৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ – বিবরণমূলক লেখা
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ: ‘আমার দেখা নয়াচীন’ একটি বিবরণমূলক রচনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে তাঁর চীন ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে চীনের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ১৯৫৪ সালে ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থখানি রচনা করেন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। পাঠ্যাংশটুকু এই বই থেকে সংকলিত।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ পাঠ পর্যালোচনা
মিউজিয়াম দেখার মাধ্যমে এই রচনায় লেখকের ভ্রমণ শুরু হয়। সেখানে তিনি অনেক নিদর্শন বস্তু দেখলেন কিন্তু তাঁর কাছে কোনো কিছুই উল্লেখযোগ্য মনে হয়নি। তবে অনেক পুরনো কালের নিদর্শন তিনি মিউজিয়ামে দেখেছেন। পরে তিনি লাইব্রেরি দেখতে যান।
লেখক শুনেছেন, সবচেয়ে বড়ো পাবলিক লাইব্রেরি সাংহাই শহরে অবস্থিত। সেখানে গিয়ে প্রমাণও পেলেন। খুবই বড়ো লাইব্রেরি এবং ব্যবস্থাও খুবই ভালো। পড়ার কক্ষগুলো ভাগ ভাগ করা। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্যও একটা কক্ষ আছে। তাদের পড়ার উপযোগী বইয়েরও অভাব নেই। লাইব্রেরির সাথে ছোটো একটা মাঠ আছে। মাঠে বসে পড়াশোনারও সুব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে লেখক অ্যাকজিবিশন দেখতে যান এবং তারপর স্থানীয় বাজার দেখে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
‘আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার বিবরণে বাংলাদেশের সাথে কিছু মিল ও অমিল দেখা যায়। মিল হলো, আমাদের দেশের মতোই চীনদেশের নদীতে নৌকা, লঞ চলে। নৌকা বাদাম দিয়ে চলে। অমিল হচ্ছে চীনের লোকেরা দেশি মাল বাজারে থাকলে বিদেশি মাল কেনে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভ্রমণকাহিনি থেকে চীন সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু জানা যায়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে চীনাদের গভীর দেশপ্রেম। এছাড়া খেলার মাঠে পড়ার ব্যবস্থা ও ছাত্র-শিক্ষকের সুন্দর সম্পর্কও মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ অনুশীলনীর কাজ
কাজ ০১: প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিবরণমূলক একটি লেখা লেখো।
আমাদের বিদ্যালয়
আমাদের বিদ্যালয়ের নাম জাজিরা হাট উচ্চ বিদ্যালয়। স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী জনগণের আপ্রাণ চেষ্টায় এ বিদ্যালয়টি ১৯৪২ সালে স্থাপিত হয়। আমাদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ খুব সুন্দর। এটি বড় রাস্তার খুব কাছেই অবস্থিত। এটির চারদিক বিভিন্ন ধরনের ফুল ও বড়ো বড়ো গাছে ঘেরা। বারান্দার সঙ্গে রয়েছে ফুলের বাগান। এর পরেই সবুজ ঘাসে ছাওয়া খেলার মাঠ। আমরা এখানে খেলাধুলা করি।
আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারি এবং বিদ্যালয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মান খুবই উন্নত। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় আটশত শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকসংখ্যা এগারোজন । তাঁরা সবাই উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে সুশৃঙ্খলার সঙ্গে পড়াশুনা করে থাকে।
শিক্ষকরা আমাদেরকে নিজেদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন৷ আমরাও শিক্ষকদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। প্রতিবছর এ বিদ্যালয় থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে খুব ভালো ফলাফল অর্জন করে। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে স্কুল বার্ষিকী প্রকাশিত হয়। এছাড়া আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিবছর বিতর্ক অনুষ্ঠান, বার্ষিক নাটক, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতি অনুষ্ঠান হয়।
কাজ ০২: মনে করো সম্প্রতি তুমি সিলেট ভ্রমণ করেছ। তোমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
অনেকদিন থেকেই সিলেটে ভ্রমণ করার ইচ্ছে ছিল আমার। বাবাকে কতবার বলেছি। কিন্তু তাঁর অফিসের কাজের চাপে সময় হয় না। তাই অপেক্ষা করছিলাম ছোটো মামা ইতালি থেকে আসার। ছোটো মামা দেশে এলেন। এসেই উঠলেন আমাদের বাসায়। আমি আর আপু মিলে মামাকে ধরলাম সিলেটে যাওয়ার জন্য। মামাও রাজি হলেন।
পরের দিন ভোরেই রওয়ানা হলাম সিলেটের উদ্দেশে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে উঠলাম সবাই। সবাই বলতে মোট চারজন আমরা। আমি, আপু, মামা আর আম্মু।
বিকেলের দিকে গিয়ে নামলাম সিলেট স্টেশনে। একটা অটোরিকশায় চড়ে দরগাগেট গিয়ে হোটেল নিলাম আমরা। পরদিন সকালে রওয়ানা দিলাম জাফলংয়ের উদ্দেশে। সারাদিন আমরা জাফলং ঘুরলাম। বিকেলে ফিরলাম হোটেলে। পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম সাদাপাথর। সকাল থেকেই অনেক লোকে লোকারণ্য সাদাপাথর। নৌকায় চড়ে গেলাম মূল স্পটে। মামা আর আমি পানিতে নেমে সাঁতার কাটলাম। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে চলে গেলাম রাতারগুল। নৌকায় চড়ে ঘুরে ঘুরে দেখলাম পানির উপর ভেসে থাকা গাছ আর গাছ। বিকেলটা সেখানে কাটিয়ে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে এলাম।
পরের দিন শুক্রবার। দরগাহ মসজিদে গিয়ে জুমার সালাত আদায় করলাম। বড়ো বড়ো গজার মাছ আর জালালি কবুতর দেখলাম সেখানে। বিকেলে শহরে পাশেই মালনীছড়া চা বাগানে গিয়ে ঘুরলাম। রাতে খাওয়া-দাওয়া করলাম সিলেটের বিখ্যাত পাঁচভাই রেস্টুরেন্টে। অবশেষে ফেরার পালা। সিলেটের চমৎকার সৌন্দর্য উপভোগ করে মনে মনে তৃপ্তি অনুভব করলাম। ভোরের ট্রেনে চড়ে আবারও ফিরে এলাম ব্যস্ততম শহর ঢাকায়।
আমার দেখে নয়াচীন সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর
ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?
