তরভাগে সারিবদ্ধ ছোট ছোট কক্ষ ছিল। উত্তর দিকের বাহুতে ৪৫টি এবং অন্য তিন দিকের বাহুতে ৪৪টি করে কক্ষ-ছিল।

কক্ষগুলোর প্রতিটিতে দরজা আছে। কোনো কোনো কক্ষে কুলুঙ্গি এবং মেঝেতে দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত নানা দ্রব্য পাওয়া গিয়েছে। বিহারের উত্তর বাহুর মাঝ বরাবর রয়েছে প্রধান ফটক। এখান থেকে ভেতরের উন্মুক্ত চতুরে প্রবেশের জন্য যে সিঁড়ি ব্যবহৃত হতো তা আজও বিদ্যমান।

বিহারের অন্তর্বর্তী স্থানে গিয়ে দেখা গেল চত্বরের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। বিহারের কেন্দ্রে শূন্যগর্ভ কক্ষে একটি ইট বাঁধানো মেঝে অবিষ্কৃত হয়েছে। এই মেঝে কক্ষের বাইরে চারদিকের কক্ষ ও মণ্ডপ প্রায় একই সমতলে অবস্থিত। মন্দিরের শীর্ষদেশের কোনো নিদর্শন নেই বিধায় এটির ছাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব কোপ থেকে প্রায় ৪৯ মিটার দক্ষিণে আনুমানিক ৩-৫ মিটার প্রশস্ত স্নানঘাট দৃশ্যমান হয়। অনুমান করা হয় এই ঘাট নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

স্নানঘাট থেকে ১২ মিটার পশ্চিমে পূর্বমুখী একটি ইমারত পাওয়া গেছে যেটিকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় গয়েশ্বরী মন্দির। এতে একটি চতুস্কোপ হলঘর রয়েছে। পশ্চিমে উদগত একটি দেয়ালের বাইরের দিকে রয়েছে একটি বর্গাকার পূজার কক্ষ। মন্দিরের সামনের দিকে রয়েছে বিশাল চত্বর। মূল বিহার থেকে বেরিয়ে গেলাম পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরে। সেখানে দেখলাম- বেলেপাথরের চামুণ্ডা মূর্তি, লাল পাথরের শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, বেলেপাথরের কীর্তি মৃতি, গৌৱী মূর্তি, বিষ্ণু মূর্তি, মনসা মূর্তি, দুবলহাটির মহারানির তৈলচিত্র ইত্যাদি। ঘুরতে ঘুরতে দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে আসছে দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেলস্টেশনের দিকে রওনা হলাম অসীম অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।


আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় – চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ – প্রায়োগিক লেখা
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – বিবরণমূলক লেখা


আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ৩য় পরিচ্ছেদ প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।