উত্তর: লেখক এখানে ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন।
খ. বিবরণটি কোন সময়ের ও কোন দেশের?
উত্তর: বিবরণটি ১৯৫২ সালের ও চীন দেশের।
গ. এই বিবরণে বাংলাদেশের সাথে কী কী মিল-অমিল আছে?
উত্তর: এই বিবরণে বাংলাদেশের সাথে যে মিল রয়েছে তা হলো আমাদের দেশের মতোই চীন দেশের নদীতে নৌকা, লঞ্চ চলাচল করে এদিক ওদিক । নৌকা বাদাম দিয়ে চলে। আর অমিল হচ্ছে চীনারা দেশি মাল বাজারে থাকলে বিদেশি মাল দামে কম হলেও কেনে না।
ঘ. লেখাটিতে চীনের মানুষের দেশপ্রেমের কোন নমুনা পাওয়া যায়?
উত্তর: লেখাটিতে চীনের মানুষের দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। বিশেষ করে দেশি মাল থাকলে বিদেশি মাল কিনতে চায় না, যদি দেশি মালের দাম একটু বেশিও দিতে হয়। তাছাড়া সেখানে জিনিসপত্রের দাম আমাদের দেশের মতো হুট করে আকাশচুম্বী হতে পারে না।
ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?
উত্তর: এই লেখা থেকে চীন দেশ সম্পর্কে নতুন অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যেমন- চীনের লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, মিউজিয়াম, বাজার ব্যবস্থা ইত্যাদি। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে চীনাদের দেশপ্রেম। এছাড়া খেলার মাঠে পড়ার ব্যবস্থা ও ছাত্র-শিক্ষকের সুসম্পর্ক মনে দাগ কাটার মতো বিষয়।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ কুইজ প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি কার লেখা?
উত্তর: ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা।
প্রশ্ন ২। বঙ্গবন্ধু চীনের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে কত সালে চীন সফরে গিয়েছিলেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু চীনের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে চীন সফরে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৩। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি বঙ্গবন্ধু কত সালে লেখেন?
উত্তর: ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে লেখেন।
প্রশ্ন ৪। ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি কত সালে ছাপা হয়?
উত্তর: ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি ২০২০ সালে ছাপা হয়।
প্রশ্ন ৫। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি জাতির পিতা কে?
উত্তর: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রশ্ন ৬। বঙ্গবন্ধু চীনে গিয়ে অনেক পুরনো কালের স্মৃতি দেখলেন কোথায়?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু চীনে গিয়ে অনেক পুরনো কালের স্মৃতি দেখলেন মিউজিয়ামে।
প্রশ্ন ৭। সাংহাই শহরের সবচেয়ে বড়ো লাইব্রেরির সাথে কী আছে?
উত্তর: সাংহাই শহরের সবচেয়ে বড়ো লাইব্রেরির সাথে একটা ছোটো মাঠ আছে।
প্রশ্ন ৮। সাংহাইয়ে দেখা লাইব্রেরিকে লেখক কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: সাংহাইয়ে দেখা লাইব্রেরিকে লেখক কলকাতার ইমপেরিয়াল লাইব্রেরির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
প্রশ্ন ৯। লাইব্রেরি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি কী জানলেন?
উত্তর: লাইব্রেরি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি জানলেন যে লাইব্রেরিটা বহু পুরনো।
প্রশ্ন ১০। নতুন চীন সরকার কী কী জিনিসপত্র তৈরি করেছেন লেখক তা কোথায় দেখলেন?
উত্তর: নতুন চীন সরকার কী কী জিনিসপত্র তৈরি করেছেন লেখক তা অ্যাকজিবিশনে দেখলেন।
প্রশ্ন ১১। সাংহাই শহরের পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে চলা নৌকাগুলো কেমন?
উত্তর: সাংহাই শহরের পাশে বয়ে যাওয়া নদীতে চলা নৌকাগুলো আমাদের দেশের মতোই।
প্রশ্ন ১২। সাংহাই শহরের পাশে বয়ে চলা নদীতে নৌকা কী দিয়ে চলে?
উত্তর: সাংহাই শহরের পাশে বয়ে চলা নদীতে নৌকা বাদাম দিয়ে চলে।
প্রশ্ন ১৩। খেলার মাঠে কতজন ছেলেমেয়ে খেলা করছে?
উত্তর: খেলার মাঠে হাজার তিনেক ছেলেমেয়ে খেলা করছে।
প্রশ্ন ১৪। ‘চলুন যেখানে সবচেয়ে বড়ো বাজার, সেখানে নিয়ে চলুন।’— লেখক এ কথা কাকে বললেন?
উত্তর: চলুন যেখানে সবচেয়ে বড়ো বাজার, সেখানে নিয়ে চলুন- লেখক এ কথা দোভাষীকে বললেন।
প্রশ্ন ১৫। লেখক সাংহাইয়ের বড়ো বাজারে পৌঁছে কীসের দোকানে ঢুকলেন?
উত্তর: লেখক সাংহাইয়ের বড়ো বাজারে পৌঁছে একটা সাইকেলের দোকানে ঢুকলেন।
প্রশ্ন ১৬। চীনের তৈরি সাইকেল থেকে দাম কিছু কম কোন দেশের সাইকেলের?
উত্তর: চীনের তৈরি সাইকেল থেকে দাম কিছু কম চেকগ্লোভাকিয়ার তৈরি সাইকেলের।
প্রশ্ন ১৭। ‘আমাদের দেশের জনগণ বিদেশি মাল খুব কম কেনে।’- এ কথা কে বলেছে?
উত্তর: আমাদের দেশের জনগণ বিদেশি মাল খুব কম কেনে।’- এ কথা সাইকেলের দোকানদার বলেছে।
প্রশ্ন ১৮। চীনে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে না কেন?
উত্তর: চীনে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে না জনসাধারণ খুব সজাগ হয়ে উঠেছে বলে।
প্রশ্ন ১৯। চীনে কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের ধরতে পারলে সরকার কী করে?
উত্তর: চীনে কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের ধরতে পারলে সরকার কঠোর হস্তে দমন করে।
প্রশ্ন ২০। যিনি এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনান, তাকে কী বলে?
উত্তর: যিনি এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনান, তাকে দোভাষী বলে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ অ্যাসাইনমেন্ট
অ্যাসাইনমেন্ট-১ : মনে করো তুমি বৈশাখী মেলায় বেড়াতে গেছ। এবার বৈশাখী মেলার বিবরণ দিয়ে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: পৃথিবীর প্রায় সব জাতিই বছরের প্রথম দিনটিকে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়। প্রাচীনকাল থেকে বর্ষবরণের প্রথা প্রচলিত। পৃথিবীর এক এক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে নববর্ষ বা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার ইতিহাস জড়িয়ে আছে। প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী মিসরীয়, ফিনিশীয় ও ইরানিরা যেমন বহুকাল আগে থেকে তাদের নববর্ষ পালন করে আসছে তেমনই তাদেরও আগে গ্রিক ও রোমকরা যিশুখ্রিষ্টের জন্মের পঞ্চম শতাব্দী আগে থেকে এরূপ উৎসব পালন করত। প্রাচীন আরবীয়রা ‘ওকাজে’র মেলা, ইরানীয়রা ‘নওরোজ’ উৎসব ও প্রাচীন ভারতীয়রা ‘দোল’ পূর্ণিমার দিনে নববর্ষ উদ্যাপন করত।
পৃথিবীর নানা দেশের নানা জাতির মধ্যে নববর্ষ উদযাপনের সময়ের বিভিন্নতা ও রকমফের যতই থাকুক না কেন, এই বিশেষ দিনটি যে আনন্দের সেই বিষয়ে কোনো মতপার্থক্য নেই। পুরাতনকে ধুয়ে মুছে মানুষ যে চিরকাল নতুনের স্বপ্ন রচনা করে চলছে এই তাৎপর্যই নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই নববর্ষের আবাহন জানিয়ে বলেছেন-
“এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
আজকাল জমিদারও নেই, ‘পুণ্যাহ প্রথাও নেই। তবে ব্যবসায় বাণিজ্যের এক বছরের লেন-দেনের, লাভ-ক্ষতির হিসাব মিটিয়ে বছরের নতুন দিনে হালখাতা খোলার রীতি এখন নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কাজেই নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক জীবনেরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
পহেলা বৈশাখের দিনটিতে ভোর থেকেই মেলা বসে। এ মেলায় মাটির-কাঠের-লোহার নানাবিধ আকর্ষণীয় খেলনা-সরঞ্জাম-তৈজসপত্র বিক্রির জন্য আনা হয়। মুড়ি-মুড়কি, খইয়ের তৈরি নানা রকমের খাদ্যদ্রব্য, ফল-ফলাদি বৈশাখী মেলাকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। বৈশাখ হলো মধুমাসের সময়। আম, জাম, লিচুতে ভরে ওঠে বৈশাখের মেলা। দোলনা, পুতুলনাচ, লাঠি খেলা, কবির পড়াই ইত্যাদি নানা রং- বেরঙের উৎসবে ভরে ওঠে শহরের বৈশাখী মেলাগুলো।
গ্রামে-গঞ্জে অঞ্চলভেদে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। যেমন- চট্টগ্রাম শহরে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত ‘বলী খেলা’ (কুস্তি প্রতিযোগিতা)। আবদুল জব্বারের বলী খেলা’ নামে খ্যাত এই খেলা অত্যন্ত প্রসিদ্ধ। কক্সবাজার জেলায় বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিয়ো’ নামক অনুষ্ঠান। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পহেলা বৈশাখে বসে গম্ভীরা গানের আসর’। এছাড়া নববর্ষের প্রথম দিনটিতে পান্তাভাত খাওয়ার রীতিও বহুদিন আগে থেকে চালু রয়েছে। প্রতিটি দেশ ও জাতির এক-একটি আলাদা সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ও পরিচয় রয়েছে। আমরা বাংলাভাষী, আমাদেরও একটি আলাদা সাংস্কৃতিক পরিচয় আছে। এই পরিচয়ের কিছুটা প্রতিফলন আমরা দেখি নববর্ষ উদযাপনে।
অ্যাসাইনমেন্ট-২: ‘আমার দেখা নয়াচীন’ লেখায় শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নয়াচীন ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন। বলতে পারবে, বিবরণমূলক লেখা কাকে বলে? পাঠ পড়ে ভ্রমণের যেসব বিবরণ জেনেছ সেগুলো লেখো।
উত্তর: যে লেখায় কোনো দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান কিছুর লিখিত বর্ণনা দেওয়া হয়, সেই লেখাকে বিবরণমূলক লেখা বলে। আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার বর্ণনায় আমরা জেনেছি বঙ্গবন্ধুর মিউজিয়াম দর্শন, লাইব্রেরি দেখা, অ্যাকজিবিশন দেখা ও স্থানীয় বাজার দেখা সম্পর্কে। বাংলাদেশের মতো চীন দেশেও নৌকা চলে, লঞ্চ চলে। আমরা আরও জেনেছি, চীনের মানুষ খুবই দেশপ্রেমিক। তারা বিদেশি মাল কিনতে চায় না। বিদেশি মালের তুলনায় দেশি মালের দাম একটু বেশি হলেও তারা দেশি মাল কেনে। তাদের দেশে কেউ কালোবাজারি, দুর্নীতি করার সাহস পায় না সরকারের ভয়ে।
অ্যাসাইনমেন্ট-৩ : ছবি (চিত্র: মহাস্থানগড়) দেখে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি সম্পর্কে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো এবং লেখাটির একটি শিরোনাম দাও ।
মহাস্থানগড়
একটি দেশের পুরাকীর্তি সেই দেশের অতীতকালের সাক্ষ্য বহন করে। দেশটি কত উন্নত ছিল, তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি কতটা উৎকর্ষ লাভ করেছিল, এসব সম্পর্কে সেই দেশের পুরাকীর্তি যে সাক্ষ্য তুলে ধরে তার ওপর ভিত্তি করে সেই দেশের সভ্যতার মান নির্ণীত হয়। এমনই একটি পুরাকীর্তির পরিচয় বহন করে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়।
বগুড়া জেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর তীরে এবং ঢাকা-দিনাজপুর বিশ্বরোডের পাশে এই ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড় অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে এর গড় প্রায় বিশ-পঁচিশ হাত উঁচু হবে। প্রাচীন যুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান। বিভিন্ন সময় খনন করে এই গড় থেকে পাথর, মূর্তি, শিলা, ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন আমলের মুদ্রা পাওয়া গেছে। মহাস্থানগড় যে পুরাকীর্তির একটি অন্যতম নিদর্শনস্থল তা স্পষ্ট বোঝা যায়।
অ্যাসাইনমেন্ট-৪: শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী তোমাদের গ্রামের বিবরণ ১০০ – ১৫০ শব্দের মধ্যে লিখে দেখাও।
উত্তর: আমাদের গ্রাম
আমাদের গ্রামের নাম ‘আমঝুপি’। এ গ্রামটি মেহেরপুর জেলায় অবস্থিত। এই গ্রামে একটি স্কুল, একটি মাদরাসা এবং একটি হাসপাতাল আছে। গ্রামটির কোল ঘেঁষে কাজলা নদী বয়ে গেছে। এই নদীর ধারে বিস্তৃত সবুজের মাঝে গ্রামটি অপরূপ রূপে সজ্জিত। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল গাছের ছায়া ঘেরা এই গ্রামের মাঠে, প্রান্তরে ও সবুজের ছায়ায় আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। গ্রামের কৃষকরা আপন আনন্দে ফসল ফলায়।
এই গ্রামের শ্যামলিমায় আমার শৈশব কেটেছে। এই গ্রামের স্কুলেই আমার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বহু বিখ্যাত মানুষের জন্ম হয়েছে এই গ্রামে। এই গ্রামেই ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন ‘নীলকুঠি’র অবস্থান। এ কারণে এই গ্রামে অনেক পর্যটক আসেন। আমি আমার এই প্রিয় গ্রামটিকে খুবই ভালোবাসি। তাই সময় পেলেই আমি ছুটে যাই আমার এই প্রিয় গ্রাম আমঝুপিতে।
অ্যাসাইনমেন্ট-৫ : বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণসমূহ
সমগ্র বিশ্বই আজ জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে ভারাক্রান্ত। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যা আরও প্রকট। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্রতম দেশ। মাত্র ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট এদেশে প্রায় আঠারো কোটি লোক বাস করে। আয়তনের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই মারাত্মক। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে যে উৎপাদন হয়ে থাকে তা দিয়ে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় দ্রব্যমূল্য খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ভবিষ্যতের ভাবনা ভেবে অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে থাকে যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। সুতরাং জনসংখ্যার বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়ায় অন্যতম কারণ হলো কৃষক সময়মতো সার, বীজ, কীটনাশকের মতো প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পায় না। এছাড়া অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস করে থাকে। আর এ হ্রাসের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটতে বাধ্য। কৃষকরা অনেক সময় মৌসুমের পূর্বে স্থানীয় সুদখোর মহাজন, টাউট-বাটপাড়ের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয় এবং তা পরিশোধ করার সময় তার জমির ফসল উক্ত মহাজনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। এভাবে উৎপাদিত ফসল কুক্ষিগত হয়, যার ফলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটে।
মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব সেহেতু সমাজে সকলের সাথে তাল মিলিয়েই চলতে হয়। মানুষের এ তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা থেকেই জন্ম নেয় প্রতিযোগিতা। প্রতিবেশীর ঘরে যে জিনিস আছে তার সাথে টেক্কা দিয়ে তার চেয়ে বেশি দামে জিনিসপত্র ক্রয় করে বাহাদুরি করার মানসিকতা আমাদের সমাজে বিরল নয়। এজন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হন না অনেকে। এভাবে প্রতিযোগিতার ফলে জিনিসের দাম বৃদ্ধি ঘটে থাকে।
প্রতিকার:
১. জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করে চাহিদার পরিমাণ কমাতে হবে এবং জোগান বৃদ্ধি করতে হবে।
২. দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নির্ভর করে। সুতরাং রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে শিল্পের উন্নতি ঘটিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে আমাদের দেশে শিল্পের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি সাধিত হয়নি। পূর্বের সেই দু-চারটা শিল্পকারখানা ছাড়া আর তেমন কোনো কলকারখানা গড়ে ওঠেনি। তাই শিল্পোৎপাদনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। উপরন্তু শিল্পকারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে চাইলে তাই শিল্প স্থাপন করতে হবে।
৪. কালোবাজারি ও মজুতদাররা অধিক লাভের আশায় স্থানীয় দ্রব্যসমূহ কুক্ষিগত করে রাখে এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে থাকে। চোরাকারবারিরা দেশ থেকে কম দামে দ্রব্য কিনে রাতের আঁধারে অন্য দেশে পাচার করে থাকে। এ কারণে দেশে পণ্যসামগ্রী ঘাটতি দেখা দেয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। তাই কালোবাজারি ও চোরাকারবারি রোধ করতে হবে।
৫. কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণদান, ভালো বীজ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ করতে হবে।
৬. কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করে তার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। বন্ধ কলকারখানা চালু করে তার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
৭. কর ব্যবস্থা সহজীকরণ করতে হবে।
৮. সমাজ থেকে কালোবাজারি, সুদখোর, মজুতদারদের উৎখাত করতে হবে। এজন্য শুধু সরকারিভাবে না করে সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করা যেতে পারে।
৯. ঘুসদুর্নীতির মতো অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাথে সাথে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ।
১০. প্রতিটি দোকানে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা সরকারিভাবে প্রদান ও তা সংরক্ষণ এবং তদনুসারে বেচাকেনা করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ এক কথায় প্রকাশ
(ক) যে লাইব্রেরিতে গিয়ে সবাই বই পড়তে পারে – পাবলিক লাইব্রেরি ।
(খ) পড়ার ঘর – রিডিং রুম।
(গ) যে অতিরিক্ত লাভ করতে চায় – মুনাফাখোর।
(ঘ) উঁচু স্বরে উচ্চারিত সমবেত কণ্ঠের দাবি – স্লোগান।
(ঙ) উল্লেখ করার মতো – উল্লেখযোগ্য।
(চ) যিনি এক ভাষার কথা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে শোনান – দোভাষী।
(ছ) যেসব বস্তু জাদুঘরে দেখানো হয় – নিদর্শন বস্তু৷।
(জ) অবৈধ কেনা-বেচা – কালোবাজারি।
(ঝ) যা দামে কম – সম্ভা।
(ঞ) যে সতর্ক থাকে – সজাগ।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। আমার দেখা নয়াচীন রচনার লেখক সম্পর্কে তুমি কী জান?
উত্তর: আমার দেখা নয়াচীন রচনার লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক। তাঁর জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে তিনি সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । তাঁরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে তিনি আমাদের হৃদয়পটে অমর হয়ে আছেন।
প্রশ্ন ২। নয়াচীন সরকার কায়েম হওয়ার পর এরকম বহু ঘটনা হয়েছে। কোন ধরনের ঘটনা?
উত্তর: নয়াচীন সরকার কায়েম হওয়ার পর জনসাধারণ খুব সজাগ হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রে দাম ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বাড়াতে পারে না ৷ যদি কেউ অযৌক্তিকভাবে একটু দাম বেশি নেয়, তার আর উপায় নেই। বাপ ছেলেকে ধরিয়ে দিয়েছে, স্ত্রী স্বামীকে ধরিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু দোভাষীর মাধ্যমে নয়াচীনে এরকম বহু ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছেন।
প্রশ্ন ৩। নয়াচীন সরকারের কোন ভূমিকার কারণে দোকানদারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: নয়াচীন সরকার জনগণের স্বার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি রেখে সরকার কালোবাজারি ও মুনাফাখোরদের কঠোর হস্তে দমন করে। ফলে অবৈধ কেনা-বেচাকারী দোকানদারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
প্রশ্ন ৪। লেখক বাজারের কোন দোকানে ঢুকলেন? কী দেখলেন?
উত্তর: লেখক চীনদেশের সবচেয়ে বড়ো বাজারে ঘুরতে এলেন। সেখানে পৌঁছেই তিনি একটা সাইকেলের দোকানে ঢুকলেন। তিনি সেখানে দেখলেন চীনের তৈরি সাইকেল ছাড়াও চেকশ্লোভাকিয়ার তৈরি সাইকেল আছে। দামও সম্ভা। তিনি দোকানদারের কাছ থেকে জানতে পারলেন, চীনারা দাম বেশি হলেও দেশীয় পণ্য কেনে, বিদেশি মাল কেনে না।
প্রশ্ন ৫। আমার দেখা নয়াচীন’ রচনার শুরুতে একটি ছবি আঁকা আছে। ছবির কথা তোমার ভাষায় প্রকাশ করো।
উত্তর: ছবিতে বঙ্গবন্ধুর যুবক বয়সের একটি ছবি আঁকা আছে। জন্মসাল অনুযায়ী তখন তার বয়স ৩২ বছর। আঁকা ছবিটি যথার্থ। চীনের মহাপ্রাচীর ছবির বড় অংশজুড়ে অঙ্কনকৃত। এই প্রাচীর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। বহিঃশত্রুর হামলা থেকে নিজ দেশের প্রজাসাধারণকে নিরাপত্তা দিতেই তৎকালীন শাসকদের এই প্রাচীর নির্মাণ।
৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ বিবরণমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন ১। বিবরণমূলক লেখা কী? বিবরণমূলক রচনা লেখার কৌশল বর্ণনা করো। ছবি (বঙ্গবন্ধু) দেখে বিবরণমূলক একটি লেখা লেখো।
উত্তর: যে লেখায় দৃশ্যমান অথবা অদৃশ্যমান কোনোকিছুর বর্ণনা দেওয়া হয়, তাই হলো বিবরণমূলক লেখা। এ ধরনের লেখায় বিভিন্ন রূপকল্প, উপমা ইত্যাদি বর্ণনার জন্য ব্যবহার করা যায়, যা লেখার বর্ণনাকে আরও সমৃদ্ধ করে। লেখক ভালোভাবে অনুধাবন করে কোনো ঘটনা, বস্তু, দৃশ্য অথবা একজন মানুষের বর্ণনা দিতে পারেন। এমন লেখায় লেখকের দৃষ্টভঙ্গি হয় নিরপেক্ষ। অর্থাৎ বর্ণনামূলক রচনা যে বিষয় নিয়ে লেখা হচ্ছে, তা বাস্তবে যেমন ঠিক তেমনভাবে বর্ণনা লেখায় প্রকাশ পায়।
‘আমার দেখা নয়াচীন একটি বিবরণমূলক রচনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে তাঁর চীন ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন। তিনি ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে চীনের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ১৯৫৪ সালে আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থখানি রচনা করেন। বইটি প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। পাঠ্যাংশটুকু এই বই থেকে সংকলিত।
মিউজিয়াম দেখার মাধ্যমে এই রচনায় লেখকের ভ্রমণ শুরু হয়। সেখানে তিনি অনেক নিদর্শন বস্তু দেখলেন কিন্তু তাঁর কাছে কোনো কিছুই উল্লেখযোগ্য মনে হয়নি। তবে অনেক পুরনো কালের নিদর্শন তিনি মিউজিয়ামে দেখেছেন। পরে তিনি লাইব্রেরি দেখতে যান। লেখক শুনেছেন, সবচেয়ে বড়ো পাবলিক লাইব্রেরি সাংহাই শহরে অবস্থিত। সেখানে গিয়ে প্রমাণও পেলেন। খুবই বড়ো লাইব্রেরি এবং ব্যবস্থাও খুবই ভালো।
পড়ার কক্ষগুলো ভাগ ভাগ করা। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের পড়ার জন্যও একটা কক্ষ আছে। তাদের পড়ার উপযোগী বইয়েরও অভাব নেই। লাইব্রেরির সাথে ছোটো একটা মাঠ আছে। মাঠে বসে পড়াশোনারও সুব্যবস্থা রয়েছে। সেখান থেকে লেখক অ্যাকজিবিশন দেখতে যান এবং তারপর স্থানীয় বাজার দেখে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
প্রশ্ন ২। বিবরণমূলক লেখা প্রস্তুত করার নিয়ম কী?
উত্তর: কীভাবে লিখব বিবরণমূলক লেখা: বিবরণমূলক লেখার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। দেখার ভঙ্গি ও লেখার ধরন একেক জনের একেক রকম। এমনকি একই বিষয় নিয়ে দুজন লেখকের লেখাও একরকম হয় না। তবে বিবরণমূলক লেখার সাধারণ কিছু নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো।
১. প্রথমে লেখার বিষয় ঠিক করতে হয়।
২. বিষয়টি কোন কোন দিক নিয়ে লেখা যায়, তা ভাবতে হয়।
৩. লেখার সময়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে তার জবাব খুঁজতে হয়। এ ক্ষেত্রে কী, কেন, কীভাবে, কোথায় ইত্যাদি প্রশ্ন কাজে লাগতে পারে।
৪. লেখায় ধারাবাহিকতা থাকা দরকার।
৫. আবেগ-বর্জিত সহজ-সরল ভাষায় বিবরণমূলক লেখা তৈরি করতে হয়।
৬. বিষয়ের সাথে মিল রেখে লেখাটির একটি শিরোনাম দিতে হয়।
প্রশ্ন ৩। নদ-নদী বিষয়ে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা নদী অন্যতম। পদ্মা বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এটি হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা নাম ধারণ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নামে পরিচিতি পায়। উৎপত্তিস্থল থেকে ২২০০ কি.মি. দূরে গোয়ালন্দে যমুনার সঙ্গে পদ্মা মিলিত হয়েছে। মিলিত প্রবাহ আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মিলিত প্রবাহ মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
বাংলাদেশে নদীটির দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। এটির গড় প্রস্থ ১০ কিলোমিটার এবং নদীটি সর্পিলাকার। নদীটির গড় গভীরতা প্রায় এক হাজার ফুট। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ নদীর বিস্তর ভূমিকা রয়েছে। একসময় সারা দেশে নদীপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই নদী বিশেষ ভূমিকা পালন করত। বর্তমানে এই নদীর উপর একাধিক রেল ও সড়ক সেতু নির্মিত হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্মা সেতু। পদ্মা নদীর ইলিশের স্বাদ বিশ্বজোড়া। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পদ্মা নদীর নাম উচ্চারিত হতো।
প্রশ্ন ৪। নিচের ছবি (ইলিশ মাছ) দেখে বিবরণমূলক একটি লেখা লেখো।
উত্তর: বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ’। মাঝারি আকারের রুপালি রঙের এই মাছের দেহ বেশ চাপা ও পুরু। রূপালি আঁশে আবৃত এই মাছ সর্বোচ্চ ৬০ সে.মি. লম্বা হয়। আর ওজন হয় প্রায় আড়াই কেজি পর্যন্ত। স্ত্রী ইলিশ দ্রুত বাড়ে এবং আকারে বড়ো হয়। ইলিশ লোনা পানির মাছ। বাংলাদেশের উপকূলীয় নদীগুলোতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। এছাড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও কর্ণফুলীতেও ইলিশ বিচরণ করে।
বড়ো আকারের একটি মা ইলিশ বিশ লাখ পর্যন্ত ডিম দেয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মা ইলিশ বেশি ডিম দেয়। ইলিশ মূলত নীল-সবুজ শৈবাল, ডায়াটম, ডেমমিও, কপিপোড, রটিফার ইত্যাদি খেয়ে বড়ো হয় এবং বেঁচে থাকে । আমাদের সমুদ্র এলাকার মোহনা ও নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। মোট মাছ উৎপাদনের ১৬.৪ ভাগই ইলিশ। ইলিশ আহরণ ও বিপণনে দশ লাখ মানুষ নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী জাটকা ইলিশ ধরা উচিত নয়।
প্রশ্ন ৫। জাতীয় জাদুঘর নিয়ে বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: জাতীয় জাদুঘরে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পড়ে নান্দনিক নভেরা ভাস্কর্য। এর ডান দিকে জাদুঘরের অফিস এবং বাম দিকে রয়েছে অডিটোরিয়াম। দোতলায় রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল এক মানচিত্র। এছাড়া রয়েছে বাংলাদেশের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র। এটা থেকে একনজরে বাংলাদেশের কোথায় কী আছে তা বুঝে নেওয়া যায়। বাম দিকের গ্যালারিতে রয়েছে উপজাতি সম্প্রদায়ের জনজীবন, গাছপালা ও জীবজন্তুর পরিচিতি, নানা রকম শিলা ও খনিজদ্রব্য, সুন্দরবন, অতীতের মুদ্রা ও স্থাপত্য, হাতির দাঁতের পার্টি, মৌমাছিসহ মৌচাক, নানা গাছের বাকল, কাঠ, বীজ, পাতা ইত্যাদির নমুনা ও পরিচিতি।
তৃতীয় তলায় নানা রকমের অস্ত্রশস্ত্র, অলংকার, বাদ্যযন্ত্র, নকশিকাঁথা, পোশাক-পরিচ্ছদ, পুতুল, চীনামাটির নানা শিল্পকর্ম ও প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী নানা নিদর্শন রয়েছে বিশাল আকারের শিবলিঙ্গ, বোধিসত্ত্ব মূর্তি, আরবি ক্যালিওগ্রাফি, বিভিন্ন সময়ের ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন। এখানে রয়েছে ভাষাশহিদদের রক্তমাখা শার্ট, কোট, প্রথম শহিদ মিনারের পিলার, বধ্যভূমিতে পাওয়া মাথার খুলি ইত্যাদি। চতুর্থ তলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এমএজি ওসমানী, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ বিশ্বখ্যাত মনীষীদের প্রতিকৃতি।
প্রশ্ন ৬। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁকে নিয়ে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতার নাম ফকির আহমদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। শৈশবেই তিনি পিতৃহারা হন। ফলে তাঁকে আর্থিক অনটনে পড়তে হয়। তবে নজরুলের জীবন বিচিত্র কর্মবহুল, সদাচঞ্চল, অভিনব এবং প্রতিভাদীপ্ত। দশ বছর বয়সে তিনি গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করেন।
তারপর তিনি রাণীগঞ্জের নিকটবর্তী শিয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে আসানসোলে পালিয়ে যান এবং একটি রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে কাজ করতে থাকেন। আসানসোলের দারোগা নজরুলের চোখেমুখে বুদ্ধির দীপ্তি দেখে তাঁকে নিজ গ্রামে নিয়ে যান এবং কাজীর সিমলা গ্রামের হাই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখান থেকে নজরুল আবার ফিরে আসেন বর্ধমানে। সেখানকার শিয়ারশোল রাজ বিদ্যালয়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে ব্যক্তিগত কারণে শিক্ষা থেকে বিদায় নিয়ে প্রথম মহাযুদ্ধে যোগ দেন।
যুদ্ধ শেষে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। বিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে বিদ্রোহাত্মক কবিতা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব। কবির বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে সাড়া পড়ে যায়। কবির এই বিদ্রোহী চেতনাকে ধারণ করে রচিত হয়েছে অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, শিকল ভাঙার গান, প্রলয় শিখা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য রোগ ভোগের পর ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।
প্রশ্ন ৭। বর্ষণমুখর সন্ধ্যা শিরোনামে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: সকাল থেকেই অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। সারাদিন পার হয়ে গেল, বৃষ্টির কমতি নেই। মেঘের কালো ঝাঁপির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল সূর্য। মেঘের কালো ছায়ায়, বৃষ্টিতে, ঝড়ো হাওয়ায়, ঘন ঘন মেঘের গুরু গুরু ডাকে অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। গাছের ডালে পাতায় ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটার চলছে অবিরাম মাতামাতি। একটানা বৃষ্টি আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়।
দিনভর বৃষ্টি মানেই দুপুরে নিরামিষ আহার, পড়শির বাড়ি যেতে হাঁটু কাদাজল, পদে পদে পিছল পথের হুমকি, আর সবচেয়ে নিদারুণভাবে বিকেলে খেলার মাঠে ফুটবল খেলার ইতি৷ অতএব, সবকিছুর আশা ছেড়ে দিয়ে আগে থেকেই জানালার পাশে বসে ছিলাম। বৃষ্টির জন্য দৃষ্টি বেশি দূর প্রসারিত করা গেল না। চোখের ঠিক সামনেই টপটপ করে পানির বড় বড় ফোঁটা পড়ছে চাল গড়িয়ে। দূরে গাছগুলো ঝাপসা হয়ে আছে। সতেজ, সবুজ গাছগুলো কালচে, ধূসর দেখাচ্ছে; এমনকি পাশের বাড়িটিও দেখা যাচ্ছে না ভালো করে।
স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যন্ত। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ পাতার মাথাল মাথায় দিয়ে, কেউবা খালি মাথায় ছুটছে আপন গৃহে। পাখিরা ফিরছে তাদের নীড়ে। পাশের ডোবা থেকে ব্যাঙের প্রমত্ত ডাক শোনা যাচ্ছে। সে যেন এক কনসার্ট। দূরে দেখলাম একটা জোনাকির মতো জ্বলে উঠেছে। কিন্তু বৃষ্টির দিনে তো জোনাকি জ্বলে না। তবে? না, লন্ঠন হাতে কে যেন গোয়ালে গরু বাঁধছে। তখনও বৃষ্টি পড়ছে। গুরু গুরু মেঘের গর্জনের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। মনোমুগ্ধকর এমন পরিবেশকে কবির ভাষায় বলা যায়- ‘এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়।’
প্রশ্ন ৮। বৈশাখী মেলা’ শিরোনামে একটি বিবরণমূলক লেখা লেখো।
উত্তর: বৈশাখী মেলা’ নববর্ষের সর্বজনীন অনুষ্ঠানগুলোর অন্যতম। নববর্ষের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলাদেশে ছোটো-বড়ো অনেক মেলা শুরু হয়। স্থানীয় লোকেরাই এসব মেলার আয়োজন করে। মেলার স্থায়িত্বকাল সাধারণত এক থেকে সাত দিন। তবে কোথাও কোথাও এই মেলা সারা বৈশাখ মাস ধরে চলে। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলার নেকমদানে পহেলা বৈশাখে যে মেলা বসে, তা হচ্ছে উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ মেলা। সাধারণত এই মেলা এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়।
উত্তরবঙ্গের এখন বস্তু নেই যা এ মেলায় পাওয়া যায় না। নাচ, গান, নাগরদোলা প্রভৃতি মেলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বলে বিবেচিত। মেলার দিনগুলোতে ছেলে-বুড়ো সবার মধ্যেই বিরাজ করে সাজ সাজ রব। বাংলাদেশের মেলাগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় এদেশের হারিয়ে যাওয়া দ্রব্যসামগ্রী, যা বাঙালির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলে বিবেচিত। বৈশাখী মেলা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের মিলনমেলা। এ মেলা সবার প্রাণে এনে দেয় খুশির বন্যা, ধুয়ে মুছে দেয় সারা বছরের কর্মক্লান্তি ও মানসিক অবসাদ। আমরা নতুন করে বাঙালি ঐতিহ্য লালন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা লাভ করি।
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় – চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই
আরও দেখুন: ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ – প্রায়োগিক লেখা
আরও দেখুন: শিক্ষার্থীরা জেনে নাও, বিশ্বের কোন দেশে কত সালে মেট্রোরেল চালু হয়
আশাকরি “৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ৫ম অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ প্রশ্ন উত্তর” আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের কোন আপডেট মিস না করতে ফলো করতে পারেন আমাদের ফেসবুক পেজ, এবং লাইভ ক্লাস করতে সাবক্রাইব করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল।